বন্ধ হোক বহুমাত্রিক শিশু নির্যাতন

বন্ধ হোক বহুমাত্রিক শিশু নির্যাতন
‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুদের অন্তরে।’ কিন্তু নানা কারণে শিশুদের অন্তর পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে কিংবা আমরাই ছাই করে দিচ্ছি। সেই ছাইয়ে কেবল পানি দিলে হবে না। শিশুদের আগামীর কা-ারী করতে হলে শিশু নির্যাতন বন্ধ করতেই হবে। কোন অজুহাতেই শিশু নির্যাতন করা যাবে না। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ। শিক্ষক, গৃহকর্তা-কর্তৃ, কর্মক্ষেত্র, পথে-প্রান্তরে ঘটেই চলছে শিশু নির্যাতনের ঘটনা। গণমাধ্যমকর্মীরাও প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই শিশুদের প্রতি একধরণের নির্যাতন করেন। সারা দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে। ঠুনকো অভিযোগে পিটিয়ে নির্যাতন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্যাতান ও হত্যা, শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা। গরম খুন্তি দিয়ে স্যাঁকা দেওয়াসহ শিশু নির্যাতনের বহুমাত্রিক ঘটনা ঘটছে। তবে শিশু এবং শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে বেশি যুক্ত হচ্ছেন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও মক্তবের শিক্ষকরা। শিশু নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনায় আমরা বিব্রত। সবশেষে গতকাল পটুয়াখালি জেলায় চুরির অভিযোগ দিয়ে ১৩ বছরের শিশু সুমনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষক আহসান উল্লাহ। অমানবিক ওই দৃশ্য যারা দেখেছেন তারা হতবাক হয়েছেন। একই সঙ্গে ধিক্কার জানিয়ছেন ওই শিক্ষকের প্রতি। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি কারাগারে আছেন। এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শিশু নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করতে সরকার ও সবার সঙ্গে সমানতালে কাজ করে চলেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু শিশু নির্যাতনের ঘটনা তুলে আনতে গিয়ে আমরা গণমাধ্যমকর্মীরাও একধরণের নির্যাতন করি। আমরা অযান্তেই এই নির্যাতন করে থাকি। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে তথ্য আনতে গিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করি। এটা আমাদের করতেই হয়। করা উচিতও। কিন্তু নির্যাতনের চিহ্ন পাঠকের সামনে তুলে ধরতে কখনো কখনো অতিমাত্রায় উদ্যোগী হই। নির্যাতনের শিক্ষা শিশুর শরীর থেকে যেভাবে পোশাক সরিয়ে ছবি তোলা হয় সেটাও এক ধরণের নির্যাতন। গতকালের শিশু সুমনের ছবি তুলতে গিয়ে এক সংবাদকর্মী সেই কাজটি করেছেন। যা শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও বেশি। প্রতিটি শিশুর আত্মমর্যাদা আছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। তাই শিশুদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে সংবাদকর্মীদের আরো বেশি সংবেদনশীল হওয়া দরকরা। যদিও আমরা সেটা মানতে চাই না। আমি সংবাদকর্মী আমার দায়িত্ব হচ্ছে পুরো নগ্ন করে নির্যাতনের চিহ্ন দেখিয়ে বাহবা নেওয়া। আমার বাহবাহ শিশুকে আর একবার নির্যাতনের মুখে ফেলতে পারে সেটা মানতে চাই না। একই সঙ্গে বিভৎস ছবি ছাপিয়ে পাঠকের আতঙ্কের কারণ হতে পারে সেটাও মানতে রাজি না। বহুমাত্রিকর শিশু নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করতে যেমন মানুষ হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। তেমনি দেশের আইন অনুযায়ী শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দিতে হবে। সরকার শিশু নির্যাতনের ঘটনায় শূন্য সহিষ্ণু নীতি অবলম্বন করছে। তারপরও নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতন হতে হবে শিক্ষক, বাবা-মা, পরিবার, সমাজ এবং রাস্ট্রকে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদেরও সচেতন হতে হবে। সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনে শিশু, নারীদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। তাহলে সব শিশুদের অন্তরের পিতা কিংবা অভিভাবক আাগামীর বাংলাদেশ গড়ার কাজে লাগতে পারবে।