ববিতে ছাত্র নামের নেতাদের আধিপত্য বন্ধ হোক

ববিতে ছাত্র নামের নেতাদের আধিপত্য বন্ধ হোক

বুধবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীদের হাতে স্বর্ণ পদক তুলে দিয়েছেন। বরিশাল  বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক জয়ের গৌরবময় অর্জন করেছে। বরিশাল  বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করায় যখন এই সেরা পাঁচ শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া স্বর্ণপদক গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তার ১২ ঘন্টা আগে বরিশাল  বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী অন্য চার শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম করেছে। যখন আমরা দেশে বরিশাল  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গৌরব ও মর্যাদার গল্প করবো, সেই সময় আমদের গৌরব ও মর্যাদাকে পদদলিত করে দিল আরেক দল শিক্ষার্থী। এই দুঃখের কথা কোন মুখে বলি। ছাত্রলীগ নামধারী একটি পক্ষ তাদের প্রভাব ও আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে অন্য পক্ষের ওপর হামলা চালালো। কুপিয়ে জখম করা হলো চার শিক্ষার্থীকে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ছাত্র সংগঠন কিংবা অন্য যে কোন অজুহাতেই ছাত্রদের ওপর ছাত্রদের হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। ছাত্র নামের নেতাদের এই আধিপত্য বন্ধ হোক।

বরিশাল  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক জয়ে আমরা আনন্দিত। একই সঙ্গে স্বর্ণপদকজয়ী শিক্ষার্থীদের সহপাঠীর হাতে সহপাঠী জখমের ঘটনায় আমরা ব্যথিত হয়েছি। স্বর্ণপদক জয়ে শিক্ষার্থীরা যখন উজ্জীবীত হবে, সেই সময় নেতিবাচক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার এবং হামলার ঘটনায় আমাদের ভেতরে এখন নানা প্রশ্ন উকিঁ দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা কি মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে? এরা কি সত্যিকার শিক্ষিতি মানুষ হতে পারবে? এরা কি আমাদের লাল-সবুজের মানচিত্রে কালিমা মেখে দেবে না তো? এরা দেশের সম্পদ হবে না কি শিক্ষিত বোঝায় পরিণত হবে। এমনসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনের কষ্ট কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সরকারি একটি  বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা যাচাই করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়। এই শিক্ষার্থীরা সরকারি সকল সুবিধা ভোগ করে। সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘামের পয়সায় এসব শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার খরচ চলে। যারা সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, সেই সব শিক্ষার্থীদের একটু বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার খরচ জানতে অনুরোধ করবো। আমরা শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠা দেখতে চাই। কোন দলবাজি এবং হামলা, মারামারি দেখতে চাই না।

আমরা বলতে শুনি, বরিশাল  বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নেই। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলে উল্টো কথা। বলা হয় ছাত্র রাজনীতি নেই, কিন্তু রাজনীতির নামে শ্লোগান, মিছিল, মিটিং সবই চলে। তাহলে কেন মিথ্যে বুলি দেওয়া হচ্ছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। আমরা মনে করি  বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র রাজনীতি সরবভাবেই থাকা উচিত। কিন্তু সেই ছাত্র রাজনীতির নামে অবশ্যই কোন আধিপত্য বিস্তার কিংবা ছাত্রদের মারধর, হামলা, কুপিয়ে জখমের ঘটনা দেখতে চাই না। একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি তুলে ধরবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তেমনটা আমরা লক্ষ্য করি না।

আমরা দেখি বিশেষ একটি ছাত্র সংগঠনের নামে ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপরও প্রবাব বিস্তার করে চলে। আবার অনেক শিক্ষক আছেন, যারা এসব শিক্ষার্থীদের কাছে রাখতে চান কিংবা তাদের পক্ষ অবলম্বন করেন।  বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক কেবল ছাত্র-শিক্ষকই হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর বাইরে কোন সম্পর্ক হলে সেটাই আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। ফেলে দেয় বলছি কেন? ইতিপূর্বে বরিশাল  বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেলে দিয়েছে। সেখান থেকে অনেক কষ্টে আবারো ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে  বিশ্ববিদ্যালয়। সেই পথ যখন সুগম হচ্ছিল, ঠিক তখনই আবার বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিল ছাত্র নামের দলকানারা। এদের ব্যাপারে আমাদেরন সতর্ক হওয়া দরকার।

আমরা চাই, বরিশাল  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন শিক্ষায় স্বর্ণপদক জয় করেছে, তেমনি বাংলাদেশ বিনির্মাণেও কাজ করবে। তারা বাংলাদেশকেও জয় করবে। বাংলাদেশ জয় করে তারা  বিশ্বের বুকে বরিশাল তথা বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবে। সকল অশুভ চিন্তা দূর করে আমাদের প্রাণের শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় মনযোগী হোক। ছাত্র সংগঠনের নামে তাদের প্রভাব যেন কখনো মূখ্য হয়ে না দাঁড়ায়। তারা যেন এই উক্তিকে ধারণ করে ‘বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র’।