বই হোক তরুনদের পাথেয়

বর্তমান সময় বই বড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবার আঙুলের স্পর্শে চলে আসায় এই আগ্রহ আরো নি¤œমুখি হয়েছে। বিশেষ করে তরুন ও যুবকরা বই পড়া বলতে কেবল পাঠ্য বইকেই বোঝে। অথচ জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর জন্য যে বই মানুষের চোখ খুলে দেয় সেই বই পাড়ার প্রতি তরুনদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। কিন্তু গোটা বিশ^ চিনতে ও জানতে বইয়ের কোন বিকল্প নেই। বই আমাদের তরুনদের উন্নত মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে এবং রাখবে। তাই বই যেন তরুনদের নিত্য দিনের পাথেয় হয়।
এক সময় ব্যাপক প্রচারণা ছিল- বই কিনুন, বই পড়ুন, বই উপহার দিন। এখন এসব কেবল ইতিহাস। একটা প্রবাদ আছে, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়নি’। দেউলিয়া হয়েছে কি না সেটা খুঁজবে কে? যিনি বা যারা বই কিনবেন, তারা। এখন তো বই কিনছেই না কেউ। কেউ কিনছে না বললে আবার বই পাগলরা মনে কষ্ট পাবেন। একদল মানুষ আছেন যারা বইয়ের মধ্যেই থাকেন। কিন্তু সেই সংখ্যাটি অতি নগন্য। পুরো জনগোষ্ঠীর হিসেবে বই কেনা মানুষে সংখ্যার বিবেচনায় এমন মন্তব্য করা। তারপরও বই নিয়ে বিশেষ করে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা নিয়ে লেখনী অব্যাহত আছে। চলছে গল্প উপন্যাসসহ নানা বইয়ের সমাহার।
এই যে বই না কেনার ক্ষোভের কথা বললাম, তার মধ্যেও কিন্তু আশার সংবাদ আছে। তরুনপ্রজন্ম যখন বই বিমুখ তখন চলছে ব্যতিক্রমী আয়োজন। একটি বইয়ের বদলে একটি বই পাওয়া যায় এমন ঘটনা সত্যিই বিরল। বইয়ের বিনিময় বই পাওয়ার ঘটনা খুব একটা শোনা যায়? যায় না। না বই কেনা বেচার জন্য নয়। বই পড়–য়াদের জন্য এই আয়োজন। এই আয়োজন অবশ্যই প্রজন্মকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে। তরুনরা পাঠ্য বইয়ের বাইরে যদি ইতিহাস, ঐতিহ্য, গল্প-উপন্যাস না পড়ে তাহলে বিশ^ সম্পর্কে জানবে কিভাবে? তাই পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। সেজন্য অবশ্যই বাব-মাকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। কেবল জিপিএ-৫ পেলে সন্তান সত্যিার মানবিক গুণাবলীর মানুষ হতে পারবে না।
বলছিলাম বরিশালে ‘গ্রন্থবিদ’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বই পরিবর্তন করে বই পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির গল্প। বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বসেছে এমন নান্দনিক আয়োজন। পৃথিবীতে প্রথম ইংল্যা-ে আয়োজন করে সাড়া ফেলে সেখানের একদল নাগরিক। ৫০ হাজার বই নিয়ে তারা এই যাত্রা শুরু করে। আর এই উদ্যোগ দেখে বাংলাদেশের তরুনরাও আগ্রাহী হচ্ছে। অবশ্যই এটা আশা জাগানিয়া ঘটনা। বাংলাদেশে ঢাকা এবং খুলনায় একই আয়োজন চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশালেও কিছু উদ্যমী তরুণ ‘গ্রন্থবিদ’ নাম দিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন শুরু করেছে। প্রথমে তারা মাসে একদিন বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এই কর্মসূচি পরিচালান করছে। আগামীতে জনবল এবং সামর্থ অনুযায়ী কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো হবে। আমরা এই তরুনদের উদ্যোগকে সাদুবাদ জানাই।
এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা শেখ শামিম জানিয়েছেন, পৃথিবীতে প্রথম ইংল্যাল্ড এমন আয়োজন করে সাড়া ফেলেছে। বাংলাদেশে ঢাকা ও খুলনার পর তৃতীয় আয়োজন হচ্ছে বরিশালে। এখানে এন্ট্রি ফি হচ্ছে বইয়ের ভালোবাসা। একটি বইয়ে বিনিময় একটি বই নিয়ে যাওয়া। শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বরিশাল সব বয়সের মানুষের ভীড় ছিল পুরো কর্মসূচিতে।
বরিশালের আয়োজনে গল্প উপন্যাশ এবং একাডেমিক দুই ধরণের বই নিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়েছে। কোন ধরণের আর্থিক লেনদেন নেই এই কর্মসূচিতে। নেই এন্ট্রি ফিও। এখানে এসে বুথে প্রথম বই জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। একাডেমিক বই দিয়ে একাডেমিক বই নিতে পারবে। আর গল্প উপন্যাস জমা দিয়ে গল্প উন্যাস নিতে পারবে। এক ঘন্টার পর ম্যাসেস দিয়ে জানানো হবে কতটা বাই তিনি জমা দিয়েছেন এবং কতটা বই নিয়েছেন।
যখন গোটা দুনিয়ায় পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়ার হার কমে যাচ্ছে, সেই সময় তনরুনদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। মনে রাখার মতো। এই তরুনরাই বাংলাদেশ। আমরা বিশ্বাস করি আবারো এই উদ্যোগের মাধ্যমে তরুনরা বই পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠবে। বই-ই হবে তরুনদের আলোকিত মানুষ হওয়ার পাথেয়।