পাউবো’র দরপত্রে বিসিসি’র আপত্তি,বরিশালের সাত খাল পুনখনন নিয়ে প্রতিমন্ত্রী-মেয়র ঠান্ডা লড়াই

পাউবো’র দরপত্রে বিসিসি’র আপত্তি,বরিশালের সাত খাল পুনখনন নিয়ে প্রতিমন্ত্রী-মেয়র ঠান্ডা লড়াই

বরিশাল নগরীর ৭টি খাল পুনখনন নিয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সিটি মেয়রের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধিন পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরীর গুরুত্বপূর্ন ৭টি খাল পুনখননের দরপত্র আহ্বান করেছে। অপরদিকে এই কাজে আপত্তি তুলে প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে পাউবোকে চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এদিকে খাল পুনখননের দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস। সিটি করপোরেশনের আপত্তির বিষয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন তিনি। নগরীর ৪৬টি খাল পুনখনন ও সৌন্দর্য বর্ধনের একটি প্রকল্প একেনেকে পাশের অপেক্ষায় থাকায় বৃহত্তর স্বার্থে পাউবোর ক্ষুদ্র প্রকল্পে আপত্তি দেয়ার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র। 

৫৮ বর্গকিলোমিটার বরিশাল নগরী এলাকায় এক সময় প্রবাহমান ছিলো ৪৬টি খাল। সময়ের বিবর্তনে অধিকাংশ খাল ময়লা-আবর্জনা ফেলে এবং বেপরোয়া দখল করে দুষন করেছে দুই তীরের মানুষ। বটতলা খাল সহ অনেক খাল ভরাট করে নির্মান করা হয়েছে ড্রেন। এ কারনে একটু ভারী বৃস্টি হলেই পানি জমে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায়। সদর রোড, বগুড়া রোড সহ অলিগলিতেও পানি উঠে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরীর ৭ লাখ বাসিন্দা। 

বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘব সহ বরিশালের নির্মল চেহারা ফিরিয়ে আনতে ৪৬টি খাল পুনখনন, তীর সংরক্ষন এবং বিউটিফিকেশনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রেরন করে সিটি করপোরেশন। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রকল্প প্রেরন করা হলেও গত সাড়ে ৩ বছরেও প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়নি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। এতে নগরবাসীর অনেক চাপে রয়েছেন সিটি মেয়র। 

গত বছর বর্ষার সময় বরিশাল নগরীর গুরুত্বপূর্ন খালগুলো পুনখননের প্রতিশ্রুতি দেন সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ২৭ মার্চ প্রথম দিকে নগরীর জেলখাল, আমানগগঞ্জ খাল, পলাশপুর খাল, ভাটারখাল, সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল এবং রূপাতলী খাল খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করে বরিশাল পাউবো। ৭টি খাল পুনখননে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। 

এদিকে গত ১২ এপ্রিল পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মদ প্রেরিত এক চিঠিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল পুনখননের দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায়। চিঠিতে বলা হয়, পাউবোর আহ্বান করা ৭টি খাল পুনখনন করার তালিকায় থাকা সাগরদী খাল সিটি করপোরেশনের অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় পুনখনন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের অপেক্ষায় রয়েছে। কঠোর এবং কঠিন ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে পাউবোর খাল পুনখনন প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, সিটি এলাকায় কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহনে সিটি করপোরেশকে অবহিত করা বাঞ্চনীয়। পাউবো এই রীতি উপেক্ষা করেছে উল্লেখ করে আগামীতে কোন খালের কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহনের পূর্বে সিটি করপোরেশনকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। 

বরিশাল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, নগরবাসীকে দেয়া সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৭টি খাল পুনখননের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। এ অবস্থায় খাল পুনখননে সিটি করপোরেশনের আপত্তির বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে অবহিত করা হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষপ নেয়া হবে। 

নগরীর ৭টি খাল পুনখননে সিটি করপোরেশনের আপত্তির বিষয়ে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ৬ কোটি টাকায় ৭টি খাল পুনখনন হবে কিভাবে। খালের ময়লাও পরিস্কার হবে না। নগরীর ৪৬টি খাল অবৈধ দখলমুক্ত করে পুনখনন, তীর সংরক্ষন ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকের সবুজ তালিকায় রয়েছে। সিটি এলাকায় একই কাজের দ্বৈত প্রকল্প হলে সিটি করপোরেশনর বড় প্রকল্প বাতিল হয়ে যেতে পারে। নগররবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে পাউবো’র ছোট প্রকল্পে আপত্তি জানানোর কথা বলেন মেয়র। 

সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতা হয়। নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে প্রধান প্রধান খালগুলোর পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছিলো। সিটি করপোরেশন আপত্তির বিষয়ে জনগনের মতামত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রনালয়।