পর্নোগ্রাফি আইন: উপস্থিত না থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কম সাজা দেওয়ায় রুল

পর্নোগ্রাফি আইন: উপস্থিত না থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কম সাজা দেওয়ায় রুল
পর্নোগ্রাফি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতে (ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত) জড়িতদের মাত্র একমাস করে কারাদণ্ড দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের যুগ্ম-বেঞ্চ এ রুল জারি করে। রুলে অনলাইনে অর্থের বিনিময়ে নগ্ন ভিডিও চ্যাটিং করায় গোদাগাড়ীর দুই নারীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ অর্থাৎ নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পর্নোগ্রাফি আইন অনুযায়ী শাস্তি না দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতে (ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত) জড়িতদের একমাস করে কারাদণ্ড দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলে তাও জানাতে চাওয়া হয়। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করা হয়। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মশিউর কবীর। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল হক টুটুল। রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, কোনো ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হলে তাকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি দেখে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ (শাস্তি প্রদান) করবেন। তিনি বলেন, অনলাইনে অর্থের বিনিময়ে নগ্ন ভিডিও চ্যাটিং করায় গোদাগাড়ীর দুই নারীসহ তিনজনকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা ঘটনার একদিন পর এবং তাদেরকে একমাস করে কারাদণ্ড হয়েছে। এটা মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) আইনের পরিপন্থী। অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে একটি রিট করা হয়েছিল। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ রুল জারি করেছেন। আইনজীবীরা জানান, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ এর ৮ এর (১) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করলে বা করার জন্য অংশগ্রহণকারী সংগ্রহ করে চুক্তিপত্র করলে অথবা কোনো নারী, পুরুষ বা শিশুকে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করলে অথবা কোনো নারী, পুরুষ বা শিশুকে প্রলোভনে অংশগ্রহণ করিয়ে তার জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থিরচিত্র, ভিডিও চিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করলে, তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৭ (সাত) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ঘটনায় জড়িতদের বাঁচানোর জন্য গ্রেপ্তার করার একদিন পর পুলিশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে এক মাসের সাজা দিয়ে দেয়। অথচ পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে শাস্তি হওয়ার কথা ৫ থেকে ৭ বছর। উল্লেখ্য, এর আগে গত ১০ মে ‘অশালীন ভিডিও চ্যাটিং তিনজনের কারাদণ্ড’ শিরোনামে দেশের জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। এতে বলা হয়, ৮ মে রাত ১১টার দিকে গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মেডিকেল মোড়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এরপর ৯ পুলিশ তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করে। পরে নির্বাহী হাকিম গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল আকতার তাদেরকে একমাস করে কারাদণ্ড দেন।