মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত বধ্যভূমি। আমাদের গৌরব ও অহংকারে মূর্ত প্রতীক, বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। আমাদের এই অর্জন ম্লান হচ্ছে প্রতিদিন। আমাদের বধ্যভূমির মর্যাদা রক্ষা হচ্ছে না। পদদলিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বরিশালের কীর্তখোলার পাড় ঘেঁষে তার আপন মহিমায় স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ আমাদের বধ্যভূমি। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বেড়াতে আসে এই বধ্যভূমি এলাকায়। কির্তনখোলার মুক্ত হাওয়ায় নিজেদের রিফ্রেশ করতে আসে অনেকে। নিজেদের রিফ্রেশ করতে এসে এরা ভুলে যায় আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা। এরা প্রতিদিন এদেশের লক্ষ মানুষের কষ্টার্জিত স্মৃতিকে কলুষিত করে চলেছে। পদদলিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক বধ্যভূমি। কেউ কেউ জেনে বুঝে করছেন। কেউ কেউ তো জানেই না বধ্যভূমি কি! অবাক করার মত বিষয় হলো, এরা কেউই কৃষক, জেলে, রিক্সা চালক, কিংবা দিনমজুর নয়। প্রত্যেকেই পড়াশোনা জানা আভিজাত্যপূর্ণ মানুষ।
বধ্যভূমি এলাকায় ফটোসেশনর জন্য কিংবা নদীর পাড়ে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে বধ্যভূমিতে এসে বসেন জুতা পায়ে। বধ্যভূমিকে অসম্মান করা যেন এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। বাদামের খোসা, চিপসের প্যাকেট কিংবা কোল্ডড্রিংক্সের বোতলে প্রতিদিন অপবিত্র হচ্ছে বধ্যভূমি। যদি আপনি নিজেকে থেকে বলতে যান এটার সম্পর্কে তবে তো হয়ে গেলো! পন্ডিত, শো অফ কিংবা ভন্ড দেশ দরদী তকমা লেগে যাবে মুহূর্তে। তবে কে এটার পবিত্রতা রক্ষা করবে। কে দেবে বাধা। কোন প্রশাসন কি এব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারে না।
বধ্যভূমি নিয়ে আন্দোলনে হয়েছে বহুবার। কখনো খাদ্য গুদাম, কখনো বা রেস্টুরেন্ট ব্যবসার নামে বধ্যভূমিকে কলুষিত করার চেষ্টায় মত্ত হয়েছেন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী। তবে বরিশালবাসী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বধ্যভূমকে রক্ষা করেছে বারবার। কিন্তু এর মর্যাদা রক্ষায় স্থায়ী কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এব্যাপারে আজ কেন শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না?
কেবল ১৬ ডিসেম্বর কিংবা ২৬ মার্চ এলে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্মৃতি স্তম্ভ রক্ষায় নানা উদ্যোগের কথা শোনা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়াও হয়। এর বাইরে সারা বছর অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভগুলো। এর পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষায় কোন উদ্যোগ থাকে না। বরিশালের বধ্যভূমিতে কোন সাইনবোর্ডও নেই। সাইনবোর্ড থাকলেও সাধারণ মানুষ বুঝতে পারত। কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ অনুরোধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের সূর্যসন্তানদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে কলুষিত হওয়া থেকে রক্ষা করুন।