পেঁয়াজ নিয়ে পেঁয়াজি বন্ধ করতে হবে

বছর ঘুরতে আবারো পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমূখি। ধাপে ধাপে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০টায় বিক্রি হচ্ছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করেছে এমন অজুহাতে বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার বলছে পেঁয়াজের যথেষ্ট জমুত আছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা স্বস্তি পাচ্ছে না। বেশি দামেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
পেঁয়াজের ঝাঁজ কমবে না বাড়বে সেটা জানতে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। সেই অপেক্ষার পালা গত বছরের মতো হতে পারে। আগেভাগে ব্যবস্থা নিয়ে হয়তো ভোগান্তি কমতে পারে। তবে পেঁয়াজ নিয়ে যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে অহেতুক বেশি পেঁয়াজ যাতে মজুত না করা হয় সেদিকেও নজরদারী বাড়াতে হবে। বাজার মনিটরিং এবং আমদানী নিয়ন্ত্রকদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যদিও সরকার খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। তারপরও পেঁয়াজ সিন্ডিকেট বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পেঁয়াজের ঝাঁজ এখন কেবল রান্না ঘরে আবদ্ধ নেই। পেঁয়াজ ঝাঁজ ছড়াচ্ছে সারা দেশে। কেবল দেশে কেন বলছি এই ঝাঁজ দেশ থেকে দেশদান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই ঝাঁজে সবার চোখ থেকে জল ঝরাচ্ছে। সেই জল রান্নাঘর থেকে বাজার, পাড়া-মহাল্লা, অফিস-আদালত এবং মন্ত্রণালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সবার মুখে একই কথা পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে। পেঁয়াজের ঝাঁজে যে কান্না শুরু হয়েছে তা বন্ধ করবে কে? আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় ৩০ ভাগ পেঁয়াজ কম উৎপাদন হয়। চাহিদার বাকি পেঁয়াজ আসে ভারত থেকে। গত বছরের মতো ভারত পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের বাজারে ঝাঁজ বাড়তে শুরু করে। তবে ভারতের নেওয়া সিদ্ধান্তে একদল ব্যবসায়ীর পোয়াবারো হয়। পেঁয়াজ মজুতদার ওইসব ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ঝাঁজ বাড়িয়ে চলেছে। সে যাই হোক পেঁয়াজের ঝাঁজ কমাতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এটা আমাদের প্রত্যাশা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, একই বছর আমদানি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন পেঁয়াজ। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ধারণা, প্রতিবছর চাহিদার ৬০-৭০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয়। বাকিটা আমদানি হয়। আমদানির প্রায় পুরোটার উৎস ভারত। ভারতমুখিতা কমাতে গত বছর মিয়ানমার, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানী করা হয়।
আমরা চাই, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যেন পেঁয়াজের ঝাঁজ না বাড়ে। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধন্তকে পূঁজি করে যেন দেশের বাজার অস্থিতিশলী না হয়। যারা সেই চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। কেবল ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমানো সম্ভব হবে না। বাজার স্থিতিশীল রাখতে টিসিবির পাশাপাশি আমদানির ক্ষেত্রেও নজরদারী বাড়াতে হবে। এই ক্ষেত্রে ভারতের দিকে তাকিয়ে না থেকে মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করতে হবে।