বরিশালে ১১ মাস রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের ফ্লাইট বন্ধ

বরিশালে ১১ মাস রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের ফ্লাইট বন্ধ

বরিশাল বিমান বন্দর সচল আছে দুটি বেসরকারি বিমানের যাত্রী পরিবহনের মধ্য দিয়ে। করোনা দুর্যোগের মধ্যেও যাত্রী বোঝাই হয়ে এই দুই বিমান সেবা দিচ্ছে। অথচ যাত্রী না থাকা ও লোকসানের অজুহাত তুলে গত ১১ মাস ধরে ঢাকা-বরিশাল আকাশ পথে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট (যাত্রী পারিবহন) বন্ধ রয়েছে। নতুন করে বরিশাল থেকে বিমান কার্যালয়টি গুটিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

এর অংশ হিসেবে গত ৩ সপ্তাহে বরিশালে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২১জন কর্মকর্তা-কর্মচারির মধ্যে ১১জনকে ঢাকায় বদলী করে নেয়া হয়েছে। অথচ কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও ব্যবসা সফলভাবে এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বেসরকারী বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ার। 

যদিও বরিশাল থেকে বিমানের অফিস গুটিয়ে নেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই এবং ঢাকা-বরিশাল রুটে আবারও বিমানের ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা। 

কোভিড পরিস্থিতির আগে ঢাকা-বরিশাল আকাশ পথে প্রতি সপ্তাহে ৫দিন ফ্লাইট পরিচালনা করতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কানাডিয়ান ড্যাস-৮ মডেলের ৭৪ আসন বিশিষ্ট এই বিমান অধিকতর নিরাপদ ও আরামদায়ক এবং যাত্রী ভাড়া কম (৩ হাজার ২০০) হওয়ায় আকাশ পথের যাত্রীদের মধ্যেও বিমানের ফ্লাইট নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। কোভিড পরিস্থিতির আগে ঢাকা-বরিশাল রুটে বিমানের ফ্লাইট চলতো সপ্তাহে ৫দিন। কিন্তু তাদের সময়সূচি নিত্যদিন বিলম্বিত হওয়ায় এবং টিকেট কাটার আধুনিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রায়শই বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের অনেক আসন খালি থাকতো।

অথচ এই রুটে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রতিদিন দুই ট্রিপ (২ বার আসা এবং ২বার যাওয়া) এবং নভোএয়ারের এক ট্রিপ (একবার আসা এবং একবার যাওয়া) ছিলো হাউজফুল অর্থাৎ ব্যবসা সফল। 

কোভিড পরিস্থিতি শুরুর প্রাক্কালে বরিশালে সবশেষ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এসেছিলো গত বছরের ২৩ মার্চ। ২৪ মার্চ থেকে বরিশাল-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানের বরিশাল অফিসের বিক্রয় কর্মকর্তা রেজাউর রহমান।

কোভিড পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত বছরের ১২ জুলাই থেকে নভোএয়ারের সিঙ্গেল ফ্লাইট এবং ১৬ জুলাই থেকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ডবল ফ্লাইট চালু হয় ঢাকা-বরিশাল রুটে। সপ্তাহে ৭ দিন হাউজফুল ফ্লাইট পরিচালনা করছে বেসরকারি এই দুই বিমান পরিবহন সংস্থা। ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা যাত্রী ভাড়া হলেও অধিক চাপের কারণে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে এই রুটে চলাচল করছেন যাত্রীরা।

অথচ কথিত লোকসান আর কোভিড পরিস্থিতির অজুহাতে ঢাকা-বরিশাল রুটে ১১ মাস ধরে বন্ধ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের সার্ভিস। এই রুটে আবারও ফ্লাইট চালুর কোন দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় বরিশাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অত্যাধুনিক অফিস গুটিয়ে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। রাজশাহীর বিমান অফিসও গুটিয়ে নেয়ার পায়তারা চলছে বলে জানিয়েছে বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্র। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বরিশালে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সে কর্মরত ২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ফাইন্যান্স ম্যানেজার হুমায়ুন কবির সিকদার এবং ট্রাফিক অফিসার শহীদুল আলমসহ ১১জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গত ৩ সপ্তাহে ঢাকায় বদলী করা হয়েছে। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বরিশাল অফিস সূত্র জানায়, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সবগুলো অফিসের চেয়ে বিমানের বরিশাল অফিস আধুনিক এবং সুসজ্জিত। এখন থেকে আন্তদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইটের টিকেট কাটার ব্যবস্থা থাকলে বিমানের যাত্রী আরও বাড়ত। কিন্তু বেসরকারী বিমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আঁতাতের কারণে সিট খালি থাকার পরও যাত্রীদের টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ ছিলো। এছাড়া প্রতিনিয়ত বিমানের ফ্লাইট সময়সূচি বিলম্বিত হওয়ায় যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারতেন না। বাধ্য হয়ে কোভিডের আগে বেসরকারী এয়ারলাইন্সে নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুন-তিনগুন ভাড়া দিয়ে বরিশাল রুটের ফ্লাইটে চলাফেরা করতেন যাত্রীরা। কোভিড পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার পরও যাত্রীদের অত্যধিক চাপ থাকায় অনেক সময় দ্বিগুন-তিনগুন ভাড়া দিয়ে এই রুটে বেসরকারী ফ্লাইটে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বরিশাল জেলা ব্যবস্থাপক সঞ্জয় কুমার কুন্ড বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে ঢাকা-বরিশাল রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবারও এই রুটে ফ্লাইট চালুর কোন সময় সূচি এখনও তিনি পাননি। তবে এই রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বরিশাল থেকে বিমানের অফিস গুটিয়ে নেয়ার কোন নির্দেশনাও পাননি তারা। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বরিশাল থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঢাকায় বদলী করা হয়েছে বলে তিনি জানান।