বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘দেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত। এক দিকে এক শতাংশ লুটেরা ধনিকগোষ্ঠী, অন্য দিকে ৯৯ শতাংশ শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষ। আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে ৯৯ ভাগ মানুষকে দেশের ৯৯ শতাংশ সম্পদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া’।
তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ ৯৯ ভাগ মানুষের সম্পদ লুটেপুটে খাবে, সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে, এটা মেনে নেব না। সাধারণ মানুষ শোষিত হচ্ছে, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের আইন-কানুন, সুযোগ-সুবিধা সব গরিবের বিরুদ্ধে। এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে’।
সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা এখন একত্রিত হয়েছে লুটপাটে। বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে’।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম রবিবার বিকালে সিলেটে সিপিবির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
নগরীর কিনব্রিজ মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন সুমন।
সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষার আন্দোলনে অবতীর্ণ হচ্ছি। তাই কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে এসেছি। আমরা একদিন পাকিস্তান সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষা করতে সংগ্রামে নেমেছিলাম, আপনারাও নেমেছিলেন জান বাজি রেখে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সবাই মিলে দেশকে মুক্ত করেছি। কিন্তু আজকের দেশ কি ১৭ কোটি মানুষের জন্য মুক্ত? না, সবার জন্য মুক্ত হয়নি। দেশকে সবার জন্য মুক্ত করতে হবে’।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, আব্দুল্লাহ কাফি রতন ও কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সম্পাদক জলি তালুকদার।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন, হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান, সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম খোকা, সিপিবি ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেল, সিপিবি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেশ ঘোষ বলু, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ প্রমুখ।
সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরো বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনছে। সরকারি দলের লোকজন সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে জুয়া খেলছে। এদের রুখতে হলে বাম কমিউনিস্টদের একত্রিত হতে হবে। সবাইকে এক কাতারে আসতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে গ্রামে- গ্রামে, সারা দেশে স্থানীয় ও জাতীয় দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মিসূচি গ্রহণ করতে হবে’।
সিপিবির এ নেতা বলেন, ‘৫০ বছর যাবত আওয়ামী লীগ-বিএনপির অপশাসনের সঙ্গে দেশের মানুষ সামরিক শাসনও দেখেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুটোই বুর্জোয়া লুটেরা দল। এদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন নিরাপদ নয়। এদের মাধ্যমে গরিব-মেহনতি মানুষের মুক্তি আসবে না’।
সেলিম বলেন, ‘ব্যাংকগুলো থেকে অবাধে টাকা লোপাট হচ্ছে। লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে জমা রাখছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে। বিদেশে সম্পদ পাচার বন্ধ করার জন্য একাত্তর সালে অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিসংগ্রাম করা যদি ন্যায়সঙ্গত হয়ে থাকে, বাংলার সম্পদ বাংলায় রাখার জন্য একইভাবে মুক্তিসংগ্রামের নতুন অধ্যায় রচনা করা জনগণের আশু কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে, একটি সুখী- সমৃদ্ধশালী, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে একযোগে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া মুক্তির আর কোনো বিকল্প নেই’।
সমাবেশের শুরুতে উদীচী সিলেট ও সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, সিলেটের শিল্পীরা গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।