বরগুনায় ‘জাগরণীর’ সহায়তা পেল শিল্পি আক্তার

বরগুনায় পুলিশের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সংসার থেকে বিতাড়িত অসহায় নারীরা মামালা মোকাদ্দমা ছারাই ফিরে পাচ্ছেন হারানো স্বপ্নের স্বামী-সংসার। বরগুনা পুলিশ সুপার পরিচালিত ‘জাগরণীর’ নারী সহায়তা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে স্বামীর পরিবার থেকে ঠাঁই হারা নির্যাতিত অনেক নারী তাদের স্বামী-সংসার ফিরে পেয়ে এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন জীবন গড়ার ।
নির্যাতিত অসহায় শিশু ও নারীদের আইনি সহায়তাসহ সকল সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বরগুনা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ‘জগরণী’ নামকরণে নারী সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়। দাম্পত্য কলহসহ নির্যাতিত ও স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত নারীদের অনেকেই এখন প্রতিকার পেতে দ্বারস্থ হচ্ছেন পুলিশ সুপার পরিচালিত ‘জাগরণী’ নারী আইনি সহায়তা কেন্দ্রে। স্বামী ও তার পরিবার থেকে চরম নিগৃহীত গৃহবধূ মোসাঃ শিল্পী আক্তার প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি ১২ মার্চ ২০১৯ তারিখ বরগুনা পুলিশ সুপার বারাবর অভিযোগ দাখিল করলে বরগুনা পুলিশ ‘জাগরণী’ নারী সহায়তা কেন্দ্রের ইনচার্জ এস.আই. জান্নাতুল ফেরদৌসকে দায়িত্ব দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে লিখিত নোটিস পাঠিয়ে শিল্পির স্বামী জয়নাল আবেদীন, ও শ্বশুর আব্দুর রবসহ দুই পক্ষের অভিভাবকদের তলব করে সর্বশেষ গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ ‘জাগরণীর’ নারী সহায়তা কেন্দ্রের ইনচার্জসহ উভয় পক্ষের এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তির উপস্থিতি বৈঠকে তাদের সাত/আট বছর বিরাজমান দাম্পত্য দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসন হয়। বৈঠকে অভিযুক্ত স্বামী জয়নাল আবেদীন নিজের ভুল স্বীকার করে উভয় পক্ষের সম্মতিতে আগের বিবাহের সময় তার ধার্যকৃত দেনমহর ১,০০০০০ (এক লক্ষ টাকা) কে বাড়িয়ে নতুন ৫,০০০০০ (পাচঁ লক্ষ) টাকা কাজির মাধ্যমে বর্ধিত কাবিন করে স্ত্রী শিল্পি ও একমাত্র সন্তান আবদুল্লাহ (৮) কে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে এবং ভরন পোষন দিবে এই বলে মীমাংসাপত্রে অঙ্গীকার করেন।
বরগুনা সদরের পূর্ব কেওড়াবুনিয়ায় অবস্থিত স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত গ্রহবধূ শিল্পি আট বছর বয়সী ছেলে আবদুল্লাহকে নিয়ে গত সাত বছর আগে আশ্রয় গ্রহণ করেন আপন বড় ভাই মোঃ এনায়েত গাজীর বাসায়। পুলিশের হস্তক্ষেপ ও ‘জাগরণী’ নারী সহায়তা পেয়ে গৃহবধূ শিল্প সন্তোষ প্রকাশ করেন। অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে তিনি এখন জীবনের নতুন স্বপ্ন দেখছেন। নির্যাতিত নারীদের সেবা প্রদানে বরগুনা পুলিশের মহতী এ উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান।
এ বিষয় বরগুনা পুলিশ ‘জাগরণী’ নারী সহায়তা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস.আই. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, নির্যাতিত নারীদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার পর তাদের প্রত্যেকের স্বামীসহ পরিবারের অভিযুক্ত অন্যান্যদের লিখিত নোটিস পাঠিয়ে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে প্রথমে দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে মীমাংসা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে মামলা রুজুসহ বাদীকে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা খরচে দেওয়া হয় আইনগত সহায়তা।
গত তিন মাসে বরগুনা ‘জাগরণী’ নারী সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ দাখিলকারী ৫০ জনের বেশী নারীর দাম্পত্য কলহ আপোষ-মীমাংসা হওয়ায় তারা ফিরে পান হারানো সংসার ও স্বাভাবিক জীবন। এ ছাড়া আরো ৩৮ অভিযোগ চলমান এবং দুইটি অভিযোগ আদালতে গড়িয়েছে।
বরগুনা পুলিশের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে এ অঞ্চলের নির্যাতিত অসহায় নারী ও শিশুদের জন্য ‘জাগরণী’ নারী সহায়তা কেন্দ্রটি একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে এখানকার সাধারন মানুষ জানান।