বন্ধ হলো রাতারগুলের ওয়াচ টাওয়ার

বন্ধ হলো রাতারগুলের ওয়াচ টাওয়ার

সিলেটের জলাবন রাতারগুলের নড়বড়ে ‘ওয়াচ টাওয়ার’ পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় টাওয়ার ওঠানামা পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুঁকির বিষয়টি মাথা নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে বন বিভাগ টাওয়ারটিতে ওঠানামা না করতে নির্দেশিকা টানালেও সেটি মানছিলো না পর্যটকরা।

এমন পরিস্থিতিতে রোববার থেকে টাওয়ারে ওঠার মুখে বেড়া দিয়ে ওঠানামা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের উপ-বন সংরক্ষক এস.এম. সাজ্জাদ হোসেন।

তিনি জানান, ওয়াচ টাওয়ার পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে টাওয়ারটিতে ওঠানামায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা যদি বলেন মেরামতের মাধ্যমে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব, তাহলে সংস্কার করা হবে। পরবর্তীতে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ছয় মাস রাতারগুলে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ ছিলো। তখনই ওয়াচ টাওয়ারটির নড়বড়ে অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি ফের পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হলে ওয়াচটাওয়ারে ওঠানামার ক্ষেত্রে সতর্কতার একটি নির্দেশিকা সেখানে সাঁটানো হয়। কিন্তু এ নির্দেশনা না মেনে একসঙ্গে একাধিক পর্যটক সেখানে ওঠানামা করায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে ওয়াচ টাওয়ারটি নির্মাণকালেও এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদী নেতারা।

এ ব্যাপারে ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’র সমন্বয়ক আশরাফুল কবির জানান, ওয়াচ টাওয়ারটি নির্মাণকালের শুরুতেই এটি অপরিকল্পিত মনে হয়েছে। যেখানে ঝুঁকির বিষয়টি শুরু থেকে ছিলোই। তাছাড়া বিস্তীর্ণ জলাবন রাতারগুলে এটি নির্মাণ হলে পর্যটকদের এককেন্দ্রিক যাতায়াতে বন্য প্রাণিদের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কাও ছিল। সব মিলিয়ে শুরু থেকে আমরা সংশ্লিষ্টদের বলে আসছিলাম। দীর্ঘ ৬ বছর পরে এটিই প্রমাণিত হলো- আমাদের দাবিটাই সঠিক ছিল।

দেরিতে হলেও ওয়াচ টাওয়ারটিতে ওঠানামায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল জলাবনটিকে ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ। রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সমৃদ্ধ জলার বন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচ-বরুণগাছের পাশাপাশি বেত, ইকরা, খাগড়া, মূর্তা ও শণজাতীয় গাছ রাতারগুলকে জলার বন হিসেবে অনন্য করেছে।

বনে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। এই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জাতীয় উদ্যান পরিকল্পনার আওতায় ওয়াচটাওয়ার নির্মাণসহ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে রাতারগুলে ওয়াচটাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়।