দক্ষ যুব সমৃদ্ধ দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ

দক্ষ যুব সমৃদ্ধ দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ


আজ জাতীয় যুব দিবস-২০২১।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও সারা দেশে য়থাযোগ্য মর্যদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘দক্ষ যুব সমৃদ্ধ দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জতি হয়েছে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয় জীবনের সকল ক্রান্তিকালে যুব সমাজ গৌরবজ্জল ও তেজোদীপ্ত ভূমিকা পালন করেছে। যুবদের মেধা, মনন সৃজনশীলতা, প্রতিভা বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অন্দোলনের গতি পথকে শানিত করেছে।

যুব সমাজকে আত্মনির্ভরশীল, দায়িত্ববান, সুসংগঠিত, প্রতিশ্রুতিশীল, উদপাদনমুখী কর্মপ্রত্যয়ী দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে উন্নয়নের মুল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এ স্বাধীনাতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এ স্বাধীনাতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা বোনো কাপড় না পায়। এ স্বাধীনাতা আমার পূর্ণ  হবে না যদি আমার এদেশের মানুষ যারা যুব শ্রেণি আছে তারা চাকুরী বা কাজ না পায়।’ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম প্রধান শক্তি যুব সমাজ। এ বিশাল যুব শক্তিকে সঠিকভাবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে উন্নীত করার মাধ্যমেই আত্মনির্ভরশীল সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল ‘তারুন্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি দেশের যুবদের সুসংগঠিত সুশৃঙ্খল এবং উদপাদনমুখী জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্য অর্জনে সরকার বদ্ধপরিকর। যুব উন্নয়নের অধিকার হচ্ছে যুবদের মানসস্ম্ত শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান শারিরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য, সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও নাগরিক ক্ষমতায়ন এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ যুব। আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষের চেয়ে কম বয়সীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কর্মক্ষম লোক অধিক। যুব বয়সের নারী পুরুষের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের সঙ্গে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুফল অর্জন ওতোপ্রতভাবে জড়িত। কিন্তু অতীব দু:খের বিষয় হলেও সত্য যে, আমাদের যুবদের একটা বিরাট অংশ অদক্ষ। যার ফলে তারা দেশে বিদেশে মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না। আমাদের দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে তারা নার্স, আয়া, গৃহকমী, ঝাড়ুদার, নির্মাণ শ্রমিক এর কাজ করে। পাশাপাশি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গিয়ে তারা  ডাক্তার ও প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করে। ফলে তাদের আয় ও মর্যদা উভয়ই বেশি।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী না হওয়ার কারণে আমাদের দেশের একজন যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেও কর্মসংস্থানের কোন সুযোগ পায় না। এক সমিক্ষায় জানা যায়, দেশে প্রতিবছর সরকারি বেসরকারী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে  ২৬ লক্ষ যুব/যুব নরী কাজের সন্ধানে শ্রম বাজারে আসে। দেশে বিদেশ মিলে কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে ১৬ লখ। বাকী ১০ লক্ষ বেকার থাকে। এভাবে প্রতিবছর বেকারত্বের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে সমাজে সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, ইভটিজিং ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ বেড়েই চলেছে। যদি বৃহৎ এই যুব সমাজকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সমাজ থেকে  সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাদাবাজী, ইভটিজিং-এর মত সামাজিক অপরাধগুলো কমে যাবে। এই বিশাল অদক্ষ জনশক্তিকে কর্মমুখী করে উদপাদনক্ষম জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সরকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। স্বল্পমেয়াদী (অপ্রাতিষ্ঠানিক) এবং দীর্ঘ মেয়াদী (প্রাতিষ্ঠানিক) প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপশি তাদের স্বল্প সার্ভিস চার্জে যুব ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপ:
জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সম্বলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে। বেকারত্বের হার ২০২৩ সালে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বেকারমুক্ত শিল্পনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯০টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি জোনের ভূমি, কলকারখানা, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো নির্মাণের  কাজ চলছে পুরোদমে। ১২টি ইকোনমিক জোনে দেশি-বিদেশি অন্তত ২১টি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে উৎপাদনে রয়েছে। সেসব কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এসব জোনে অন্তত ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশ পুরোপুরি বেকারমুক্ত হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)। জোনগুলোয় গড়ে ওঠা শিল্প বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ২০৪১ সালের আগেই সারা দেশে শিল্পবিপ্লব ঘটবে বলে মনে করে বেজা। এসব জোনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বেজার ধারণা, শুধু মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরেই অন্তত ৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

