নারায়ণগঞ্জ তল্লা মসজিদে অগ্নিকাণ্ডে ২৯ অভিযুক্ত

নারায়ণগঞ্জ তল্লা মসজিদে অগ্নিকাণ্ডে ২৯ অভিযুক্ত

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে সিআইডি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানের কাছে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়া (৬০), সামসুদ্দিন সরদার (৬০), মো. শামসু সরদার (৫৭), শওকত আলী (৫০), অসিম উদ্দিন (৫০), জাহাঙ্গীর আলম (৪০), শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল (৪৫), মো. নাঈম সরদার (২৭), তানভীর আহমেদ (৪৫), আল আমিন (৩৫), আলমগীর সিকদার (৩৫), আলহাজ্ব মাওলনা আল আমিন (৪৫), সিরাজ হাওলাদার (৫৫), নেওয়াজ মিয়া (৫৫), নাজির হোসেন (৫৬), আবুল কাশেম (৪৫), আব্দুল মালেক (৫৫), মনিরুল (৫৫), স্বপন মিয়া (৩৮), আসলাম আলী (৪২), আলী তাজম (মিল্কী) (৫৫), কাইয়ুম (৩৮), মামুন মিয়া (৩৮), দেলোয়ার হোসেন, বশির আহমেদ (হৃদয়) (২৮), রিমেল (৩২), আরিফুর রহমান (৩০), মোবারক হোসেন (৪০) ও রায়হানুল ইসলাম (৩৬)।

তবে অভিযুক্ত আরো আট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় আলোচিত বায়তুছ সালাত জামে মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৭ মুসল্লীসহ এক পথচারী অগ্নিদগ্ধ হন। এদের মধ্যে ৩৪ জন মুসল্লী ঢাকা মেডিকেল কলেজেন শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। চারজন এখনো নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে মসজিদের এসি, থাইগ্লাস ও বিভিন্ন আসবাব আগুনে পুড়ে ব্যাক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ঘটনার পাঁচ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। তদন্তকালে সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বস্তগত আলামত সংগ্রহ ও অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ উদঘাটন করে। স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশনের ফতুল্লা জোনের দায়িত্বরত আট কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাদের দু’দিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এ ছাড়া ডিপিডিসির এক মিটার রিডার, দুই ইলেকট্রিশিয়ানসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ইলেকট্রিশিয়ান মোবারক ও রায়হান অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী প্রদান করে। তদন্তে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও অব্যাবস্থাপনার প্রমাণ পাওয়ায় মসজিদ কমিটির সভাপতি আ. গফুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, ঘটনার আগে থেকে প্রায় তিন মাস যাবৎ মসজিদের পাশে তিতাসের পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে মসজিদের ভেতরে জমা হতে থাকে। বাধাহীনভাবে গ্যাস উদগিরণ হয়ে মসজিদ গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। ঘটনার ৭/৮দিন আগে থেকে গ্যাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে মুসল্লীরা বিষয়টি মসজিদ কমিটিকে জানায়। কিন্তু মসজিদ কমিটি কোনো ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি।

তারা আরো জানায়, ঘটনার দিন এশার নামাজের সময় বৈধ বিদ্যুৎ লাইন চলে গেলে ম্যানুয়াল চেঞ্জওভারের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হলে স্পার্ক হয়। তখন বিদ্যুতের স্পার্ক ও মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের সমন্বয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা অগ্নিদগ্ধদের অটোরিক্সা/রিক্সাযোগে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বার্ন ইউনিট না থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় অগ্নিদ্বগ্ধ ৩৪ মুসল্লি মৃত্যুবরণ করেন এবং চারজন বর্তমানে বাড়িতে আছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মসজিদ কমিটির সঠিকভাবে মসজিদ পরিচালনায় অবহেলা, অ-ব্যবস্থাপনা, উদাসিনতা, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা, কারিগরি দিক বিবেচনা না করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণভাবে লাগানো, গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েও মুসল্লীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে ব্যবস্থা না নেয়া ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো. লি. (ডিপিডিসি) এর মিটার রিডিং কালেক্টর ও ইলেক্ট্রিশিয়ানদের মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণভাবে মসজিদের অভ্যন্তরে বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি স্থাপন, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কো. লি. এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা, গ্যাস লাইনের সঠিকভাবে তদারকি না করা, পাইপের লিকেজ মেরামত না করা, গ্যাস লাইন ঝুঁকিপূর্ণভাবে পিন/স্থানান্তর করার কারণে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।  

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাসিরউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে জানান, তদন্ত গ্রহণের পর থেকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিরলসভাবে তদন্ত কাজ পরিচালনা করে সিআইডি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়াসহ মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি। অভিযুক্ত আরো আট সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী হওয়ায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর এশার নামাজের সময় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয় ৩৭ মুসল্লী ও একজন পথচারী। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পর্যাক্রমে ৩৪ জন মসুল্লির মৃত্যু হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজ চলাকালে তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট ও গ্যাসের পাইপের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে প্রায় অর্ধশত মুসল্লী দগ্ধ হন। এদের মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।