ধ্বংস দখল আর রক্ত মৃত্যুর এক অনন্য দলিল-ফিলিস্তিন

‘সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী, ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন।’ এটাই স্বাভাবিক আর প্রত্যাশিত। তবু যেন সত্য নয়, কখনো কোথাও কোথাও। কখনো প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়ম বাস্তবতার কাছে নির্মল সত্য হয়েও, নিষ্ঠুর নির্মম কঠিন হয়ে যায়। এই বিশ্বচরাচরে আমরা যারা আছি, সর্ব স্রোষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে। তারা সবাই যেমন করেই হোক পায়ের নীচের মাটি, মাথার উপরে নিজস্ব আকাশ আর নির্মল মুক্ত বায়ুর প্রত্যাশী। কিন্তু ব্যাপক বৈষম্য-বৈশিষ্ট্যের অপপ্রয়োগ তাকে যেন মেনে নিতে চাইছেই না। কোথাও শক্তি অর্থের, অস্ত্রের, কোথাও বা রাজনীতির। আর এই অপশক্তিগুলো ক্রমশ নির্মাণ করে চলেছে বিশ্বব্যাপী অদৃশ্যমান এক অনুভবের ভয়ংকর অন্ধকার।
এই অপশক্তিসমূহের কক্ষ পথেই ঘুরছে পৃথিবী এবং এই পৃথিবীর সর্ববিষয়ক নিয়ন্ত্রণ রেখা। এরা প্রত্যক্ষে শান্তি ব্যবসায়ী। পরোক্ষে তাদের উৎপাদিত সকল কর্ম চরম অশান্তির। কোথাও সম্প্রসারিত করতে হবে আধিপাত্য? তবে হাত বাড়াও সেখানকার সকল অশান্তি নির্মূলের কথা বলে। যে অশান্তির বীজ একদিন নিজ হাতে বুনে দিয়েছিল তারাই। বিশ্ব অর্থশক্তির কূটকর্মের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন কোন না কোন দেশ, মানুষ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং ধর্ম। যখন যেখানে যাকে থামানো দরকার তারা মুহূর্তে স্তব্ধ করে দিচ্ছে তাকেই।
চলমান পৃথিবীতে শান্তির প্রয়োজনে শক্তির প্রয়োগ হয়তো প্রাসঙ্গিক। তবে সে শক্তি যদি অনবরত তার প্রয়োগিক যৌক্তিকতা হারায়, তখন তা তার অপ্রাসঙ্গিকতার ঘেরাটোপেই একদিন আটকে যায়। হয়তো সময় লাগে, কিন্তু হয়। কারণ পৃথিবীর ইতিহাস বলে ব্যাপক বৈষম্য, যুক্তিহীন দমন, নির্মম অত্যাচার, অবিশ্বাস্য রক্তস্রোত এবং নির্র্বিচার হত্যাযজ্ঞ, যে কোন শক্তির দম্ভ চূর্ণ করে দেওয়ারই পূর্বরূপ। মনে হতে পারে আমি প্রকৃতির দৈব রুদ্ররূপের প্রত্যাশার কথা বলছি। যার আবির্ভাবে অশুভ শক্তির দম্ভ চূর্ণ হয়। তেমনটা হলে ক্ষতি নেই, তবে আমি বলছি মানুষের বোধের উন্মেষ হওয়ার কথা।
আজ বিশ্বের সকল সম্প্রদায়ের সামনে স্বচ্ছ স্ফটিকের ন্যায় যা স্পষ্ট, সেটা হলো প্যালেস্টাইনের মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিনে ইহুদী ইসরাইলীদের বর্বরোচিত অমানবিক সন্ত্রাসী গণহত্যা। যে বিষয়টি অদ্ভুতভাবে অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করছে, মেনে নিচ্ছে দেশে দেশে ভদ্র মানবিক মুল্যবোধে টলটলয়মান, গণতন্ত্রের প্রবক্তা দেশ, রাষ্ট্রের মানুষ নামধারী বর্ণবাদী অবয়বগুলো।
আজ একটি দেশ, যার কোনই নিজস্বতা নেই। সম্পূর্ণরূপে যারা অন্যের ভূমি দখল করে টিকিয়ে রেখেছে নিজেদের অস্তিত্ব, তার পক্ষে বিশ^বিবেক! অথবা যাদেরকে বলা যায় মানবিক বোধের আড়ালে প্রচ্ছন্ন হীনপশুবৃত্তির মানুষ। সাম্প্রদায়িকভাবে বিদ্বেষপূর্ণ আর ধর্ম বর্ণ বৈষম্যে মোহাবিষ্ট মানুষ। আরো নির্দিষ্ট করে বলা যায়, স্ববিশেষ অর্থবিত্ত অস্ত্র এবং বিশ^রাজনীতির নিয়ন্ত্রক মানুষদের কথা। যারা কুকুর বাঁচাতে জীবনপাত করে। পরক্ষণেই আবার অসভ্য, অসত্য যুক্তি দাঁড় করিয়ে গণহত্যায় লিপ্ত হয় স্বার্থসিদ্ধির হীনকর্ম বাস্তবায়নে। আর স্থান কাল পাত্র বিচার না করে নির্বিচারে সম্পৃক্ত হয় অন্যায় অত্যাচার আর গণহত্যায়। ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের অর্থনীতির অনৈতিক হাতের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। এখানে মানবিকতার কোন কান্না নেই। এখানে বিপর্যস্ত কোন মানবিক চিত্র নেই এবং নেই এমন দৃশ্য দেখবার সঠিক দৃষ্টিসম্পন্ন চোখ।
হাজার হাজার প্যালেস্টাইনবাসী বাস্তূহীন, নিজ দেশে আজ তারা পরবাসী। শত শত শিশুর কান্নার শব্দে আজ সেখানকার আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে আছে। আর সে কান্নায় আজ কোথাও জাগ্রত হচ্ছে না কোন মানবিক বোধ। অথচ তাদের মাতৃভূমি রক্ষার প্রয়াসকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সমস্ত অসভ্য কথিত বিশ^বিবেক দাঁড়িয়েছে, ইহুদী ইসরাইলীদের অবিবেকী রাষ্ট্রনীতি এবং অবিশ্রান্তভাবে নিক্ষেপ করা গোলাগুলির সরবাহকারী হিসেবে। তাদের অনুগত বাহিনী প্রতিদিন খুন করছে একটি বৈধ রাষ্ট্রের নাগরিক এক একটি প্যালেস্টাইন পরিবার। লুট করছে তাদের সমস্ত সম্পদ। দখল করছে বাড়িঘর জমি। তাদের কারণে আজ এক জ¦লন্ত অগ্নিকুন্ডের নাম প্যালেস্টাইন। মানুষের রক্ত আর মৃত্যুর আহাজারিতে ভারী হয়ে গেছে সেখানকার আকাশ বাতাস। এভাবেই ইরাকের সাদ্দাম কুয়েত আক্রমণ করেছিলো বলে ইরাককে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিলো তারা। তাকে শায়েস্তা করতে সরাসরি ইরাক আক্রমণ করেছিলো কথিত সেই বিশ্ববিবেকের অন্যতম আমেরিকা। বিশ^ব্যাপী তাদের সেই অনৈতিক কর্মকা-কে বৈধতা দেয়ার জন্য ঘোষণা ছিল এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইরাকে ব্যাপক ব্যালেস্টিক মিসাইল আছে। অতএব বিশ^শান্তির প্রয়োজনে ধ্বংস কর ইরাক। ইরাক ধ্বংস হলো, রাষ্ট্র প্রধান সাদ্দামের ফাঁসি হলো। পরিণামে এরকম অনেক কিছুই হলো, কিন্তু কোথাও বইলো না শান্তির জোয়ার। আমেরিকাও কোথাও খুঁজে পেল না কোন মিসাইল।
এভাবেই আর এক গল্পের ফাঁদে আফগানিস্তান থেকে নজিবুল্লা সরকারকে হটানো হলো। কারণ নজিবুল্লা সমাজতন্ত্র বা রাশিয়ার সমর্থক। অতএব তাকে হটাতে এক লাদেন সৃষ্টি করলো আমেরিকা অর্থ, অস্ত্র সব কিছু দিয়ে। পৃথিবীর সামনে এক লেবাসী ধর্মের মানুষ সমাজতন্ত্রের বিরোধী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলো। পৃথিবী অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখলো, কার্যসিদ্ধির পরে সেই লাদেনকেই সন্ত্রাসী ঘোষণা দিয়ে শায়েস্তা করতে মানবতার সোল এজেন্টরা দখল নিলো আফগানিস্তানের। অথচ আজ যখন ইসরাইল পৃথিবীর সকল মানবতাবাদীদের মুখে কলুপ এঁটে দিয়ে আজরাইল রূপে প্যালেস্টাইনীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। তখন মানবিকতার দিশারী বিশ^শান্তির মোড়ল আমেরিকা, ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন অবস্থান না নিয়ে উল্টো ইসরাইলকে প্যালেস্টাইনী মুসলিম হত্যায় উৎসাহিত করতে অস্ত্র সরবরাহ করে চলেছে। আর এই অবাক পৃথিবীর প্রায় তাবৎ মানুষ একুশ শতকের সভ্যতার শিখরে দাঁড়িয়ে সেই হত্যা দৃশ্য দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হচ্ছে!