নতুন সহস্রাব্দে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান শ্রমশক্তি বলে মনে করা হচ্ছে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে। বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতিহারে আগামী ৫ বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।

আমাদের সম্ভাবনাময় খাত গুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য খাত গুলো নি¤œরূপ

আই.টি খাত: কর্মসংস্থানের বড় খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে আই.টি খাত। দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রপ্তানি ২০১৮ সালে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বেসিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের বাজারও বড় হচ্ছে। দেশের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই আবার দেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা দখল করেছেন। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকেই দেশি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের টার্গেট বা লক্ষ্য ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন রপ্তানি আয় করা। এ ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রপ্তানি করা। সফটওয়্যার রপ্তানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়াসহ এখাতের উন্নয়নের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে ২০১৮ সালে সফটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে।

আমাদের সফটওয়্যার ১৮০টি দেশে রপ্তানি হয়। আমাদের সফটওয়্যার আয়ারল্যান্ডের পুলিশ ব্যবহার করে, সিকিউরিটির জন্য আমাদের সফটওয়্যার আছে। যা মোবাইল অপারেটররা ব্যবহার করছে। এটার গতি অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি। দিন দিন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে। এ কারণে ২০৩০ সালে আইটি সেক্টরে ২০ লাখ দক্ষ জনবল প্রয়োজন হবে। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। আর উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। একটি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালিত হবে তখনই, যখন পরিচালনার ভার থাকবে দক্ষ কর্মীর হাতে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দক্ষতা, প্রেষণা, প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আউটসোর্সিং/ফ্রিল্যানন্সিং: বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর অন্যতম  ফ্রিল্যানন্সিং। ঘরে বসে আয় করার সহজ রাস্তা। ইতোমধ্যে অনেক বেকার যুবক এই সেক্টরকে তাদের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজের একটি বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতের উদ্যোক্তারা ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছেন। এ খাত থেকেও অর্থ আয়ের নতুন নতুন উপায় নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।

এন্টারপ্রেনার ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান দুনিয়ায় ফ্রিল্যান্সিংকেও পুরোপুরি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনেকেই। এখানে প্রকল্প ভিত্তিতে একের পর এক কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো জায়গায় বসে বিশ্বের যেকোনো কাজ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারের কাজের ওপর ছড়ি ঘোরানোর কেউ থাকে না বলে প্রতি বছর এখাতে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বৈশ্বিক ধারা (ট্রেন্ড) প্রকাশ করেছে ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ লেনদেনের জনপ্রিয় অনলাইন মাধ্যম পেওনিয়ার। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গিগ অর্থনীতির সূচক প্রকাশ করেছে। যেখানে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২৭ ভাগ। সে কারণে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে। ২৯ ভাগ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় বাংলাদেশের ঠিক ওপরে আছে ভারত। বাংলাদেশের পর ২০ ভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রাশিয়া ও ১৯ ভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অবস্থান করছে সার্বিয়া।। এ ক্ষেত্রে অনেকেই সফল হয়েছেন। যেহেতু এ খাতটি বড় হচ্ছে তাই এখাতে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

