ছাত্রলীগ,অছাত্র,সন্ত্রাসী,বিবাহিত ও মাদকাসক্তদের নিয়ে বরিশালে ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠন

ছাত্রলীগ,অছাত্র,সন্ত্রাসী,বিবাহিত ও মাদকাসক্তদের নিয়ে বরিশালে ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠন

বরিশালে দীর্ঘ দেড়যুগ পর পুনগর্ঠন করা ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে ছাত্রলীগের মিছিলে অংশগ্রহণকারী, মাদকে সম্পৃক্ত, সন্ত্রাসী, বিবাহিত, অছাত্র, এক্স-রে অপারেটর এবং ঢাকায় চাকুরীজীবীকে পদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদের অনেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ গত ১ যুগ ধরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত ও কারাবরণকারী এবং ছাত্রত্ব আছে এমন কর্মীদের ছাত্রদলে উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। ত্যাগী নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের কমিটিতে মূল্যায়ন করা না হলে নতুন প্রজন্ম ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে আশংকা মহানগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের।

 গত ৭ জানুয়ারি বরিশাল পলিকেটনিক ইন্সটিটিউট ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এই কমিটির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল মিশন জেলা ছাত্রলীগের এক সহসভাপতির ঘনিষ্ট কর্মী। ওই নেতার সঙ্গে ছাত্রলীগের মিছিলেও ছবি রয়েছে মিশনের। এই কমিটির আহ্বায়ক ফয়সালুর রহমান ঈমনের ছাত্রত্ব এবং পলিটেকনিক ছাত্রদলে কোন সম্পর্ক নেই। পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ২১ সদস্যের ছাত্রদলের কমিটির ৯ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক শিফাত তালুকদার ক্যাম্পাসে ত্রাস সৃষ্টিকারী ছাত্রলীগ কর্মী বলে দাবি ছাত্রদল কর্মী জোবায়ের হোসেন জুয়েলের। 

একই দিন বিএম কলেজের অনুমোদনকৃত ছাত্রদলের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে মাজাহারুল ইসলাম বাবুকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে সজল তালুকদারকে। বাবুর ছাত্রত্ব নেই এবং ছাত্রদলের কর্মসূচিতেও বিগত দিনে দেখা যায়নি। আহ্বায়ক পদ পাবার জন্য ছাত্রদলের ফরমের তথ্যও পূরণ করেননি তিনি। অথচ স্থানীয় দুই ছাত্রদল নেতার অনুসারী হওয়ায় ঢাকার বেসরকারী চাকুরীজীবী বাবু পেয়েছেন বিএম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ। এই কমিটির ২১ সদস্যের ৫ জন ছাত্রদলের রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়।

 সরকারি বরিশাল কলেজে ছাত্রদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম টিপুর বিরুদ্ধে বিবাহিত এবং মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা অভিযোগ আছে। নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে স্থানীয়দের কাছে টিপু এক আতংকের নাম। 
একইভাবে নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে জিয়াদ হাওলাদাকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে এসএম আরাফাত রহমানকে। জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী জিয়াদের বয়স ১৫ বছর এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক পাশ। কমিটির সদস্য সচিব আরাফাত বিএম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ¯œাতকোত্তর অধ্যায়নরত। বয়সে এবং শিক্ষায় কম যোগ্যতা সম্পন্ন একজনের সঙ্গে রাজনীতি করতে আপত্তি আছে আরাফাতের। পদের সুষম বন্টন না হলে ছাত্রদলে নিস্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। 

নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবু তাহেরের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদকের ৪টি মামলা। ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহিন ইসলাম মারুফ দলে নিস্ক্রিয়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদলের আহ্বায়ক আশিক হাওলাদার রানার চেয়ে সদস্য সচিব তারেক রহমান স¤্রাট ৫ ব্যাচ সিনিয়র। ৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুজন খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। অথচ ওই ওয়ার্ডে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর শ্রেণির অনেকে ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশী ছিলেন। 

১১ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে আওয়ামী পরিবারের আজাদ সরদারকে (বাবা ওয়াহেদ সরকার পদ্মা ওয়েল কোম্পানীর শ্রমিক লীগ নেতা)। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদলের আহ্বায়ক হয়েছেন ঢাকায় চাকুরীজীবী অছাত্র তারিকুল ইসলাম সবুজকে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে অছাত্র নোমান হোসেনকে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক এবং অছাত্র নূরে আলমকে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক হয়েছেন বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক নগরীর সদর রোডের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক্স-রে অপারেটর পারভেজ হোসেন পাভেলকে।

ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পেতে সর্বনি¤œ ২০০৫ সালে এসএসসি পাশ, অবিবাহিত এবং সব শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যায়ন পত্রসহ জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকের ক্ষেত্রে এই শর্ত পালন করেননি। 

ছাত্রলীগ কর্মী, মাদকে সম্পৃক্ত, সন্ত্রাসী, অছাত্র ও বিবাহিতদের ছাত্রদলে পদ দেয়ার বিষয়ে মহানগর ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল করিম রনি বলেন, দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর পর মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং কলেজ ছাত্রদলের কমিটি পুনগর্ঠন হয়েছে। মহানগর এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমন্বয় করে কমিটি দিয়েছে। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে অনেকের রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে।