ত্রাণের নামে এই নাটক বন্ধ হোক

ত্রাণের নামে এই নাটক বন্ধ হোক

বরিশালে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলও ত্রাণ দেওয়া শুরু করেছে। কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই ত্রাণ সরবরাহ মনে করে সাধারণ মানুষ। কিন্তু কোন কোন ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক দল ত্রাণের নামে লোক দেখানো কাজ শুরু করেছে। কেউ এক দুই প্যাকেট খাবার দিয়ে সেই ছবি তুলে প্রচার চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ প্যাকেটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে ভেতরে শুভংকরের ফাঁকি দিচ্ছেন। ত্রাণের নামে এই নাটক বন্ধ হওয়া উচিত।

দীর্ঘদিন পর জাতীয়তাবাদি দল বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মহীন ও অসহায় মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার নগরের দুই ওয়ার্ডের ৬০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেন বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। কিন্তু  খাদ্য সহায়তা প্রদানের সময় স্বাস্থ্যবিধি কিংবা শারীরিক দূরত্ব বিষয়টি মানা হয়নি। জনসমাগম করে খাদ্য সাহায়তা দেওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে খাদ্য সহায়তার ব্যাগ দেখে মনে হয়েছে অনেকটা লোক দেখানো কাজে নেমেছে বিএনপি।

বিএনপির দেওয়া ওই খাদ্য সহায়তা নগন্য বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যসহায়তা পাওয়া অনেকে। তারা এমনও মন্তব্য করেছেন বাজারের ৫ টাকার ব্যাগে ৫ কেজি চাল, কোন কোন স্থানে সঙ্গে এক কেজি আলু, আধা কেজি ডাল দিয়ে করুণা করা হচ্ছে। গত সোমবার বিড়ি শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে কেবল ৫ কেজি চাল। অথচ ইচ্ছে করলেই বিএনপি ওই অভিযোগ বন্ধ করতে পারতেন।

বরিশালে করোনায় কর্মহীন মানুষ গত মার্চ মাস থেকে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। তাদের পাশে মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে সরকারিভাবে সহযোগিতা পৌঁছানো শুরু হয়। এর পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ও খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে পৌঁছানো হয়েছে। খাদ্য সহায়তা দিয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনীও। নগরের লঞ্চঘাটে গণমাধ্যমকর্মীরা দুই মাসের বেশি সময় ধরে অসহায় মানুষদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করছে। একই সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং এসএসসি ৯৩ ব্যাচও ভিন্নভাবে দুপুরে রান্না করা খাবার সরবরাহ করছে। জেলা প্রশাসন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং সিটি করপোরেশন কয়েক দফা মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিতে কাজ করছেন।

প্রায় দেড় মাস পর বিএনপি ত্রাণ নিয়ে মাঠে নেমেছে। গত কয়েক দিন ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার ওই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বেশি সংখ্যক মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিতে গিয়ে ত্রাণ পাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়লেও ত্রাণের পরিমাণ নগন্য হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ হয়তো বলবেন সহযোগিতা তো সহযোগিতাই সেখানে পরিমাণে কি আসে যায়? এটা সত্য। তবে যদি কোন ব্যক্তি সহযাগিতা হতো তাহলে এমন প্রশ্ন নাও উঠতে পারতো। কিন্তু দেশের প্রধন বিরোধী দল এবং কয়েকবার রস্ট্রক্ষমতায় থাকা একটি দলের নেতা, সাবেক মেয়র, সাবেক সাংসদ, হুইপসহ নানা পদ অলংকৃত করা ব্যক্তির কাছে মানুষ এমনটা আশা করে না। দেশের মোট নাগরিকের প্রায় অর্ধেক মানুষ তাদরে এখনো সমর্থন করে। তারা মনে করে মজিবর রহমান সরোয়ার চাইলে মর্যাদা রক্ষা করে ত্রাণ দিতে পারেন।

মহানগর বিএনপি জানায়, বরিশাল মানগরসহ সদর উপজেলায় মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষ থেকে ৬০ হাজার পরিবারের কাছে ওই সহযোগিতা দেওয়া হবে। দেরিতে হলেও বিএপির এই সহযোগিতায় আশ্বস্ত হয়েছিল নগরবাসী। কিন্তু ত্রাণ দেওয়ার নমুনা দেখে মানুষ আর আশ^স্ত থাকতে পারছে না। বিএনপি নেতার এত পরিমাণ ত্রাণ দেওয়ার ঘোষণা শুনে মনে হয়েছে কোন প্রতিযোগিতার জন্য মাঠে নেমেছে তারা। তবে এটা অসম পাল্লা মনে হচ্ছে। এই পাল্লা না দিয়ে যদি মানসম্মত ত্রাণ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারতো তাহলে মানুষ বেশি উপকৃত হতো।

গত মার্চ সাসের শেষে দিকে করোনায় কর্মহীন মানুষের পাশে সহযোগী হয় অনেকে। তার ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন খাদ্য সহায়তা নিয়ে অব্যাহতভাবে মাছে আছে। সিটি করপোরেশনের দাবি ইতিমধ্যে ৬০ হাজার পরিবারের মাঝে প্রথম বারের ত্রাণের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। তারা দ্বিতীয় ধাপে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করেছে। ওই খাদ্য সহায়তার মধ্যে ১০ কেজি চাল, সঙ্গে ডাল, আলু, তেল, সাবান ছিল। সেই সহায়তা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কিছু অভিযোগ থাকলেও খাদ্য সহায়তার পরিমাণ নিয়ে কোন অভিযোগ ওঠেনি। অথচ বিএনপির মতো একটি দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ায়েরর ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠলো কেন? এটা কি কেবল অনেক মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার তকমা নেওয়ার মহড়ার কারণে? অনেকেই মনে করেন, বিএনপির এই স্ট্রা-বাজির চেয়ে মানুষের পাশে সহযোগী হয়ে থাকা উচিত।

বিএনপির বাইরে কোন কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা দুই একটি পিপিই, শেল্ড কিংবা এক ব্যাগ খাবার দিয়ে ছবি তুলে দেখিয়ে চলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা পত্রিকায় প্রকাশ করার মতো ঘটনাও ঘটছে। এইধরণের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নাটক বন্ধ হওয়া দরকার। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। গত প্রায় ৮ সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহে ১০৩ পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে চলেছেন জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ওই পরিবারগুলোর চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রি সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা কোন প্রচার করছেন না। এরকম অনেক মানুষ আছেন যারা কেবল মানুষের পাশে সহযোগী হয়ে আছেন। তাদের সাদুবাদ জানায় সবাই। আর যারা ত্রাণের নামে গণজমায়েত, ছবি তুলে প্রচারণা চালায় তাদের এই সহযোগিতা কতটা সহযোগী হবে বোঝা যাচ্ছে না।