তাদের এই কর্মযজ্ঞ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সরাসরি একটি পক্ষ বানিয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাকিরা সবাই নানান রঙে, বর্ণে, সজ্জায়, প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে, মুসলিম নিধনযজ্ঞে তাদেরকে সম্প্রসারিত করে চলেছে। এমন কথা লিখতে বড় কষ্ট হচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে নিজের বিশ্বাসের বিরুদ্ধাচারণ করছি। এর পরিনামে হয়তো দেখবো অনেক অসম্প্রদায়িক বোদ্ধা, মূলত যারা সাম্প্রদায়িক বিষধারী, তারা ইশারায় কিংবা আঙুল তুলে বলছে, ‘ঐ দেখো ওদের আসল রূপ।’ তবু আজ নিজ ধর্ম ও সম্প্রদায়ের এমন বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে বিশ্ব বেহায়াদের মতো ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর মিছিল দেখে, বিজয় উল্লাসে (া) ভি চিহ্ন দেখানোর মতো, অসম্প্রাদায়িক সাজতে আমি পারবো না। অসম্প্রাদায়িক চিন্তা চেতনা মানে ধর্মহীনতা নয়। আমি মুসলমান, ইসলাম আমার ধর্ম, এমন সত্য আর বিশ্বাসে অটুট থাকবার দায় আছে সকল ধর্মের বিশ্বাসী মানুষের। এটা বললে যে বা যারা আমাকে সাম্প্রদায়িক বানাতে চায়, মূলত তারাই হচ্ছে যথার্থ ধূর্ত এবং অসৎ চিন্তা ধারণ করা পূর্ণ সাম্প্রদায়িক মানুষ।
ওদের ধর্ম কখনো অসাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই ওরা এতটাই হিংস্র হয়, ইসলাম কখনোই তেমনটা নয়। কুয়েত রক্ষার নামে, ইরাকে ঢুকে আমেরিকা যাদেরকে নিধন করলো, তারা মুসলমান। আফগানিস্তানে ঢুকে যাদেরকে হত্যা করা হলো তারা মুসলমান। নিউজিল্যন্ডে ক্রাইস্ট চার্চে নামাজরত অবস্থায় যাদের গুলি করে হত্যা করা হলো তারা মুসলমান। মায়ানমারে আগুন জ্বালিয়ে, ঘর বাড়ি পুড়িয়ে, এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের নেশায় মেতে উঠে গুলি ছুড়তে ছুড়তে যাদের দেশান্তরিত করে অন্য দেশে ঢুকিয়ে রিফিউজীর লেবাস পরানো হলো তারা মুসলমান। ভারতের গুজরাটে, কাশ্মীরে যাদের মসজিদ ভাঙা হলো, নারী ধর্ষণ করা হলো, আগুনে পুড়িয়ে ভস্ম করা হলো। সেই অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষ তারা সবাই মুসলমান। সমগ্র প্যালেস্টাইনে যুগের পর যুগ ধরে, যে চরম অমানবিকভাবে বিশ্ব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিদিন বোমা মেরে, গুলি ছুড়ে, নারী পুরুষ বৃদ্ধ শিশুদের নিশ্চিহ্ন করে চলেছে তারা সবাই মুসলমান। এই যে এরকম অসংখ্য অকারণে অনভিপ্রেত মৃত্যুর শিকার হওয়া মানুষ, তাদের ধর্ম কি, কারো কি জানতে মন চায় না? অথবা কোন বিবেচনায় মনে কি হয় না ওরাও তো ছিলো সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানব সন্তান।
