দেশ এখন ক্যাসিনো আর পাপিয়ার বাগান

দেশ এখন ক্যাসিনো আর পাপিয়ার বাগান

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, এক সময় ফুলের বাগান করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এখন সেই দেশ ক্যাসিনো আর পাপিয়ার বাগান। এর জন্য দায়ি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার। লুটেরা ও ধনিকদের জন্য শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদ চলছে। এখান থেকে মুক্তির জন্য তৃতীয় বিকল্প ধারা সৃষ্টি করতে হবে।

মঙ্গলবার (১০ মার্চ)  বিকেলে বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে অনুষ্ঠিত দেশ রক্ষা অভিযাত্রা সমাবেশে এসব কথা বলেন।

গণতন্ত্র হীনতা রুখো, দুঃশাসন হটাতে ব্যবস্থা বদলাও, বিকল্প গড়ো, জান বাঁচাও- দেশ বাঁচাও, রাজনীতি বাঁচাও এসব শ্লোগান নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশ ধ্বংসের কাছাকাছি এসেছে। অর্ধেক ধ্বংস করেছে বিএনপি-জামাত ও এক এগারোর সরকার। বাকি অর্ধেক ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। সরকার আসে সরকার যায়, ব্যবস্থার বদর হয় না। ১৯৭১ সালের পর দেশের ২২ পরিবার যত টাকা লুটপাট করে পাচার করতো। গত ১০ বছরে তার চেয়ে দশগুণ বেশি অর্থ পাচার হয়েছে। একদিকে ৯৯ ভাগ বঞ্চিত মানুষ, অন্যদিকে ১ ভাগ লুটেরা ধনিক। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

বিধবা ভাতা, বয়ষ্ক ভাতার নেতিবাচক দিক তুলে ধরে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, খয়রাত নিয়ে জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করেছি সবাই স্ববলম্বি হবে। কেবল ১ ভাগের উন্নয়ন নয়, সবার উন্নয়ন হলে এই ভিক্ষা কিংবা খয়রাত দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। এই ধারর পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মুলসমান মৌলবাদ জামায়ত আছে। তেমনি ভারতে হিন্দু মৌলবাদ বিজেপি আছে। বিজেপি সরকার হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। যে বিজেপি ভারতের নাগরিকদের বন্ধু হতে পারেনি। সে বাংলাদেশের রসাধার মানুষের বন্ধু হতে পারে না। তাই নরেন্দ্রো মদির বিপক্ষে অবস্থান নিতে হবে। ভারতে ২০ কোটি মুসলমান, যারা কোনদিন কৃষ্ণ ভক্ত হবেন না। আবার বাংলাদেশে আড়াই কোটি মানুষ হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের যারা মুসলিম হবেনা। তাই ধর্ম নিয়ে এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ওপর নির্ভরর নয়, তারা ক্যাডার নির্ভর, আমলা ও লুটেরা নির্ভর হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ভোটাধিকারে ভয় পায়, গণতন্ত্রে ভয় পায়। আমরা জামায়াত, বিএনপি, জাতীয় পার্টি দেখেছি। এখন শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের লড়াইয়ের মাধ্যমে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নও চাই, গণতন্ত্রও চাই। গণতন্ত্রের সঙ্গে উন্নয়নের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু বর্তমানে যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটা ৯৯ ভাগ মানুষকে বঞ্চিত করে ১ ভাগ লুটেরাদের উন্নয়ন। টাকা পাচারের উন্নয়ন, বেকার বানোর উন্নয়ন আমরা চাই না। যে উন্নয়ন নদী-নালা, খাল-বিল দখল হয়ে যায়, সেই উন্নয়ন আমরা চাই না। পরিবেশ বান্ধব, দরিদ্র বান্ধব উন্নয়ন চাই। আমরা আমরঅ ও লুটেরা গণতন্ত্র চাই না। দেশ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বিসর্জন হয়েছে। দেশ উল্টো দিকে পরিচলিত হচ্ছে। দেশ রক্ষা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। তাই দেশ রক্ষায় অভিযাত্রা সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই আহ্বানে সবাই সাড়া দিলে দেশ মুক্তির পথে হাঁটতে পারবে।

বাংলদেশেরর কমিউনিস্ট পর্টি বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সম্বয়ক মোতাবেল মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মাহবুবুল আলম, আহসান হাবিব লাভলু, লুনা নূর, বরিশাল জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান, পটুয়াখালী জেলার সভাপতি সমীর কুমার কর্মকার, ভোলা জেলার মোনায়েম চৌধুরী, করগুনা জেলার সভাপতি আবদুল হালিম, পিরোজপুর জেলার সভাপতি দীলিপ কুমার পাইক, ঝালকাঠি জেলার প্রশান্ত দাস হরি প্রমূখ।

সমাবেশ শেষে মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে একটি লাল পতাকা মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।