পদ্মা সেতু: নতুন স্বপ্ন বুনছেন ভোলাবাসী

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। সকল প্রস্তুতি শেষ। উদ্বোধন হবে ২৫ জুন। ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ এখন প্রহর গুনছে। আর তর সইছে না। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার সাথে সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সহজ হবে, তেমনি গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। খুলে যাবে উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার। সৃষ্টি হবে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে শুরু হবে নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। আমূল পাল্টে যাবে দেশের পিছিয়ে পড়া ধান-নদী-খাল অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান। এরই মধ্যে উন্নয়নের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলায়। পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন ভোলার ২০ লাখ মানুষ।
এ বিষয়ে কথা হয় ভোলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে। তারা জানান, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ভোলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিরামহীন এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মাধ্যমে দেশে আর উত্তর-দক্ষিণ কোনো ভাগ থাকবে না। সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যাবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভোলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমা অঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক গতি আসবে। বিশেষ করে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে থাকা ভোলার মানুষের জীবনে পদ্মা সেতু বিশাল এক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। ইতিপূর্বে সড়ক পথে পণ্য আনা-নেওয়ায় সংকট ছিল চরম। ফেরিঘাটে আটকে পড়ে মালামাল পচে যাওয়া বা দুর্যোগে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়লে সাধারণ যাত্রী এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হতো। পদ্মা সেতু চালু হলে আর সেই সমস্যা থাকছে না।
ভোলা সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে ভোলায় উৎপাদিত পণ্য অতি দ্রুত ঢাকাসহ সারা দেশে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এজন্য এরই মধ্যে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ভোলায় বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।
পদ্মা সেতুর কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন ভোলা জেলা পরিষদ প্রশাসক আব্দুল মমিন টুলু। তিনি জানান, ভোলায় বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদ রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে ভোলায় অনেক শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠবে। কারণ তখন সড়ক পথে খুব সহজে এবং অল্প সময়ে মালামাল পরিবহন করা সম্ভব হবে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী জানান, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার যে সুবিধা হবে, এতে করে ভোলার অর্থ-সামাজিক, শিল্প খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। বিশেষ করে দ্বীপ জেলা ভোলায় পর্যটন শিল্প অতি দ্রুত বিকাশিত হবে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়া নিয়ে দ্বীপবাসীর মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য হাজার হাজার উৎসুক জনতা পদ্মার পাড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবকিছু ছাপিয়ে স্থানীয়রা মনে করছেন, ভোলা-বরিশাল সেতু হলে দ্বীপের রানী ভোলা হবে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর। তাই ভোলাবাসীর দাবি, দ্রুত ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ করা হোক।