না, অনেকেরই হয়তো মনে হয় না। কারণ একটাই যে, অনেক বাস্তবতায় এমন সত্য বলতে হয় না, বলা যায় না। অথচ সত্য। এরই নাম হয়তো হিডেন ক্রুসেড। অঘোষিত প্রচ্ছন্ন ধর্মযুদ্ধ। মুসলিম বাদে পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষ স্থান কাল পাত্র ভেদে সুকৌশলে বুঝে শুনে কাজটা করে চলেছে। আর মুসলিমরা সেটা সামাল দিয়ে চলতে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ তারা মেধা বুদ্ধি আর মননে নিজেদের সেই শক্তির বিরুদ্ধে উপযুক্ত করে তুলতে পারেনি। এজন্য অন্য কাউকে দায়ী করবার কোন সুযোগ নেই। যে জাতি ধর্ম বলতে শুধু মনে করে পায়ের গোড়ালির উপরে কাপড়, গোঁফ-শুন্য মুখে দাড়ি, ঘাড় আবধি মাথার চুল, আর পূর্ণ শরীর আলখাল্লায় আবৃত করা হলেই পৃথিবীব্যাপী ইসলামের শান্তির বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। এমন একটি বিশ্বাস নিয়ে যুগের পর যুগ পার করা যাবে। মুসলিম শব্দ ব্যবহারকারীরা সংখ্যাতত্ত্বে হয়তো আধিক্যও সৃষ্টি করতে পারবে পৃথিবীব্যাপী। তাতে বিজয়গাঁথা রচিত হবে না কোথাও। বিস্তার লাভ করবে না কোন শান্তির বাণী। এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মবিস্তারের যে ধরণ অনুশীলিত হচ্ছে। তার ব্যবহারে সমষ্টি মানুষের আস্থা নয়, ধর্ম ফোবিয়ার জন্ম দিচ্ছে ঘরে ঘরে। যারা এমনটা করছেন তারা ভেবে দেখতে পারেন। আপনারা কি চাইছেন আর কি হচ্ছে? ভেবে দেখা যেতে পারে অনবরত অযোগ্যতা দিয়ে অন্ধকার বৃত্ত তৈরি করা যায়। সেখান থেকে প্রত্যাশিত শান্তির কিংবা আকাক্সিক্ষত আলোময় পৃথিবীর সন্ধান পাওয়া যাবে কি? মনে রাখতে হবে পোশাক সজ্জা বা কোন ড্রেসকোড আর আদিম মানুষদের লোমশ দ্বারা শরীর আবৃত রাখার ধরণ কখনোই ধর্ম নয়। বর্তমানকালের ধর্মবিদেরা বা স্কলাররা বলছেন এগুলো ধর্ম নয়, সভ্যতার বিবর্তন। একে ধর্ম জ্ঞান করা স্পষ্টতই অধর্ম।
জানি সবাই, পৃথিবীর আদি থেকে আজ অবধি চন্দ্র, সূর্য, আকাশ, এই তিনের কোন ব্যাপ্তি ঘটাতে পারেনি মানুষ কিংবা কোন ধর্ম। এখানে ছোট একটি প্রশ্ন কি করা যায়, কেন? নিশ্চয়ই এর উত্তর একটাই কোন জ্ঞান বুদ্ধি ধর্ম বিবেচনায় তাদের হাতের কাছে কেউ পায়নি কখনো। যদি পেত টুকরো টুকরো করে নিয়ে যেত সকল ধর্ম উপাসনালয়গুলো। সেটা সম্ভব হয়নি তাই আজও তারা আছে এক অভিন্ন হয়ে। শুধু মানুষ ভাগ হয়ে গেছে ধর্মে বর্ণে গোত্রে এবং স্বার্থে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তার প্রাণ। আর প্রাণ বাঁচানোর অন্যতম উপাদান পানি কিংবা জল। যার আছে দুটি ধরণ একটি মিঠা পানযোগ্য অপরটি বিষস্বাদে ভরা লবনাক্ত। এই পৃথিবী নামক গ্রহে তিন ভাগ পানি কিংবা জল, বাকিটা স্থল। এই তিন ভাগ পানির বলা যায় প্রায় সবটাই লবনাক্ত। সুপেয় মিঠা পানযোগ্য পানির পরিমাণ অতি নগন্য। পৃথিবীর সমস্ত সাগর মহাসাগরের পানি লবনযুক্ত, যে পানি পানের অযোগ্য। এই পৃথিবীতে যে সকল মানুষের নুন্যতম পৃথিবীজ্ঞান আছে তারা জানে সে কথা।
আগামী পঞ্চাশ কিংবা শত বছর পরে এই পৃথিবীর সব থেকে জটিল কঠিন এবং দুষ্প্রাপ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে সুপেয় পানি। অনেক ভাল মন্দ এবং ব্যাপক যুদ্ধবিগ্রহের কারণ হয়ে উঠতে পারে সেটা। যেমন মধ্যপ্রাচ্যে দেখেছি তেলকেন্দ্রিক যুদ্ধ। অতএব এমন পৃথিবীতে চলতে হলে বুঝতে হবে। নিজেদের যথার্থ যোগ্য করে তুলতে হবে। কেবল ধর্মযুদ্ধের কথা বলে, শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বলে, আসর গরম করা ওয়াজ শেষে গোস-পোলাউ খেয়ে উদরপূর্তি করে, বাড়ি ফেরার পথে আয়োজকদের সম্মানিতে পকেট ভর্তি করে চলে গেলে কিচ্ছু হবে না। সেই ওয়াজ কোন ওয়াজ নয়। সে কারণে শিখতে হবে পানযোগ্য পানি না পেলে, কি করে লবনযুক্ত পানির লবন মুক্ত করা যায়। সেই শিক্ষা কোথায়, সেই বোধ বুদ্ধি কোথায়, কোথায় সেই ওয়াজ?
করোনাকালে যারপরনাই সাবধানবাণী উচ্চারিত হবার পরেও শুনেছি, ‘আপনারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবেন। ফাঁকা রাখলেই সেখানে শয়তান জায়গা করে নেবে!’ এমন কথা বলে বক্তা নিজে যখন দাঁড়িয়ে পড়েন। তখন তার কি একবারের জন্যেও মনে হয়, তার দুই কাঁধের দুইপাশই ফাঁকা? এবং সেই ফাঁকা জায়গাও ঘিরে রেখেছে শয়তান? বুঝতে পারিনা কি করে এই মানুষেরা ভাবতে পারেন এসব কথা! বুঝতে পারি না ধর্মের কাছে গেলেই আমরা সবাই বুদ্ধি বিবেচনা শিক্ষা জ্ঞান সব বিসর্জন দিয়ে কেন চুপ করে বসে থাকি? ¯্রষ্টার ভয়ে নাকি শয়তানের? শ্রষ্টা সদা-সর্বদা জানতে বলে। শয়তান বলে ‘না’। জানবার দরকার নেই। যা বলি সেটা আমার সাথে চিৎকার করে বলেন। আর এদের এই নিত্য গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকারে সর্বত্র ধর্মীয় আসরগুলো বিভাজিত এবং বির্তকিত। সেখানে পরিপূর্ণ ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে এখন অনবরত বিষোদগার, একের প্রতি অন্যের। কোথাও টুপির সঙ্গে পাগড়ির। উপাধির সঙ্গে উপাধির। খেতাবের সঙ্গে খেতাবের। মাজহাবের সঙ্গে মাজহাবের। শিয়ার সঙ্গে সুন্নির। অথচ যথার্থ ধর্ম আদৌ কি এমন দ্বন্দ্বের অনুমোদন দেয়?
