প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাজা ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে পাস হয়েছে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন ২০২৩ বিল’। প্রশ্নপত্র ফাঁস বাদে অন্যান্য অপরাধের সাজা হবে মোবাইল কোর্ট আইনে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সোমবারের বৈঠকে বিলটি সংসদে স্থিরকৃত আকারে পাস হয়।
বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনীগুলো কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। তবে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের একটি সংশোধনী গৃহীত হয়।
১৯৭৭ সালে প্রণীত বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্স রহিত করে নতুন এই আইনটি প্রণীত হয়। বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্সের অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এমনভাবে বহাল থাকবে, যেন এটি নতুন আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১ জন সভাপতি এবং ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে। কমিশন প্রজাতন্ত্রের জনবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান সাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও শর্তাবলি নির্ধারণ করতে পারবে।
বিলে প্রশ্নপত্র ফাঁস সর্ম্পকে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায় কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এই অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য হবে।’
এছাড়া সরকারি চাকরির পরীক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ ও তার সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার্থী না হয়েও নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হাজির করলে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
বিলে আরো বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষাসংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষ প্রতিস্থাপন করলে বা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত হয়নি, এ ধরনের উত্তর সংবলিত অতিরিক্ত পৃষ্ঠা কোনো উত্তরপত্রের সঙ্গে সংযোজন করলে তার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর, বই, লিখিত কাগজ, পৃষ্ঠা বা এখান থেকে কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করলে বা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে সহায়তা করলে তার দন্ড হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো পর্যালোচনা করে আইন আকারে বাংলায় প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্য পাবলিক এক্সামিনেশন (অফেনসেস) অ্যাক্ট কার্যকর আছে। এই আইনে পাবলিক পরীক্ষার সংজ্ঞায় পিএসসি আয়োজিত পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত নেই। পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে পিএসসি আয়োজিত পরীক্ষার মিল না থাকায় প্রস্তাবিত আইনে পিএসসির আওতায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষাসংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।