পন্য ও ওষুধের ভেজাল ঠেকাতে, কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

পন্য ও ওষুধের ভেজাল ঠেকাতে, কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

কথায় আছে ‘মানুষের নাম মহাশয়, যাহা সহায়, তাহাই সয়’। আসলে কি সব বিষয় ‘মানুষ’ সহ্য করতে পারে? আমরা বলি পারে না। কিন্তু কেউ কেউ বলেন, মানুষ পাথর খেয়েও হজম করে ফেলতে পারে। এই ধারণা থেকে ভেজাল তেল, জল মসল্লাদার খাবার বিক্রি হচ্ছে হামেসায় এবং আমরাও খেয়ে নিচ্ছি। এমনকি জীবন রক্ষায় তৈরি ওষুধেও ভেজাল দেওয়া হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ভেজাল খাবার, ভেজাল ওষুধ। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ পন্য বিক্রি হচ্ছে মহানগর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত। এখান থেকে মুক্তির পথ কি? কেবল ভ্রাম্যমান আদালত কিংবা জেল জরিমানা করে এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়াটা সহজ হবে না। এব্যাপারে পন্য ও ওষুধের ভেজাল ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষের জীবন রক্ষায় সচেতনতার পাশাপাশি ভেজাল পন্য ও ওষুধ সনাক্তকরণে সহজ উপায় থাকতে হবে।

ভেজাল খাবার ভেজাল পন্য এবং ভেজাল ওষুধ বিক্রি ঠেকাতে আমরা ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দেখি। অীভযানে কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা কিংবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার নজিরও দেখি। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন খুব একটা হচ্ছে না। তার কারণ সাধারণ ভোক্তারা জানেই না পন্যের মান সঠিক আছে কি না। কিংবা ওষুধের গুণগত মান সঠিক আছে কি না। কেবল বিএসটিআই এবং ওষুধ প্রশাসনের ওপর বিশ্বাস রেখেই পন্য ও ওষুধ সেবন করতে হচ্ছে। সাধারণ ভোক্তারা এব্যাপারে অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। ফলে অনেক সময ওষুধ ও পন্যের কারণে মৃত্যু হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আমরা চাই, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং পন্যের মান সম্পর্কে ভোক্তাদের বোঝার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তা না হলে আমাদের মুক্তি হবে না।

খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ কে করবে? ক্রেতা হিসেবে হয়তো মেয়াদোত্তীর্ণ বিষয়টি দেখে পন্য কেনা সম্ভব। কিন্তু প্যাকেটজাত খাবারের মধ্যে দেওয়া ভেজাল চিনবো কিভাবে?  সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ কিনতে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ বোঝা কিংবা দেখে নেওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ, বেশিরভাগ ওষুধের পাতায় প্রস্তুত এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সিল থাকে না। তাই সহজেই ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হন। যে ওষুধ ক্রেতা বাড়ি নিয়ে যান, সেই ওষুধে রোগ সারবে না কি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে সেটা বোঝা একেবারেই সম্ভব নয়। আবার চিকিৎসকের কাছে ওষুধের মান কিংবা গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে চাইলে চিকিৎসক রোগীর ওপর ক্ষেপে যান। ফলে চিকিৎসক এবং ওষুধ প্রশাসনের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এই ধারার পরিবর্তন হওয়া খুবই দরকার।

আমরা চাই, আমাদের চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে দেওয়া ওষুধ সম্পর্কে যেন একটা ধরণা দেন। একই সঙ্গে ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোরকেবল বক্সের গায়ে লিখে দেন। তারা যেন সকল ওষুধের পাতায় মেয়াদোত্তীর্ণ সিল দিয়ে দেন। আর ভোক্তা হিসেবে আমরাও যেন একটু সচেতন হয়ে পন্য কিনি এবং ওষুধ কেনার সময় মেয়াদ আছে কি না জেনে নেই। তাহলে আমাদের জীবনের ওপর নেমে আসা বিপর্যয় থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবো। সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার জন্য কেবল শহর নয়, গ্রামের বাজারগুলোও যেন তদারকির আওতায় আনা হয়।