তাহলে এদের আসরে যারা বসে থাকেন তারা কারা? ওরা খেতে খামারে কলকারখানায় ফোঁটা ফোঁটা ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদনক্ষম শ্রমজীবী সাধারন মানুষ। যাদের অর্জনে সীমাবদ্ধতা থাকলেও সততার কোন শেষ নেই। তারা শিক্ষা থেকে দূরে থাকে বলেই তাদের জ্ঞানহীনতা সমদ্দুর। সেই সহজ সরল মানুষদের ঘুমের ঘোরে বেহেস্তে যাবার পথ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন, নানান গল্প কেচ্ছা বলে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। পৃথিবীর সকল ব্যবসা এবং ব্যবসায়ীদের একটাই ধর্ম, সেটা হল মুনাফা অর্জন। সেটা সে করবেই ছলে বলে কৌশলে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই ধর্মের প্রচারক যদিও তারা সংখ্যায় খুবই নগন্য। তারপরেও ভাবতে চাই তারাও আছে। বুঝতে পারি না তারা সংখ্যায় কম হলেও কেন বলতে পারছেন না, ‘হে শ্রমজীবী সাধারণ ও শিক্ষিত বোকার দল তোমাদের ঘামে শ্রমেই আমাদের উদরপূর্তি হয়। তোমরাই পৃথিবী জুড়ে সৎ-সঠিক এবং মোনাফেক নও। তাহলে তোমরা চিন্তিত কেন? শেষ বিচারে যিনি থাকবেন সেই মানব শ্রষ্টা, তিনি কোন মোল্লা পুরোহিতের ফাঁস করা কোন প্রশ্নের উত্তর গ্রহণ করবেন না। সেই সম্ভাব্য কঠিন দিনে আজকের সব ফতোয়া ও ফিকিরবাজরা আটকে যাবেন, মিথ্যা মনগড়া বানোয়াট অতিকথনের জন্য। সেই কঠিন দিনে শ্রেষ্ঠস্থান বলে যদি কিছু থাকে তবে মনে রাখো। তা অতি অবশ্যই সৎ এবং মানব কল্যাণের ব্যাপৃত সহজ সরল মানুষদের জন্যই হবে-ইনশাআল্লাহ্। কোন ভন্ড ধর্ম প্রচারকদের জন্য নয়।
মূলত এখন যা চলছে সর্বত্র এর নাম ধর্মপ্রচার নয়। এ অতিকথন সহযোগে কন্ঠশক্তির প্রচার। এ একধরণের অন্তর্সারশুন্য জ্ঞানহীনতার প্রচার। এ হলো ধর্মকে কঠিন থেকে কঠিনতর করবার প্রচার এবং প্রয়াস। এ হলো রাজনীতির মতন করে ধর্মকে ব্যবহার করে রুটি রুজি অর্জনের প্রচার। সর্বত্র কাদা ছোঁড়াছুড়ির মহোৎসব চলছে। কি এর পরিনাম? যার জন্যে একজন অন্যজনকে কাফের পর্যন্ত বলতে দ্বিধা করছে না। এই হচ্ছে এদের বুদ্ধি। এই বুদ্ধির উপর ভর করেই তারা প্রতিদিন ধর্মযুদ্ধে অজ্ঞ মানুষদের ঝাঁপিয়ে পড়তে বলে এবং স্বপ্ন দেখায় বিজয়ের!
না, এভাবে সম্ভব নয়। কখনো কোথাও তা হয় নি কোনদিন। আমরা এ দেশের প্রতিটি মানুষ চাই এই দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে বির্পযস্ত ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়াতে। আমরা চাই তাদের মুক্তি এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে। তার জন্য আমাদের করণীয় কি? আমার দেশে রাস্তায় রাস্তায় আগুন জ¦ালিয়ে প্রতিবাদ করা, দেশ অচল করে দেওয়া, মসজিদ দখল করে সরকার বিরোধী স্লোগান দেওয়া? আরব সাগরে পথ হারিয়ে মুসলিম ডুবে যাচ্ছে, তাদের বাঁচাতে আমরা কোথায় ডুবে মরলে তবে শহীদী মর্যাদা লাভ করবো, বঙ্গোপ সাগরে? সে খবর পৌঁছাবে তাদের কাছে, তাতে করে বেঁচে যাবে তারা?
