দুইদিনে গণপরিবহনের চালচিত্র, করোনার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা

গত ৩১ মে ঢাকা এবং বরিশাল নদী বন্দরে মানুষের ঢল নামে। ৬৬ দিন পর লঞ্চ চলাচল শুরু হলে মানুষ ছুটতে শুরু করে যার যার গন্তব্যে। একই অবস্থা ছিল ১ জুন এবং ২ জুন। গাদাগাদি করে ফিরেছে যাত্রীরা। এর সঙ্গে ১ জুন বাস সার্ভিস চালু হলেও টার্মিনালগুলোতে মানুষের ভীড় ছিল লক্ষ্যণীয়। দুই দিনের গণপরিবহনে এমন চিত্র আমাদের নতুন করে শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এইভাবে শারীরিক দূরত্ব না মেনে চলাচল করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভানা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে করোনার ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।
সারা দেশে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ২৯জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩৭ ব্যক্তি। বরিশালে গত ১ জুন থেকে দুই জুন রাত পর্যন্ত নতুন করে ৫৪ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যা আগের দিনগুলোর চেয়ে অনেক বেড়েছে। দেশের আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের কাছাকাছি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আক্রান্তের হার জ্যামিতিক সমীরণও ছাড়িয়ে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি এবং শারীরিক দূরত্ব নিশ্চত করা সম্ভব না হলে আমাদের নতুন করে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। তাই এখনই শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে।
গত ৩১ মে সারা দেশের সঙ্গে লঞ্চ যোগাযোগ শুরু হলে মানুষের ভীড় বেড়ে যায়। ১ জুন থেকে বাস চালু হওয়ায় সেখানের চিত্রও একই। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কিছু ব্যবস্থা থাকলেও কোন ধরণের শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে না লঞ্চ যাত্রায়। প্রায় একই চিত্র বাসেও। বরিশাল নদী বন্দর এবং ঢাকা নদী বন্দরের গত দুই দিনের চিত্র দেখে নতুন করে ভয় ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একজনের সঙ্গে অন্যজন এতটা কাছাকাছি থেকে যাতায়াত করছে যা ভয় থেকে ভয়ংকর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকেই করোনা নতুনমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন যেভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে আগামী দিনগুলোর চিত্র কি হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। করোনায় সতর্ক ও সচেতন থাকতে না পারলে দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে।
এটা সত্য অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং কর্মহীন মানুষের দুর্ভোগ কমাতে গিয়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্যই দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকা মানুষদের কর্মের সুযোগ করে দেওয়া অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কর্মহীনদের কাজের সুযোগ করতে গিয়ে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করা কতটা যৌক্তিক হলো জানি না। সরকার প্রজ্ঞাপন জারী করে ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অতিরিক্ত ভাড়ার দায় বহন করতে হচ্ছে কিন্তু কর্মহীন মানুষদের। দেড়গুণের বেশি ভাড়া বৃদ্ধি হওয়ায় আরো কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে কর্মহীন মানুষদের।
গণপরিবহনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী পরিবহণের কথা চিন্তা করেই সরকার ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাস্তবে গণপরিবহনে শারীরিক দূরত্ব অনেক ক্ষেত্রেই বজায় থাকছে না। প্রতি দুইজন যাত্রীর পরিবর্তে একজন যাত্রী পরিবহন করার কথা। কিন্তু এই নিয়ম মানছে না মালিকরা। বিশেষ করে লঞ্চগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের মতোই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে ভাড়া বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেন মালিক পক্ষ। একদিকে অতিরিক্ত ভাড়াও গুনছেন যাত্রীরা অন্যদিকে করোনার ঝুঁকিও বহন করতে হচ্ছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে কি করোনার দুর্যোগ কমবে বলে মনে হয়? নদীবন্দরগুলোর পন্টুনে মানুষের ভীড় কমাতে উদ্যোগ নিলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। গাদাগাদি করে লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। প্রতিদিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারছে না। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে করোনার ঝুঁকি আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে ফেলবে।
আমরা বলতে চাই, অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে যেন আমরা কোনভাবে হোঁচট না খাই। সেই জন্য অবশ্যই গণপরিবহনে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে কোনভাবেই যেন অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একই সঙ্গে গণপরিবহনগুলোতে অবশ্যই জীবানুনাশক স্প্রে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ষড়ঞ্জাম যেন পর্যাপ্ত থাকে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।