পর্যাটন খাত: পর্যটন খাতে তরুণদের কর্মসংস্থান দেশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মসংস্থান বাড়াতে পর্যটন খাতের বিকাশ অত্যন্ত জরুরী। একজন পর্যটকের আগমনে বিভিন্নভাবে ১১ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পর্যটক আগমন মানেই দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হওয়া। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্র বাড়ে। অজানাকে জানার এবং অদেখাকে দেখার প্রবৃত্তি মানুষের চিরন্তন, এই ধারণা থেকেই পর্যটনের উদ্ভব। তাই পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবেই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, পর্যটকদের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরা। পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের জাতীয় আয়ের ৬২ ভাগ আসে পর্যটন খাত থেকে। মালদ্বীপের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে ট্যুরিজম খাত থেকে। এশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া পর্যটন শিল্পে অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের এরকম সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, সমুদ্রসৈকত কুয়াকাট, নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়, কুমিল্লার ময়নামতিসহ হাজারো প্রাচীন ঐতিহ্যে উজ্জ্বল দেশ বাংলাদেশ। পর্যটন খাতের  তরুণদের কর্মসংস্থান সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।

বাংলাদেশকে একসময় বটমলেস বাসকেট (তলা বিহীন ঝুড়ি) বলা হতো। বাংলাদেশ আজ উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশরে মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী ভারত এবং পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ১৬৫টি দেশের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৫ সূচক নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯ তম। বিগত ৪ বছর আগে ১৭ সালে ছিল ১২০তম, ৬০ দশমিক শূণ্য ৭ সূচকে ভারতের অস্থান ১২০তম, ৫৭ দশমিক ৭২ সূচকে পাকিস্তানের  অস্থান ১২৯তম, ৫৩ দশমিক ৯৩ সূচকে আফগানিস্থানের অস্থান ১৩৭তম।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (জি.আই.এইচ) ও বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী ভারত এবং পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ১১৬টি দেশের মধ্যে ১৯ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬ তম, ২৭ দশমিক ৫ স্কোর এ ভারতের অস্থান ১০১তম, ২৪ দশমিক ৭ স্কোর এ পাকিস্তানের অস্থান ৯২তম।   
একাবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রূপকল্প-২০২১, জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-২০৩০’, ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১’, এবং ‘ডেল্টা প্লান-২১০০’ বাস্তবায়নে জনসংখ্যার সবচাইতে শক্তিশালী উদ্যমী এবং সৃজনশীল অংশ যুব সমাজকে প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মসংস্থানমুখী দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করনে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ। আর সে কাজটি করার গুরু দায়িত্ব যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপর। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে সাভার শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনন্সিসটিটিউট, সাভার কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, দেশের ৬৪টি জেলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জেলা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (আবাসিক), দেশের সকল উপজেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে ৮৪টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ প্রদান করছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ যুব/যুব নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর এক যুব সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আমাদের যুব সমাজ নিজেরা শুধু চাকরির পেছনে ছুটে বেড়াবে না । চাকরী দেবে। সেই ধরষেণর ব্যবস্থা তারা যেন করতে পারে সেটাই আমরা চাই। সেই ধরণের মানসিকতা থাকতে হবে। উদ্যোক্তা হতে হবে নিজেদেরেকেই।’ সে অনুযায়ী দেশের সম্ভবনাময় যুবদের প্রতিভা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষেত্রে যুবদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও টেকসই উন্নয়নে আত্মকর্মী ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে জাতিগঠনমূলক কর্মকান্ডে নিয়েজিত করার নিরালস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা /কর্মচারীগণ।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যক্রম তৃণমুল পর্যায় পর্যন্ত আরো বিস্তৃত করে দেশ এবং বিদেশে যুবদের জন্য অধিক হারে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ঠি, যুবদের ক্রমাগত শহরমুখী প্রবনতা রোধকল্পে স্বীয় অবস্থান অক্ষুন্ন রেখে বিভিন্ন উদপাদনমুখি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারি, তবেই না অর্জতি হবে আমাদের স্বাধীনাতার কাঙ্খিত লক্ষ্য।
আমরা যদি প্রতিটি বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি তবে অচিরেই বাংলাদেশ মালেশিয়া বা সিঙ্গাপুরের কাতারে সামিল হবে। তবেই না বাস্তবায়ন হবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।

লেখক: মো. আব্দুল কাদের, উপ পরিচালক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বরিশাল।