নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন

নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সবাইকে যার যার অবস্থানে নিরাপদ থাকার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  রবিবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ তাগিদ দেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ঈদের আগে স্বাস্থ্যবিধি এবং অন্যান্য নিয়মনকানুন মেনে কিছু কিছু দোকানপাট খুলে দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছি। যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন এবং যারা দোকানে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, আপনারা অবশ্যই নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। ভিড় এড়িয়ে চলবেন।

তিনি বলেন, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। মনে রাখবেন আপনি সুরক্ষিত থাকলে আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে, প্রতিবেশি সুরক্ষিত থাকবে, দেশ সুরক্ষিত থাকবে।

পধানমন্ত্রী তার ভাষণ করোনাভাইরাস মহামারির বিবরণ দিয়ে বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে সারা বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। অগণিত মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও এই মহামারী মানুষের রুটি-রুজির উপর চরম আঘাত হেনেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাসের এই মহামারি সহসা দূর হবে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। যতদিন না কোন প্রতিষেধক টীকা আবিস্কার হচ্ছে, ততদিন করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো আমাদের বাঁচতে হবে। জীবন-জীবিকার স্বার্থে চালু করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিশ্বের প্রায় সব দেশই ইতিমধ্যে লকডাউন শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তো নয়ই।

তিনি বলেন, সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য জরুরি কিছু সেবা ছাড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। হারিয়েছেন তাদের রুটি-রুজির সংস্থান।

শেখ হাসিনা বলেন, এসব কর্মহীন মানুষের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খাদ্য সহায়তা ছাড়াও দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৭ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৯১ কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১০ কেজি টাকা দরে বিক্রির জন্য ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মে মাসে দরিদ্র পরিবারের জন্য অতিরিক্ত ৫০ লাখ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে যার মাধ্যমে তারা এ চাল কিনতে পারবেন। কাজ হারিয়েছেন কিন্তু কোনো সহায়তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত নন এ ধরনের ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট ১২ শো ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য দু-দফায় ১৭ কোটিরও বেশি এবং সারা দেশের মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনদের জন্য ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সহায়তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, ততদিন এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। অনেক সদাশয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দরিদ্র জনগণের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে এগিয়ে এসেছেন। আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরায় সচল করতে আমরা ইতিমধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। যা জিডিপি’র ৩.৬ শতাংশ। রপ্তানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কৃটির শিল্প, কৃষি, মৎস্যচাষ, হাঁসমুরগী ও পশুপালন খাতসহ ১৮টি অর্থনৈতিক খাতকে এসব প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কাজ হারানো যুবক ও প্রবাসী ভাইবোনদের সহায়তার জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি টাকা করে সর্বমোট ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এই দুর্যোগ মুহূর্তে বোরো ধানের বাম্পার ফলন আমাদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। এ বছর প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ। এই দুর্যোগ মুহূর্তে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য আমি কৃষক ভাইবোন এবং কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন ও ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পান সে জন্য ইতিমধ্যেই আমরা ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করেছি। চলতি মৌসুমে ২২ দশমিক ২৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে যা গত বছরের তুলনায় ২ লাখ মেট্রিক টন বেশি। ধান কাটা-মাড়াইয়ে সহায়তার জন্য আমরা কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টর এবং রিপার সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। এজন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

শেখ হাসিসনা বলেন, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলাম ধান কাটা-মাড়াইয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে। আমার নির্দেশ শিরোধার্য্য করে নিয়ে তারা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে কৃষকলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধান কাটায় সহায়তা করেছে। এ জন্য কৃষকদের কোন অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। কৃষকেরা দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পেড়েছেন। আমি এসব ছাত্রলীগকর্মীসহ যারা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাই।

তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা কার্যকর করা হয়েছে। যাঁরা কাজে যোগ দিতে পারেননি, তাঁরাও শতকরা ৬০ ভাগ বেতন পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বেতনভাতা পরিশোধ করা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিকে মালিকদের আয় যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনি কর্মচারীরাও বিপাকে পড়েছেন। বেশিরভাগ দোকান মালিকের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।