নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় আন্দোলনের শুরুতেই হোচট খেয়েছে বিএনপি

নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় আন্দোলনের শুরুতেই হোচট খেয়েছে বিএনপি। এই দাবিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বরিশালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ নিজেদের কোন্দলেই পন্ড হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো সমাবেশ। সিনিয়র নেতাদের সামনে স্থানীয় ছাত্রদলের দুই পক্ষের দফায় দফায় লাঠালাঠি-চেয়ার ছোড়াছুড়ি দেখেছে দেশবাসীসহ সারা বিশ্ব। নানা বাঁধা বিপত্তি উতরে সফলভাবে সমাবেশ আয়োজনের পরও তাদের সহিংসতা জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে আগানো দলটির এই অন্তর্কলহে অখুশি তাদের কর্মী-সমর্থকরাও। এ ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে দলটির নীতি নির্ধারকদেরও।
নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনের শুরুতেই দলের আন্তসংঘাতে বিরক্ত হয়ে বরিশালের প্রথম সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মঞ্চের কাছে শ্লোগান না দিয়ে রাস্তায় গিয়ে শ্লোগান দেবেন, মিছিল করতে হয় রাজপথে করবেন। আগুন দিতে হয় সরকারের গদিতে দেবেন। শ্লোগান দিয়ে সংঘাতে (?) জড়িয়ে সমাবেশ নষ্ট করবেন না।
দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে সারা দেশের সব বিভাগীয় সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। যার প্রথমটি গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বরিশালে। সরকার বিরোধী সমাবেশ হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণার পরও সরকারের নমনীয়তা এবং পুলিশের অনুমতি পাওয়া নিয়ে সংশয়ে ছিলো নীতিনির্ধারকরা। সমাবেশের আগের রাতে পুলিশের মৌখিক সম্মতিতে আস্বস্ত হয় বিএনপি নেতারা।
সমাবেশ শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে জিলা স্কুল মাঠের আশেপাশে সাজোয়া যান, জলকামান এবকং রেকারসহ মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। সারা শহরের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন করে জমায়েতে আসতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে বিকেল ৩টা থেকে অঘোষিতভাবে শহরের থ্রি হুইলার যান চলাচল বন্ধ করা হয়। মোড়ে মোড়ে সরকার দলীয় কর্মীদের হামলা-ধাওয়া খেয়েও শেষ পর্যন্ত সমাবেশ সফল হয়েছে বলে মনে করেন আয়োজক সংগঠন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া।
কিন্তু সমাবেশের মাঝপথে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ছাত্রদলের দুই পক্ষের দফায় দফায় লাঠিসোটা নিয়ে চেয়ার ছোড়াছুড়ি করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে সমাবেশ প্রায় পন্ড হতে চলেছিলো। হামলার হাত থেকে নেতাকর্মীরা বাঁচতে দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে বাঁচার চেষ্টা করায় জিলা স্কুল মাঠ অনেকাংশ ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা শক্তহাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়ায় কোনমতে রক্ষা হয়েছে।
দাবি আদায়ের আন্দোলনে নিজেদের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে একটা নেতৃত্বশূন্য আগোছালো সমাবেশ বলে মন্তব্য উল্লেখ করেছে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শাহ সাজেদা। বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, বিএনপির মতো একটা বৃহৎ দলের কাছে এমন দায়িত্বহীন আচরণ তাদের দলের লোকজন, সমর্থক এবং সাধারণ নাগরিক কেউ আশা করেন না। তারা নিজেরা সংঘাতে জড়িয়ে দৈন্যতার পরিচয় দিয়েছে। যদি না তারা শোধরায়, রাজনৈতিক ম্যান্ডেট মেনে না চলে তাহলে আগামী নির্বাচনে এই অদূরদর্শীতার ফল দলটি ভোগ করবে।
মহানগর যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান শামীম বলেন, দল অনেক বড়। মত পার্থক্যও অনেক বেশি। এটা হওয়া উচিত না। এভাবে দাবি আদায় সম্ভব নয়। একমাত্র ঐক্য ঐক্য ঐক্য-ই পারে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পেঁৗঁছতে। এ জন্য প্রত্যেকের ব্যক্তিগত স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভেদাভেদ ভুলে দলের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবব্ধ হতে হবে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, একটি আন্দোলনের সফল সূচনা যারা (স্থানীয় বিবদমান দুই পক্ষ) কলুসিত করার চেষ্টা করেছে তাদের ছাড় দেবেনা বিএনপি। সমাবেশ চলার মধ্যেই ওই ঘটনার ছবিসহ যাবতীয় প্রমাণ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যানের কাছে পৌঁছে গেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলও ওই সংঘাতে জড়িয়ে পড়া স্থানীয় ছাত্রদলের দুই পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। জনগণের সমর্থন আদায়ের এই সংগ্রাম বেগবান করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করছেন।