না, না। এভাবে রক্ষা হবে না। এর নাম জেহাদ নয়। এমন জেহাদীরা ধর্মের নয়, ওরা ধর্ম ব্যবসায়ীদের দাস। ওরা তাদের দাস, যারা ওদের হাত পেতে ভিক্ষা করতে শেখায়। যারা ওদের জীবনের শুরুতেই শরীরের থেকে বড় ছোরা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, ‘যাও পশু হত্যা করতে শেখো। রক্ত দেখতে শেখো। তারপরে হাত পেতে ধর্মের মিথ্যা দোহাই দিয়ে পশুর চামড়া সংগ্রহ করে বাঁচতে শেখো।’ ওরা রাসূলের সকল কর্মকে স্বার্থের প্রয়োজনে অপব্যখ্যা দিয়ে মহান আল্লাহ্র উপরে স্থান দেবার ঔদ্ধত্য পর্যন্ত দেখায়! তবু মোহাম্মদ (সঃ)’র মূল শিক্ষা, ‘তোমরা করনা ভিক্ষা মেহনত কর সবে।’ এমন কথা অনেকেই পড়ে দেখে না আর দেখলেও তার অর্থ বুঝতে চায় না।
এমন অযোগ্য অসভ্য ধর্ম অনুশীলণকারীদের কোন প্রয়োজন নেই। না ঘরে, না দেশে, না পৃথিবীতে। যাদের মস্তিস্ক যথাযথ কর্মক্ষম নয়, যারা এই পৃথিবীতে সময়ের যোগ্য হতেই পারছে না। কোনভাবে সেইসব মানুষদের কে বোঝাবে ধর্ম অনুশীলনের মূল বোধ হচ্ছে মানবিকতা। তার বাইরে যে অনুশীলন তা বিকৃত রুচির। তার বিরুদ্ধাচারণের জন্য প্রয়োজন কূটনীতি ধারণক্ষম মস্তিস্ক। যার অভাবে আজ তিলে তিলে মরছে ফিলিস্তিন।
আমাদের স্পষ্টতই জানা আছে, উনিশ শতকের শেষের দিকে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ইহুদীদের উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য তাদের প্রতি চরম ঘৃণা এবং দিদ্বেষ বাড়তে থাকে। সেই সময় ইহুদীরা নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আকাঙ্খা পর্যন্ত ব্যক্ত করতে থাকে। বিশেষত বৃটেনের মাটিতে। যার ফলশ্রুতিতে বৃটেন সিদ্ধান্ত নেয় ইহুদীদের জন্য একটি উপনিবেশ সৃষ্টির এবং সেটা ফিলিস্তিন ভুখন্ডেই! যে মূল কাজটি ১৯১৭ সালে বৃটিশ প্রধান মন্ত্রী জেম্স বেলফোর-এর মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। ১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রটিকে দ্বিখন্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়! সেই প্রস্তাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ হয়েও ইহুদীরা পায় মোট ভূমির ৫৭ শতাংশ। আর ফিলিস্তিনিরা পায় নিজ মাতৃভূমির মাত্র ৪৩ শতাংশ!
এমন নির্লজ্জ্ব, অমানবিক, নিষ্ঠুর বৈষম্যের উদাহরণ এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নাই। হয়তো নাই পৃথিবীর কোন গহীনতম জঙ্গলেও, যেখানে আছে পশুদের রাজ। তবু এমনটাই হয়েছে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে। যার রেশ চলছে এখনো। এর নাম হচ্ছে বৃটিশ। ওদের পক্ষেই সম্ভব বাইরে কেতা-দুরস্ত সেজে ভিতরে সব থেকে হিংস্র কালো কাজটি করা। মুখমুখি দাঁড়াতে হলে শিখতে হবে। কারণ শত্রুকে শিখিয়ে দেবার শিক্ষা, শত্রুর কাছ থেকেই শিখে নিতে হয়।
ঘোড়ার থাকে ঘোড়াশাল, পাখিদেরও থাকে ছোট্ট একটি নীড়। দিন শেষে সবাই ফিরে যায় যার যার ঘরে। পাখি ফেরে নীড়ে। নদীও ফিরে যায় ঘরে। অথচ আজ ফিলিস্তিনে ধংসস্তুূপের উপরে দাঁড়ানো শিশুটির কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য, কোন মাটি নেই। যে মাটি একান্তই তাদের। যেখানে তাদের অস্তিত¦, তাদের বংশানুক্রমিক পূর্বপুরুষদের সমাধি। এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানবিক মানুষ ধর্মকে অতিক্রম করে হলেও বলতে চায়। কোন মানুষের হাতে আর মৃত্যু নয়, পৃথিবীর কোন মানুষের। অথচ বলতে পারছে না, থামাতে পারছে না। তাদের কাছে এর থেকে দুঃখের, এর থেকে কষ্টের, এর থেকে অভিব্যক্তিহীন অযোগ্যতা আর কি থাকতে পারে?
