ছাত্র সংগঠনগুলোতে অছাত্রদের দৌড়াত্ম

ছাত্র সংগঠনগুলোতে অছাত্রদের দৌড়াত্ম

দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের বরিশাল মহনগরের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলোতে যারা বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র তাদের নিয়ে গঠন করার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের কমিটিতে অছাত্র, সন্ত্রাসী, বিবাহিত ও মাদকাসক্তরা স্থান পেয়েছে। প্রকৃত ছাত্র এবং যারা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এমন অভিযোগ তুলে পলিটেকনিক এবং ব্রজমোহন কলেজ ছাত্রদলের কর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা ঘোষিত কমিটি বাতিল করে প্রকৃত ছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি করেছে। ছাত্র রাজনীতির বিকাশ ঘটাতে হলে অবশ্যই যারা ছাত্র এবং ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে সাধারণ ছাত্রদের সমস্যা তুলে ধরতে কাজ করবে তাদের নিয়েই কমিটি গঠন করা উচিত।

প্রকৃত ছাত্রদের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে না পারলে মূল রাজনীতি সমস্যায় পড়বে। সমস্যা পড়বে কেন বলছি, আমদের জাতীয় রাজনীতিতে এখন আর ছাত্র রাজনীতি প্রভাব ফেলতে পারছে না। এক সময় যার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল তারই মূল ধরার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে জাতীয় সংসদ আলোকিত করতো। ছাত্র রাজনীতির বিকাশে বাধার কারণে আজ সংসদের বেশিরভাগ সদস্য রাজনীতির বাইরের মানুষ প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছে। আগামীতে ছাত্র রাজনীতিকে ছাত্রদের হাতে দেওয়া না গেলে এই চিত্র আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই প্রকৃত ছাত্রদের হাতে ছাত্র রাজনীতির হাল ছেড়ে দিয়ে তাদের সামনে যাওয়ার পথে সহযোগী হতে হবে।

আজকের ছাত্র দলের কমিটিতে যেভাবে অছাত্র, সন্ত্রাসী, বিবাহিত ও মাদকাসক্তরা স্থান পেয়েছে তা অশনি সংকেত। এটা যে কেবল ছাত্রদলের চিত্র তা কিন্তু নয়, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে বোধকরি একই চিত্র বের হবে। এই ধারার পরিবর্তন ঘটাতে হলে সকল রাজনৈতিক দলকে অঙ্গীকার করে ছাত্র রাজনীতি বিকাশের পথ উন্মুক্ত করতে হবে। অছাত্র, সন্ত্রাসী, বিবাহিত ও মাদকাসক্তরা যাতে ছাত্র সংগঠনগুলোর দায়িত্ব পেতে না পারে সেব্যাপারে ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে ছাত্ররা যাতে টেন্ডার, অনিয়ম-দুর্নীতি, হত্যা-ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ছাত্র রাজনীতি যেন আদর্শিক জায়গায় থাকে সেব্যাপারে প্রবীণ রাজনীতিকদের দায়িত্ব নিতে হবে।

কেবল দলগুলো ইতিবাচক উদ্যোগ নিলেই প্রকৃত ছাত্ররা রাজনীতির সুযোগ পাবে। আমরা জানি, ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পেতে সর্বনি¤œ ২০০৫ সালে এসএসসি পাশ, অবিবাহিত এবং সব শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যায়ন পত্রসহ জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়ার বিধান ছিল। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে বরিশালে নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকের ক্ষেত্রে এই শর্ত পালন করা হয়নি। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারা এই নিয়মের ব্যত্যয় করেছে? তারা তো দলেরই মানুষ। ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার কারণে বরিশাল নগরের বেশিরভাগ শাখা কমিটিতে প্রকৃত ছাত্ররা স্থান পায়নি। এই উদ্বোগ ও হতাশা থেকে ছাত্র সমাজকে মুক্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে ছাত্ররা যাতে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয় সেব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। অছাত্রদের দৌড়াত্ম কমাতে এর কোন বিকল্প নেই।

দলীয় স্বনপ্রীতি এবং পছন্দ অপছন্দের কারণে যেন সত্যিকার রাজনীতির পথে থাকা ছাত্ররা হতাশ না হয়। তারা যেন রাজনীতি থেকে ছিটকে না পড়ে। আজকে যদি ছাত্র রাজনীতির ধারা সঠিক না থাকা, তাহলে আগামীর জাতীয় রাজনীতে এর প্রভাব পড়বেই। কেবল ছাত্রদল নয়, ছাত্রলীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো বিকশিত হোক ছাত্রদের পদচারণায়। যারা আগামীতে বাংলাদেশকে রাজনীতি দিয়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।