চোখের ও নদীর জলে ভাসছে উপকূলের মানুষ

চোখের ও নদীর জলে ভাসছে উপকূলের মানুষ

বারবার বেড়িবাঁধ ভাঙছে, আর চোখের ও নদীর জলে ভাসছে উপকূলের মানুষ।  বরগুনা জেলা সহ বাংলাদেশের সকল উপকূলীয় এলাকার একটাই দাবি, ত্রাণ নয় টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। সারা বছর ধরে অব্যাহতভাবে ভেঙেই চলেছে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদী সংলগ্ন উপকূলের রক্ষাকবচ বেড়িবাঁধ। বছরের সব মৌসুমেই অব্যাহত রয়েছে ভাঙন।

দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা বরগুনা।বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা এই জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে বলেশ্বর, বিষখালী ও খরস্রোতা পায়রা নদী। ১৯৬০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জেলায় ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।

উপকূলের রক্ষাকবচ বর্তমানে এই বেড়িবাঁধের মধ্যে ২৯ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।  
প্রতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। হুমকির মুখে রয়েছে বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

সিডর পরবর্তী বসতবাড়ি হারিয়েছে কয়েকশ পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে বরগুনার নদী পাড়ের মানুষ অন্য কোনো উন্নয়ন নয়; কেবলই ভাঙন প্রতিরোধে নদী তীর রক্ষা বাঁধ চায়।

উপকূল ঘুরে দেখা যায়, বর্ষা এলেই এখানে আতঙ্ক বেড়ে যায়। এখন বর্ষা গেলেও আতঙ্ক কাটে না। সারা বছরের ভাঙনে এখানকার মানুষ দিশেহারা।  
নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর দুঃখ কষ্টের শেষ নেই। তারা সব হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অনেকের বসবাসের জায়গাটুকু নদীতে বিলীন হওয়ায় ওয়াপদার উপরে বসবাস করলেও চায়না কোম্পানির মাধ্যমে নতুন করে বেড়িবাঁধ মেরামত করায় তারাও নিঃস্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে ঝুপরি ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। কেউ কেউ অন্যের পরিত্যক্ত জমিতে মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন। তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ভাঙনের মুখে থাকা বেলায়েত জানান, জোয়ার এলেই পানি উঠে ঘরবাড়ি ডুবে যায়, নদীতে বিলীন হয়, ভাঙন ঠেকানো না গেলে তাদের পথে বসতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ভাঙন এতোই বেশি যে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নেওয়াও সুযোগ হচ্ছে না। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় বরগুনার অর্ধেক বিলীন হয়ে যাবে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম বলেন, জেলার ৬৫ স্থানের প্রায় ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ভেঙে যাওয়া জায়গাগুলো ইতোমধ্যেই মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।  

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরগুনায় বেশ কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।