ধূমপানের ছাড়তে চান ৬০ শতাংশ মানুষ

তামাক ছাড়ার প্রতিজ্ঞা (কমিট টু কুইট) এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। দিনটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনা মহামারির মধ্যে ৬০ শতাংশ ধূমপায়ী তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। ছাড়তে চাচ্ছে ধূমপানের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর অভ্যাস। যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই তামাকবিরোধী কোন প্রচারণা নেই। মাত্র ২৩টি দেশে এই তামাকবিরোধী প্রচারণা চলমান রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ কোয়ালিটি তামাক ব্যবহার করতে পারে। বেশিরভাগ ধূমপায়ী খুবই নিম্নমানের তামাক গ্রহণ করছে। যা মানবদেহের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রস আধানম ঘেব্রেয়েসুস বলেন, করোনা মহামারিতে ৫০ শতাংশ বেশি মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন ধূমপায়ীরা। সুতরাং করোনায় মৃত্যুঝুঁকি কমাতে ধূমপান এখনই ছেড়ে দেয়া উচিত। তামাকবিরোধী এক প্রচারণায় এমনটা জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসটি চালু করে। তারপর থেকে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। ডব্লিউএইচও দ্বারা পরিচালিত অন্য আটটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযানের মধ্যে একটি হলো বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস।
সারাবিশ্বে প্রায় ১১০ কোটি মানুষ ধূমপান করছে। যেকোনো সময়ের চেয়ে এ সংখ্যা এখন সর্বোচ্চ। তরুণদের তামাক গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে ২০১৯ সালে সারাবিশ্বে মারা গেছেন অন্তত ৮০ লাখ লোক। এর মধ্যে ১৭ লাখ হৃদরোগে, ১৬ লাখ ফুসফুসজনিত রোগে, ১৩ লাখ ট্র্যাচিয়াল, ব্রঙ্কাস ও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ও ১০ লাখ স্ট্রোকে মারা গেছেন। দ্য ল্যানসেট জার্নালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় এসব তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে মোট ধূমপায়ীর দুই-তৃতীয়াংশের বসবাস ১০টি দেশে। এর মধ্যে শীর্ষে চীন। দেশটিতে মোট ধূমপায়ীর সংখ্যা ৩৪ কোটি ১০ লাখ। সে হিসাবে চীনে মোট জনসংখ্যার প্রতি তিনজনের একজন ধূমপায়ী। বাকি ৯ টি দেশের একটি হচ্ছে ভারত। দেশটিতে ধূমপায়ীর সংখ্যা ১২ কোটির বেশি। এর পরের অবস্থানে যথাক্রমে রয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বাংলাদেশ, জাপান, তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন।
ল্যানসেট জার্নালের গবেষণায় দেখা গেছে, অধূমপায়ীদের চেয়ে ধূমপায়ীদের গড় আয়ু ১০ বছর কম হয়। গবেষকরা বলেন, ধূমপান কমাতে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার প্রয়োজন। ইন্টারনেটভিত্তিক মিডিয়া ও গণমাধ্যমে সিগারেট ও ই-সিগারেটের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও স্পন্সরশিপের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।
এদিকে তামাক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশেও প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে হতদরিদ্রদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। অন্যদিকে উচ্চবিত্তদের মধ্যে এ হার ২৪ শতাংশ।