জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নিন

বরিশাল নগরের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। একটু বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানি উঠলে নিমজ্জিত হয় নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নগরের খাল ভরাট করে সরু ড্রেন নির্মাণ এবং দলখ দূষণের কবলে থাকা খালগুলো সংষ্কার ও সংরক্ষণে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ না থাকায় নাগরিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। বারবার আশ^াস আর প্রকল্প তৈরির কথা ছাড়া কিছই পায়নি সাধারণ মানুষ। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়ার গল্প শুনে ১৫ বছরেরও বেশি সময় পার করা হয়েছে। বরিশালের নাগরিকরা আর আশ^াস শুনতে চায় না, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান দেখতে চায়। নগর ভবন এব্যাপারে বাস্তব ও জনমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করুক সেটাই তাদের প্রত্যাশা। তাই সবার আগে জলাবদ্ধতা নিরসে উদ্যোগ নিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালে এবং বিভাগীয় শহরে উন্নীত হয় ১৯৯৩ সালে। ২০০০ সালে সিটি করপোরেশন রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকেই শহরের সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিধি বাড়ানোর নামে শুরু হয় খাল-পুকুর জলাশয় ভরাটের উৎসব। যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য হারাতে থাকে। শুরু হয় পরিবেশ দূষণ।
পৌরসভা থাকাকালীন সময়ে নগরের মধ্যে প্রবাহমান খালগুলো সংষ্কার ও সংরক্ষণ না করায় দুখল দূষণে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়ে। তখন নগরের বটতলা এলাকার খাল ভরাট করে নির্মাণ করা হয় মার্কেট। পরবর্তী সময় ধারাবাহিকভাবে সিটি মেয়ররা খাল ভরাটে কখনো উৎসাহ, কখনো নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে ২০১০ ও ২০১১ সালে। বড় বড় খাল ভরাট করে সরু নর্দমা নির্মাণ করায় নগরের পয়ঃনিষ্কাষণের চাপ সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষার সময় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে নগরের নবগ্রাম-বটতলা খাল, ভাটার খালসহ অনেকগুলো প্রশস্ত খাল ভরাট করে সরু ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ২০১১ সালে কীর্তনখোলা নদী থেকে নগরীতে প্রবাহিত ভাটার খালের সদর রোড পর্যন্ত নর্দমা নির্মাণ করা হয়। পরে সেই নর্দমার ওপর ঢালাই দিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়। ৩০-৩৫ ফুট চওয়াড়া খাল ভরাট হয়ে ২০ ফুটের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও এসময় থেকেই নগরের খাল সংষ্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগের কথা শোনানো হচ্ছিল। বাস্তবে খালগুলোর ওপর থাকা সেতু ভেঙে সরু কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কারণেও খালের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তী সময় কেবল মেয়র পরিবর্তন হয়েছে, কোন একটি খালেরও সংস্কার কিংবা সংষ্কার হয়নি। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে ফাঁকা বুলি শোনা গেছে সব মেয়রের মুখে। কেউ ১১০০ কোটি, কেউ ২৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা বলে বলে সময় পার করেছেন। নগরবাসী এখন আর বুলি শুনতে চায় না। তারা নগরের খালগুলো সংষ্কার, সংরক্ষণ এবং জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চায়। কোন আশ^াস না দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করুন। এই বর্ষায় যেন জলাবদ্ধতায় বড়তে না হয়, সেজন্য বাস্তবমূখি পদক্ষেপ নেবে নগর ভবন এমন প্রত্যাশা নগরবাসীর।