দোষীদের শাস্তি দিয়ে, শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে হবে

কেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে রাজপথে নামতে হলো? করা তাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে? কেন শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে? এসব প্রশ্নের উত্তর চাওয়া এবং পাওয়ার অধিকার শিক্ষার্থীদের আছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে তার দায় নিতেই হবে। সেটা কেবল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষর একার নয়। এ দায় আমাদের সবার। অধিকার আদায়ের কথা বলতে গিয়ে শ্রমিকদের হাতে শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত হবে সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এটাকে কেউ কেউ অনাকাঙ্খিত ঘটনা বলে এড়িয়ে যেতে চান। বাস্তবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বাসের ভাড়া নিয়ে কথা কাটাটির জের ধরে শিক্ষার্থীদের ছুকিাঘাত করবে এটা কোন সভ্যতার মধ্যে পড়েনা। এটা জঘন্যতম অপরাধ এবং এক ধরণের অসভ্যতা। আবার ছুকিাঘাতের প্রতিবাদ করায় রাতে ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের মেস বাড়িতে বাড়িতে হামলা ও মারধর করার মত ঘটনা আরো বর্বরতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কোনভাবেই এই জঘন্য ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতেই হবে। দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস্ত করতেই হবে।
গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের মেসে মেসে হামলার যে নজির সৃষ্টি হয়েছে তা বিভিষিকাময়। এমন কোন ঘটনা শিক্ষার্থীরা ঘটানয়নি যার খেসারত দিতে তাদের ওপর গভীর রাতে হামলা করে হয়রানি করা হবে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ক্ষমতার দম্ভে অমানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এমন সংবাদ উঠে এসেছে এই হামলার নেতৃত্বে আছেন শ্রমিকলীগের এক নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই শিক্ষার্থীদের ওপর ওই নির্মম হামলার ঘটনা ঘটেছে। যদিও তিনি তার পক্ষে ছাফাই গেয়েছেন। কিন্তু তাঁর সেই ছাফাই অনেকাংশেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে গ্রেপ্তার করার পর ওই নেতার রূপ উন্মোচিত হয়ে পড়ে। দুই শ্রমিক গ্রেপ্তারের পর ওই শ্রমিক সংগঠনের নেতার নেতৃত্বে বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে শ্রমিকলীগ নেতা যে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তাতে এটা প্রমাণিত যে তারাই রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই হামলার দায় কোনভাবে এড়াতে পারেন না। তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করা। যারা ওই রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া। তা না হলে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারবে না। যেকোন মূল্যে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতেই হবে।
আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত করার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনাকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার দুরভিসন্ধি যাদের তাদের এখনই থামিয়ে দেওয়া দরকার। এজন্য রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন। বিশ^ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠক করে একটি সুন্দর সমাধানের পথে এগোনো দরকার। তা না হলে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন কেবল বরিশালের মধ্যে রাখা কঠিন হবে। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি দ্রুত বাস্তয়ন করে তাদের শ্রেণি কক্ষে ফেরানো হোক। কোনভাবেই যেন এই আন্দোলন সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে হবে।