বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করতে হবে

‘একটি ডাকে এতগুলো প্রাণ দিয়েছে সাড়া, ভূমিকম্পের দৈত্যপূরিকে দিয়েছে নাড়া...’। মাত্র একটি ডাক ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ডাক আজ আকাশে-বাতাসে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলছে। জাদুমন্ত্রের মতো সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কেবল ঝাঁপিয়ে পড়েনি, পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে শসস্ত্র সংগ্রাম করে লাল-সবুজের মানচিত্রের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপ দিতে কাজে লেগে পড়েন। বাংলাদেশ প্রগতির পথে হাঁটা শুরু করে। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নির্মম হত্যাকা- চালিয়ে সোনার বাংলার স্বপ্ন বাংলার সবুজ জমিনে মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার কারণে বাংলা মায়ের মুখ মলিন হয়ে যায়। নীল আকাশ মুহূর্তে কালো আভায় ছেয়ে যায়। যারা জাতির পিতাকে হত্যা করতে পারে, তারা কখনোই স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ হতে পারে না। যারা পিতাকে হত্যা করতে পারে লাল-সবুজের মানচিত্রে তাদের ঠাঁই হতে পারে না। এই নরপিশাচদের শাস্তি দিলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে হলে কেবল শোক নয়, সেই সঙ্গে শক্তি সঞ্চয় করে ২০২১, ২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সেজন্য আমাদের বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করতে হবে। তাঁর আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের এখন দায়িত্ব হচ্ছে সেই কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ মাত্র একটি ডাক। যে ডাকের ধ্বনি ৫৬ হাজার বর্গমাইল ছাড়িয়ে গোটা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ডাক দিয়েছিলেন ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সাত কোটি বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তি সংগ্রামে। বঙ্গববন্ধুর ওই গগণবিদারী আহ্বানে তিনি গোটা জাতির অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। জীবীত মুজিব যেমন বাঙালি জাতিকে সামনে চলার পথ দেখিয়ে গেছে, তেমনি মৃত মুজিব আমদের শক্তি যোগাচ্ছে। তাই আগস্ট মাস কেবল শোকের নয়, আগস্ট আমদের অনবদ্য এক শক্তির নাম। সেই শক্তির বীজ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে প্রোথিত করে দিতে হবে।
আজ আগস্টের কথা উঠলেই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে নানা স্মৃতি। যে স্মৃতি আমাদের নিয়ে যায় ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৮ পাকিস্তানের উর্দু চাপিয়ে দেওয়া, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর মহান মুক্তি সংগ্রামের দিকে। এতো এতো ঘটনার সঙ্গে অনুঘটক যিনি তিনি হচ্ছেন আমাদের লাল-সবুজের বাংলাদেশের নির্মাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির ক্রান্তিকালে যিনি দেশমাত্রিকার শৃঙ্খল মুক্ত করার জন্য যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট মধ্যরাতের পর মূল ষড়যন্ত্রকারী সেনাসদস্যরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ আত্মীয়-স্বজনদেরও নির্মমভাবে হত্যা করে।
বাঙালি জাতির গর্ব ও অহংকারের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি আমাদের পরাধীন পাকিস্তানের যাতাকল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। যিনি আমাদের জাতীয় পতাকা দিয়েছেন, দিয়েছেন জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ সেই দেশমাতৃকার মলিন মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব আমাদের। মুজিব বর্ষ এবং শোকের মাস আগস্ট যেন আমাদের যেন সেই দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে।