তরিঘরি করে ৩২ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ শের-ই বাংলা মেডিকেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার পরও তরিঘরি করে ৩২ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সহকারী জজ আদালতে মামলা এবং হাইকোর্টের রিটের পরও তরিঘরি করে তৃতীয় শ্রেণির ওই কর্মচারীদের নিয়োগ সম্পন্নের অভিযোগ পরিচালক পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।
তবে এই নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। নিয়োগ পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি এবং পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ থাকলেও নির্লিপ্তভাবে নিয়োগ সম্পন্ন করেছে নিয়োগ কমিটি।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২টি ক্যাটাগরিতে ৩য় শ্রেণির ৩২ জন কর্মচারী নিয়োগের জন্য গত বছর ২৩ ডিসেম্বর একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৭০০ আবেদনকারীর অংশগ্রহণে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৪৪৪ জনকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফলাফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারীর সন্তান ও স্বজন জাল-জালিয়াতি করে এবং পরীক্ষার হলে কর্তৃপক্ষ তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নকল সরবরাহ করে বলে অভিযোগ করেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা। এই অভিযোগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের পরিচালকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বরিশাল সদর সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন দুই পরীক্ষার্থী পাবনার জাবরকোলের সিরাজুল ইসলাম ও জুয়েনা নীতি। এরপরও নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রাখায় তারা ওই নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি একেএম শহীদুল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একক বেঞ্চ কেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হবে না জানতে চেয়ে রুল জারীর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে উচ্চাদালত ৬ সপ্তাহের জন্য এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ দেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্বপ্রনোদিত হয়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন বলে জানান রিটকারীর আইনজীবী মো. শামীম খালেদ।
এই সুযোগে গত শনিবার একদিনের মধ্যে তরিঘরি করে পছন্দের সকল প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে নিয়োগ কমিটি। মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে একদিনের মধ্যে ১২ ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ন ৩২ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। যা ওইদিনই নোটিশ আকারে জারী করা হয়।
চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকায় দেখা যায়, নিয়োগ পাওয়া ৩২জনের মধ্যে হাসপাতাল নিয়োগ কমিটির পছন্দের (হাসপাতাল কর্মচারীদের স্বজন) বেশ কয়েকজন প্রার্থী রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তারা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা করে উৎকোচ নিয়েছে। এ কারণে আদালতে মামলা চলমান থাকার পরও একদিনের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মো. শামীম খালেদ বলেন, উচ্চাদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলেও মামলা এখনও বিচারাধীন। সে ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিলো আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখা। আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার পরও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ কমিটির সভাপতি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ কমিটির সুপারিশক্রমে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আপাতত ২৫জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ অপর ৭জনের যোগ্যতায় ঘাটতিসহ নানা ত্রুটি রয়েছে। এই নিয়োগে নিয়মের কোন ব্যাত্যয় হয়নি। নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোন ধরণের উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।