ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয় সোয়া ১ কোটি টাকার কাজের দরপত্র কিনতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয় সোয়া ১ কোটি টাকার কাজের দরপত্র কিনতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সোয়া ১ কোটি টাকার কাজের দরপত্র কিনতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সাধারণ ঠিকাদারা নিময় অনুযায়ী দরপত্র কিনতে গেলে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মুঠোফোনে এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলিয়ে তাদের বিদায় করেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ওষুধ এবং মেডিকেল সরঞ্জামাদী সরবরাহের (এমএসআর) প্রায় সোয়া কোটি টাকার ৬ গ্রুপ কাজের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলেও দরপত্র (সিডিউল) না দেয়ার ওই অভিযোগ উঠেছে।

আগ্রহী ঠিকাদারারা সরকারি চালানের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দরপত্র আনতে গেলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষক মো. জহির উদ্দিন তাতে বাধা দেন।  সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত বরিশালের এক ঠিকাদারকে ওই ৬ গ্রুপ কাজ পাইয়ে দিতে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা দরপত্রে অংশগ্রহনেচ্ছু ঠিকাদারদের দরপত্র না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে বিদায় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে আগ্রহী ঠিকাদরদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা উন্মুক্ত দরপত্র আগ্রহী সবার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধিনে সদর হাসপাতাল ও কীর্তিপাশা ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য ওষুধ, সার্জক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, লিলেন সামগ্রী, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেমিক্যাল রি এজেন্ট ও আসবাবপত্র (কিচেন সামগ্রী) সরবরাহের লক্ষ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ‘আমাদের নতুন সময়’ নামে একটি পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী। 

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গতকাল বুধবার সকালে সরকারি চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে বরিশালের এক ঠিকাদার ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. জহিরউদ্দিনের কাছে যায়। 

ঠিকাদার প্রতিনিধি আব্দুল হালিম অভিযোগ করেন, ব্যাংক চালানের কপি দিয়ে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কাছে দরপত্র চাইলে তিনি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বারণ আছে বলে জানান। তাৎক্ষণিক জহিরউদ্দিন ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ফোন করে তাকে ফোনে ধরিয়ে দেন। ওই নেতা তাকে বাসায় ডেকে নেন। এ সময় এসএমআর সরবরাহের কাজটি বরিশালের এক ঠিকাদারের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তাকে দরপত্র না নিতে অনুরোধ করেন। 
পরে আব্দুল হালিম সিভিল সার্জনের কাছে গেলে তিনি আগ্রহী ঠিকাদারকে দরপত্র দেয়ার জন্য প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ক্যাশিয়ার নেই অজুহাতে তারপরও ঠিকাদার প্রতিনিধিকে দরপত্র দেননি প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা। এর আগে আগ্রহী আরও কয়েকজন ঠিকাদার এমএসআর সরবরাহ কাজের দরপত্র কিনতে গেলে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তাদেরও একইভাবে ওই আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে বিদায় দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা দরপত্র বিক্রি করতে তাকে নিষেধ করেছেন। তার কিছু করার নেই। 

ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, আগ্রহী সব যোগ্য ঠিকাদার দরপত্র কিনতে পারবেন। দরপত্র না দেয়ার কোন বিধান নেই। তিনি বিষয়টি দেখবেন। 

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, উন্মুক্ত দরপত্র মানে সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে আগে থেকে ঠিকাদার নির্ধারন করে রাখার কোন বিধান এবং সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।