পদ্মা ঘিরে ঢাকা-বরিশালে চলবে আধুনিক মাইক্রোবাস

পদ্মা ঘিরে ঢাকা-বরিশালে চলবে আধুনিক মাইক্রোবাস

পদ্মা সেতুকে ঘিরে দক্ষিণ জনপদের মানুষের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন যত কমে আসছে বরিশালবাসি একের পর এক সু-খবর পেতে যাচ্ছে। এবার রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বরিশালের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করতে অর্ধশত আধুনিক মাইক্রোবাস নামছে। এগুলো শুধু বরিশাল নথুল্লাবাদ থেকে রাজধানীর গাবতলী রুটে চলাচল করবে। নতুন মাইক্রোবাস সেবা নিয়ে আসায় ঢাকা যাতায়াতে বাসের থেকে প্রায় ৩০ মিনিট সময় কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মাইক্রোবাস সার্ভিসের পরিচালক। এই আধুনিক মাইক্রোবাসে করে যাতায়াতে যাত্রীরা সড়কের দৃশ্য ও পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি দূরত্ব কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কৌতুহল আরো বেড়েছে। 

বরিশাল মাইক্রোবাস কাউন্টারে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে মাওয়ার কাঁঠালবাড়িয়া পর্যন্ত মাইক্রোবাসে যাত্রী সেবা দিয়ে আসছে ‘বরিশাল মাইক্রোবাস সার্ভিস’। মাত্র ৩০০ টাকা ভাড়ায় ২ ঘন্টায় ৩০ মিনিটে ১৪ জন যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়িয়া পর্যন্ত পাড়ি দেয় মইক্রোবাসগুলো। দুই প্রান্তে প্রায় ৩০টির মতো মাইক্রোবাস রয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে কম সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর একমাত্র পথ ছিলো এই মাইক্রোবাসে পাড়ি দেওয়া। প্রতিদিন ভোর ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলে এই মাইক্রোবাস সার্ভিস। এতে এপার কাঠাঁলবাড়িয়া  এসে কোনো যাত্রীকে কখনো ভোগন্তিতে পরতে হয় নি। তাই যাত্রী সেবার আর এক ভরসা এই মাইক্রোবাস সার্ভিস।

বরিশাল নথুল্লাবাদ মাইক্রোবাস সার্ভিস স্ট্যান্ডের যাত্রী মো. হাসিবুল বলেন, ‘এই মাইক্রোবাসের জন্য দ্রুত ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে পারি। এক কথায় বিপদের বন্ধুর মতো কাজ করে। তবে শুনেছি এবার তার ঢাকা পর্যন্ত যাত্রী সেবা দিবে। এটা ভালো সংবাদ তবে ভাড়াটা যেন আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে।’

বরিশাল মাইক্রোবাস সার্ভিসের লাইনম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওনে মোরা অনেক খুশি। যোগাযোগ ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধইরা মোরা অবহেলায় আছালাম। অনেক সময়ে ফেরীতে রোগী নিয়া ঝামেলায় পরতে হইতো স্বজনদের। এইবার হেই ভোগান্তির শেষে আনন্দ বইছে হগোলডির মইধ্যে। পদ্মা সেতুর কারণে শুধু মোগো দক্ষিণাঞ্চল না, দেশের অবস্থান অনেক উঁচু পর্যায়ে চইলা গ্যাছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘এই বরিশাল মাইক্রোবাস সার্ভিসের এখানে অনেক শ্রমিক আছে যাগো এইডা দিয়াই পেট, সংসার সবকিছু চইল্লা যায়। পদ্মা সেতুর লইগ্যা মোগো শ্রমিকদের আরো ভালো হইছে। এইবার কাজ আরো বাড়ছে। পদ্মা সেতুর উপর দিয়া যাত্রী নিয়া এবার ঢাকা পর্যন্ত পাড়ি দিতে হইবে। এতে আরো নতুন শ্রমিক কাজ-কামের সুযোগ পাইবে।’

বরিশাল মাইক্রোবাস সার্ভিসের পরিচালক সৈয়দ গোলাম কবির মামুন বলেন, ‘সর্বপ্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই পদ্মাসেতুর জন্য। যার জন্য আজ এই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। এছাড়া এই সেতুর জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। যার ফলে এই অঞ্চলের বেকারত্ব কমবে।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আমরা মাওয়া ঘাটের এপার কাঁঠালবাড়িয়া পর্যন্ত  যাত্রীসেবা দিয়ে আসছি। এবার পদ্মা সেতুর জন্য আমাদের চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করতে হয়েছে। কারণ এখানে প্রায় ৫০ জন ড্রাইভার আছে। এছাড়া আরো ১০০ জনের মত স্টাফ আছে। তাদের সংসার এই কর্মের মাধ্যমেই চলে। তাই তাদের কথাও আমাদের ভাবতে হয়েছে। কারণ এই পদ্মা সেতু চালু হলে বর্তমান কাঁঠালবাড়িয়া রুটে যাত্রী কম থাকবে, রুট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই এবার আমার ঢাকার গাবতলী পর্যন্ত যাত্রী সেবা  চালু করতে যাচ্ছি। ফলে আরামচে যাত্রীরা পদ্মা পাড়ি দিতে পারবে। 

নতুন এই যাত্রী সেবার বিস্তারিত সর্ম্পকে তিনি বলেন, বরিশাল থেকে ২৫টি মাইক্রোবাস এবং গাবতলী থেকে ২৫ মাইক্রোবাস মোট ৫০টি আধুনিক এসি মাইক্রোবাস লাইনে সবসময় থাকবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এখন পযর্ন্ত ভাড়া এবং গাড়ি ছাড়ার সময় র্নিধারণ করা হয় নি। এছাড়া যাত্রীরা সাড়ে ৩ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টার মধ্যে গাবতলী পৌঁছাতে পারবেন। এই পদ্মাসেতুর কারণে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বরিশাল থেকে রাজধানীর ঢাকার দূরত্ব কমবে এবং বেশি আনন্দ উপভোগ করতে পারবে যাত্রীরা।