বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বেহাল দশা, যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই ব্যবহার
প্রায় ১২ লাখ মানুষের বসবাস বরগুনায়। করোনার প্রাদুর্ভাব ছাড়াও জেলায় নিয়মিত বাড়ছে স্বাভাবিক রোগীর সংখ্যা। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে রোগী বাড়লেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। শুধু চিকিৎসক সঙ্কট নয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবসহ রয়েছে নানা সমস্যা। এসব সঙ্কট কাঁধে নিয়েই মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো।
তবে হাসপাতালে শূন্যপদ গুলো পূরণ করতে ও সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনা জেলার মানুষের সেবা দিতে সদরে ১০০ শয্যা থেকে উন্নতি করে ২৫০ শয্যা হাপাতাল তৈরি হলে চালু হয়নি এখনো। এ হাসপাতালে ১৯ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩ জন। এবং ২১ কনসালট্যান্ট থাকার কথা থাকলে আছে ২ জন নেই রেডিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্ট। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, গাইনী, ইএনটিসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক না থাকায় রোগী আসলেই রেফার করা হয় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ডাক্তার দেখাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হয় টিকিট। চিকিৎসক পর্যন্ত যেতে প্রতি রোগীর সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। রোগীর ভিড়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খান চিকিৎসকরা। এর ভেতর ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের হয়রানিও চরমে। এছাড়া এসব বিষয়ে খবর সংগ্রহে বাধা দেয়াও এখানে নিয়মিত ঘটনা।
জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গুরুতর রোগীরা অর্থোপেডিক, মেডিসিন, সার্জারি, অ্যানেস্থেশিয়া, রেডিওলজি, ইউনানি, ডেন্টাল ও প্যাথলজির, চক্ষু ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাবের কারণে চিকিৎসা নিতে পারছেন না।
এদিকে, করোনার নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা নিয়েও রয়েছে ভোগান্তি। করোনা রোগীদের জন্য ৫০ বেডের ব্যাবস্থা থাকলেও পরিপূর্ণ সেবা না পাওয়ায় অনেকেই থাকেন হোম আইসোলেশনে। পুরো জেলায় আইসিইউ নেই একটিও। রয়েছে নানা যন্ত্রপাতির অভাবও।
জেলা সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচ তলায় রেডিওলজিস্ট নাথাকার কারনে এক্সরে রুমের ভিতরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন এবং আরও দেখা যায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ না থাকায় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটারের এক কোনায় পরে রয়েছে চক্ষু পরিক্ষা করার মেশিন। জেলার প্রতিটি উপজেলার একই অবস্থা।
আলট্রাসনোলজিস্ট নেই এমন অজুহাত দেখিয়ে মূল্যবান এই মেশিনটিকে ফেলে রাখা হয়েছে। রোগীরা হাসপাতালের বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বেশি টাকা খরচ করে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে আর্থিক ক্ষতিসহ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো: সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের পর্যপ্ত চিকিৎসক না থাকার কারনে চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে এবং আমাদের এখানে একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও একজন গাইনি ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন রেডিওলজিস্ট না থাকার করনে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন চালুর ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা। যন্ত্রপাতি কেনাকাটার বিষয় তিনি বলেন, আমরা কোন যন্ত্রপাতি ক্রয় করি না। মন্ত্রনালয় চাহিদা পাঠিয়ে দেই তারা মালামাল পাঠিয়ে দেয়।