আমরা চাই, পৃথিবীর মানবিক মূল্যবোধধারী মানুষগুলোর প্রত্যাশার উন্মেষ ঘটুক। তারা প্রকাশ্যে, রাজপথগুলোতে এসে বলুক, ‘আমরা ফিলিস্তিনীদের জন্য নিজস্ব স্বাধীন মাটি চাই। আমরা চাই, তার ভুখন্ডের সার্বভৌমত্ব।’ আরব মরুর তপ্ত বালুর বুকে প্রতিদিন যেখানে ইসরাইলীদের উত্তপ্ত বুলেটে ঝরছে ফিলিস্তিনীদের রক্ত, সে মাটি এখন তাদের।
বিশ্ব রাজনীতিতে এখনই সময়, এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য ও সত্য উন্মোচিত করার। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনীর পক্ষে মত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং তুরস্কের রাষ্ট্র প্রধানগণ। এছাড়া মরুর প্রান্তরে আছে আরও যতো দেশ। যারা বিত্তবৈভবে আকন্ঠ ডুবে আছে, ধর্ম যাদের অর্থ উপার্জনের একমাত্র উপকরণ। তাদেরও এখনই সময় (নিজ পায়ে পরে থাকা পশ্চিমাদের সোনার জিঞ্জির খুলে) ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়াবার। এখনই সময় তাদের ফিলিস্তিন মুক্তির সমন্বিত ঘোষণা দেওয়ার। এখনই সময় পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে ইসরাইল বিদ্বেষী ঘৃণার প্রসার ঘটানো। এখনই সময় ইসরাইলীদের অমানবিক অত্যাচারের প্রচার করা। তা যদি ধর্মের পথে হয় হবে, যদি মানবিক মুল্যবোধ সমৃদ্ধ হয় তবে তা-ও হোক। যাতে তাদের ইমেজ সংকট ঘটে বিশ^ব্যাপী। ওদের বুঝাতে হবে অস্ত্রই শক্তির শেষ কথা নয়। তার থেকেও বড় শক্তি মানুষের সমর্থন কিংবা ঘৃণা।
পৃথিবীর সামনে আজ খুব পরিস্কার, কেন ফিলিস্তিনীদের উপর এই দানবীয় অযৌক্তিক জুলুম। যা আরও স্পষ্ট হলো। গেল ২৭ রমজান পবিত্র কদরের রাত থেকে ঈদ অবধি। অবাক বিস্ময়ে দেখেছে বিশ্ব, কিভাবে ইসরাইলী পুলিশ এবং সেনারা সমন্বিত হয়ে একত্রে চড়াও হলো, পবিত্র আল-আকসা মসজিদে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনীদের ওপর। নির্বিচারে তারা চালালো অকথ্য নির্যাতন এবং গুলি। আমরা দেখলাম ফিলিস্তিনীদের ঈদের আনন্দ কিভাবে রক্তে, অশ্রুতে মিশে একাকার হয়ে গেল। সেই থেকে এবং এখনও যা ঘটে চলেছে তাকে কি করে ধারণ করা সম্ভব? কি করে সম্ভব উত্তেজনা প্রশমন? এ কথা এবার একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে মতাদর্শে বিভাজিত বিশ্ব মিডিয়ায়। তারা উভয়েই প্রমাণ করেছে ইসরাইলের সর্বশেষ ইচ্ছা হল আল-আকসা মসজিদের দখল।
অতএব সময় এখন ঘুরে দাঁড়াবার। তবে উগ্রতা নয় বরং কঠিন বিচক্ষণতা দিয়ে। সকল অন্তর্দ¦ন্দ¦ ও আত্মকলহ ত্যাগ করে বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থাকতে হবে। ব্যাপক সুদুর প্রয়াসী কুটনীতি এবং বিশ্ব মিডিয়ার ব্যবহার বর্তমান সময়ে সকল বিজয়ের মুল সুর। তার যথার্থ প্রয়োগে কঠিন উদ্যোগী হতে হবে। তৈরী করতে হবে রাজনীতির কঠিন রূপ খোদ ফিলিস্তিনীদেরই ভিতরে। যার যথার্থ অর্থ স্বাধীনতা। যেমনটা স্বাধীনতার প্রয়োজনে বাঙালীদের তৈরী করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলওর) প্রধান ইয়াসির আরাফাত। সেই মুক্তির পথে ফিলিস্তিনীদের রক্তের ধারা বয়ে চলুক কাঙ্খিত স্বাধীকারের দিকে। জয় হোক ফিলিস্তিনের।
লেখক: আজমল হোসেন লাবু, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