বরিশাল আবার হয়ে উঠবে হিরন্ময়,হবেই হবে দেখা বিজয়ে

বরিশাল আবার হয়ে উঠবে হিরন্ময়,হবেই হবে দেখা বিজয়ে

 

বরিশাল সিটি করপোরেশান নির্বাচন এসেছে দুয়ারে। দারুন চাঙ্গা শহর। অজ¯্র প্রার্থীদের প্রত্যাশা আর প্রতিশ্রুতিতে তিক্ত বিরক্ত আর বোধ করি একধরণের আনন্দেও আছি আমরা। শব্দ দুষনের মাত্রা নির্নয়ের যন্ত্র এই মুহূর্তে বধির। আইন শৃঙ্খলার বিষয়টি এখন দেশের নুতন বিরোধী দল আমেরিকার মতো। একটার পর একটা স্যাংকশন দিয়ে চলেছে। কে মানছে আর কে মানছেনা সেটা মনে হচ্ছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে আইন শৃঙ্খলা অবনতির আপাতত কোন আলামত প্রকাশ্যে মিলেছে না। কারণ স্পষ্ট। সকল প্রার্থীরাই এখন জানে তার বিজয় নিশ্চিত। রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি সর্বত্র পোস্টার আর ব্যানার। খুব সময় নিয়ে না খুঁজলে আকাশের দেখা মেলাই ভার। তার সকল পথ আটকে দিয়েছে নৌকা, ঘড়ি, লাঙ্গল, হাত পাখা। সঙ্গে আছে মই, টিফিন কেরিয়ার, বই। আছে মিষ্টি কুমার সহ চশমা, আনারস, বেহালা ইত্যাদি। এই সকল প্রতীক এখন সমগ্র আকাশ ঢেকে দিয়ে বাতাসে উড়ছে।

সময় যতো গড়াচ্ছে সঙ্গে দুরু দুরু দুলছে প্রার্থীদের হৃদয়। ছুটছে তারা দ্বারে দ্বারে ভোটারের। চাইছে ভোট আর সঙ্গে কেনই যেন চাইছে দোয়া যা তাদের প্রয়োজন নয় একেবারেই। তবু ভোটের সৌন্দর্য না কি হচ্ছে দোয়া চাওয়া, তাই চাইছে। যদিও ভোটারদের উচিত অথবা ভাবনাটা অনেকটা এরকম। ঠিক আছে চাইছে যখন ভোটটা দেই, দোয়াটা থাকুক নয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে দুটোই যাবে। যদিও ইতিমধ্যেই গেছে অনেক কিছুই। যা প্রাসঙ্গিক নয় একেবারেই। তার পরেও নির্বাচন বলে কথা। এখন অনেক কিছুই চলে। মাস্তান, ধর্ষক, চাঁদাবাজ, নেশাখোর তাদের সবার চরিত্র ভোটের রাজ্যে ফুলের মতো পবিত্র! ভোটের মাঠে দিদিরা সবই আপা হয়ে কৃপা চাইছেন আল্লাহ্র। বাদ নেই যার মার্কা বেহালা সেও। তাকেও বলতে হচ্ছে ‘আল্লাহ্ যদি সহায় হয় বেহালার হবেই জয়।’ অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় এই দেশে ক্ষমতার লোভ সবাই এখন মহান আল্লাহ্র কৃপা প্রার্থী। জানি বলি মানতেও চেষ্টা করি। ‘আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ্ সর্ব শক্তিমান’ তাই বলে ঘটি, লোটা, বাটি সবাইকে বিজয়ী করা কি আল্লাহর পক্ষেও সম্ভর?
তাছাড়া আমাদের আল্লাহ্ এবং প্রিয় রাসুল(সঃ)কে তো নির্দিষ্ট করেই ফেলেছে একজন প্রার্থী। প্রকাশ্যে জিনি বলে চলেছেন তাকে ভোট দিলে, সে ভোট পৌঁছে যাবেই রাসুলের দরবাওে, খুশি হয়ে যাবেন মহান আল্লাহ্। ঠিক জানি না এমন ঔদ্ধত্বপূর্ণ কথার পরে মহান আল্লাহ্র তরফ থেকে তার জন্য কি শিক্ষা অপেক্ষা করছে? বিজয় নাকি পরাজয়? হয়তো আমরা দেখব তার নির্বচনী প্রচার ব্যাহৃত শব্দ যন্ত্রহীন ‘লোকে বলে বলেরে ঘর বাড়ি বালা নাই আমার’ গানের এই প্যারডি। নির্বাচন শেষে দেখতে পাবো জনগণ গাইছে এই গানেরই পরের অংশ ‘কি ঘর বানাইলা তুমি শুন্যেরও মাঝার লোকে বলে বলেরে।’ গাইতে শুরু করেছে। 

চারিদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় সর্বত্র একসময়ের সিনেমার অত্যন্ত জনপ্রিয় গানের প্যারডি দারুন চলছে। চলছে অসাধারণ সুরে, ছন্দের, শ্লোগান। ‘আল্লাহ্ তুমি সহায় হও অমুকের চশমার মধ্যে আলো দাও। কিংবা অমুকের আনারসে মধু দাও। অমুক এলাকার ভোটারগণ আপনাদের জানাই আদাব, ছালাম, নমস্কার। আরো আছে শুভেচ্ছা অভিনন্দন। বিনিময়ে অমুক আপার ব্যালটে ভোট দিন।’ আর প্রতিশ্রুতির তো কোন সীমা পরিসীমাই নাই। মশা নিধন থেকে আবর্জনা পরিস্কার আর রাস্তা সংস্কারের যে অঙ্গীকার, তার শিকি অংশও যদি সত্য হয়ে যায় দৈবক্রমে। তাহলে এ শহর চিনতে আমাদেরই কষ্ট হয়ে যাবে। তবে যত পোস্টার ফেস্টুন ব্যনার এখন ঝুলছে প্রর্থীদের। নির্বাচন শেষে শুধু সেইটুকু পরিস্কারের দায়ওকি তারা কেউ নেবেন? আমরা জানি স্পষ্টত তার উত্তর না। এই জঞ্জালও পরিস্কার করতে হবে বর্তমান করপোরেশনকেই। সত্যিই কি বিচিত্র্য এই সময়।

যা দেখতে চাইনি প্রকাশ্যে। অথচ তা-ই ঘটালো দৈব। তার পরেও যা দেখছি তার সবটুকুই যে সত্য তা নির্দিষ্ট হবে নির্বাচন শেষে। আপাতত এই শহর বিগত পাঁচ বছরের অদ্ভুত আঁধার অতিক্রম করতে সচেষ্ট আছেন। তারা খুঁজছেন একজন সর্বৈভ ¯িœগ্ধ শান্ত ভদ্র মানুষ। যার অতীত এবং বর্তমান শুভ্র সম্পূর্ণ কলুষহীন। নিশ্চয়ই এমন একজনকে ভবিষ্যতের জন্য খুঁজছেন এই শহরের সম্মানিত ভোটাররা। সম্ভবত এমন কাউকে এবারের নির্বাচনে অবশ্যই পেয়ে যাবেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সম্মানিত ভোটাররা। মানুষ বেঁচে থাকে আশা নিয়া। সে আশা আলোর, ভালোর, ¯িœগ্ধ-সুন্দরের। অশান্তি, ঔদ্ধত্বপনা, নেশার অন্ধকার ভীতি, মানুষের মোটেই পছন্দের নয়। তারা চুপ থাকে আত্মসম্মান হারানোর ভয়ে। 
এখন নির্বাচনের চরম ¯œায়ু চাপের সময়। প্রার্থীরা সবাই তীব্র গরমে আর অর্থের চাপে শ্রান্ত ক্লান্ত। তবু নিরন্তর ছুটে চলা ভোটারের বাড়ি বাড়ি। যদি কেউ করুনা করেও তার মত পাল্টিয়ে একটা ভোট দেয়। এভাইে প্রর্থীরা যত ক্লান্ত হবে ভোটাররা ততই নির্দিষ্ট করতে থাকবে তাদের করণীয়। তারা ভাববে প্রার্থীরা দেশ জাতি সম্প্রদায় স্বাধীনতার জন্য আশীর্বাদ হবে, কিন্তু কেউ একজনও যেন ক্ষতিকর কিংবা বিরোধী না হয়। তবেই তারা নগরবাসীর কিছুটা অন্তত আস্থার হয়ে উঠবেন।

নিদেনপক্ষে খাবার পানির জন্য নির্মিত দুটি পানি শোধনাগার সক্রিয় করবেন। চলাচলের রাস্তা এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত শহরেও নিশ্চিত করবেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে সঠিক পদ্ধতিতে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেবেন। শহর সৌন্দর্যকরণে নাগরিকদের ভূমিকা ঠিকাদারের উর্ধ্বে রাখবেন। এই শহরকে সবুজ, শিশু ও সংস্কৃতি বান্ধব করবেন। গুন্ডামুক্ত, নেশামুক্ত রাখবার ব্যার্থ প্রয়াসে সচেষ্ট থাকবেন। তবেই আমরা নগরবাসী থাকবো এমন একজন নিষ্ঠাবান মানুষের সাথে।
অতএব যদি লক্ষ থাকে অটুট বিশ^াস থাকে হৃদয়ে, নিশ্চয়ই আমাদেরই হবে, হবেই দেখা বিজয়ে। তবেই এই বরিশাল আবার হয়ে উঠবে হিরন্ময়।

লেখক: আজমল হোসেন লাবু, বাচিক শিল্পী ও সভাপতিম-লীর সদস্য, বাংলাদেশ আবুত্তি সমন্বয় পরিষদ।