পদ্মার মর্জি অনুযায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে

জলবায়ু ও পানি গবেষক ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, পদ্মার গতিবিধিকে প্রধান্য দিয়ে গ্রহণযোগ্য প্রকৃয়ায় এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পৃথিবির সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মা। তাই পদ্মা সেতুতে নদী শাসনে আরো সময় লাগবে। মাওয়া অংশে পদ্মা কখোনো পশ্চিমে কখনো পূর্বে ধেয়ে আসে। এমন অনেক ঝুঁকিকে সামনে নিয়ে সর্বোচ্চ আন্তরিকতায় এ সেতু নির্মাণ হয়েছে। এর রক্ষণাবেক্ষণেরও করা হয়েছে কঠিন দলিল।
রোববার সকাল ১০টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত ‘পদ্মা সেতুর আর্থ সামাজিক তাৎপর্য’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতার এসব কথা বলেন ড. আইনুন নিশাত।
বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ কর্তৃক আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাক বিশ^বিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক এবং পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তিনি পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত থাকায় তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে পদ্মা সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। দক্ষিণাঞ্চল হবে শিল্পসমৃদ্ধ নগরী। যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল।
বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্সে মূখ্য আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ^বিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশীয় গবেষণা কেন্দ্রের খ্যাতনামা অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে. ভরদ্বাজ।
প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, পদ্মা সেতুর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে উন্নতির দিকে ধাবিত করবে। আগামীতে দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল হবে অন্যতম বানিজ্যিক ও শিল্প নগরী। এসময় তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
বক্তারা বলেন, পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের আমূল পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। তবে এ সেতু চালুর পর সমন্বিত প্রচেষ্টায় পরবর্তী জলবায়ু, নদির গতি, ফসলি জমি ও শিল্পায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে নিয়মিত গবেষণার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও পর্যটন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশ গুপ্ত। কনফারেন্সে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনফারেন্স আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অসীম কুমার নন্দী।
দিনব্যাপী আয়োজিত এ কনফারেন্সে পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক নিয়ে ২৩টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের বরেণ্য অধ্যাপক, গবেষক, সাংবাদিক, কলামিষ্টসহ বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক।