বরিশাল কোতয়ালীর ওসি আজিমুলের প্রত্যাহার দাবি

বরিশাল কোতয়ালীর ওসি আজিমুলের প্রত্যাহার দাবি

এমভি সুরভী-৯ লঞ্চে যাত্রী ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও  অভিযুক্ত ম্যানেজার মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার না করায় বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে যোগ্য সুরভী লঞ্চে সাংবাদিক মারধরের সঙ্গে জড়িত মিজানুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করা হয়েছে। কোতয়ালীর ওসি প্রত্যাহার এবং মিজানের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা লাগাতার আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেন।

বুধবার বেলা ১১টায় অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কে বরিশাল ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এই দাবি করেন সাংবাদিকরা।

সংগঠনের সভাপতি ফিরদাউস সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের ব্যুরো প্রধান রাহাত খান।

মানববন্ধনে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, আদালত রোটেশন প্রথা বাতিল করার পরও লঞ্চ মালিকরা তোয়াক্কা করছেন না। লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের হেনস্থা করতে ছাড়েন না। সাংবাদিকদের দায়িত্ব আইনকে সহায়তা করা। সুরভী-৯ লঞ্চে ৯ জানুয়ারি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাদেরও মারধর করে লঞ্চ স্টাফরা। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ শিকার করে নিয়েছেন ম্যানেজার মিজান অপরাধী। লঞ্চ পকর্তৃপক্ষ তাকে বহিস্কার করেছেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিআইডব্লিউটিএ এবং সাংবাদিকদের করা পৃথক লিখিত অভিযোগ উপেক্ষা করে অভিযুক্ত মিজানকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়নি। এটা স্পষ্ট আইনের ধারক ও বাহক যারা তারাইতো আইনকে মানেন না, আইনকে শ্রদ্ধা করেন না। মানববন্ধন থেকে আহবান রাখছি সাংবাদিক ও যাত্রীদের যিনি মারধর করেছেন তাকে গ্রেপ্তার করা হোক। পাশাপাশি কোতয়ালী থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিমকে প্রত্যাহার করা হোক। তিনি আইন প্রয়োগ না করে অভিযুক্তর সঙ্গে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে লিয়াঁজো করেছেন বলে মনে করি।

বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, ঘটনার পরে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুনয়-বিনয় করে বলেছি আপনি হামলাকারীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। কিন্তু তিনি তা করেননি, এমনকি আমাদের কথার কোন মূল্যায়নও করেননি। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কথায় যদি আমরা আশ্বস্ত হতে না পারি তাহলে তিনি কিসের দায়িত্ব পালন করেন প্রশ্ন তুলে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল করিমরে বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত। কোতয়ালী থানায় অনেক ওসি আমরা দেখেছি কিন্তু আজিমুল করিমের মত এত অদক্ষ কাউকে ওসি হিসেবে আমরা পাইনি। আমরা ওই ঘটনায় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আরো একটি মামলা দায়ের করবো। এর আগে ওসি জানিয়েছেন মামলার পরে হামলাকারী জামিন নিয়েছেন। আমি ওসিকে বলেছি, জামিন আপনার সহায়তায় নিয়েছে। আমরা দেখেছি আপনি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসামী ধরে আনতে পারেন অথচ বরিশাল শহরের আসামী আপনি গ্রেপ্তার করতে পারেন না।

এসএম জাকির হোসেন বলেন, সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় এরপর আমরা আর ওসির কাছে কোন আইনি সহায়তা চাই না। আমরা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মামলা করবো, এবার দেখবো মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কি ভূমিকা পালন করেন।

সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, যাত্রী ও সাংবাদিক মারধরকারীকে আইনের আওতায় না এনে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছেন। যে কোন মেট্রোপলিটনের প্রাণ হচ্ছে কোতয়ালী থানা। সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কামিশনারের কাছে আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে হামলাকারী মিজানকে গ্রেপ্তার করা হোক। পাশাপাশি ওসি আজিমুর করিমকে প্রত্যাহার করা হোক।

ইনেডেপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান মুরাদ আহমেদ বলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আমাদের সবিনয় অনুরোধ থাকবে কোতয়ালী থানার দায়িত্বে একজন ডায়নামিক ওসির দরকার। এই প্রতিবাদ সভা থেকে বলতে চাই, আগুন জ্বলতে দিয়েন না; টিকতে পারবেন না। আমি কোতয়ালী থানার ওসির ধৃষ্ঠতা দেখে অবাক হই। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একের পর এক সিনিয়র সাংবাদিকরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তিনি মূল্যায়নই করেননি।

তিনি বলেন, আমি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অনুরোধ করবো আপনারা প্রতিবেদন দেন, এই আজিমুল করিম ওসি কোতয়ালীর যোগ্য নয়। এখন মিজানের গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আন্দোলন এক দফা ‘আজিমুল করিম হঠাও’ করতে বাধ্য করবেন না। ঘটনার এত দিন পার হয়ে গেলো এখনো হামলাকারী মিজান গ্রেপ্তার হয়নি। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। অন্যথায় ওসি প্রত্যাহারে আমাদের একদফা আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ফিরদাউস সোহাগ বলেন, ওসি আজিমুল করিম হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করে আইনকে অমান্য করেছেন। তাই তার হাতে আইন নিরাপদ নয়। তাকে কোতয়ালী থেকে সরানো হোক। যার হাতে আইন নিরাপদ তাকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।

এছাড়াও বক্তব্য দেন, বরিশাল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি কাজী আর মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম জহির, নিউজ এডিটরস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান, সাংবাদিক পরিষদের সভাপতি কামরুজ্জামান জুয়েল রানা, সহ-সাধারণ সম্পাদক খান মনিরুজ্জামান প্রমূখ। মানববন্ধনে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন একাত্মতা পোষণ করেন।

প্রসঙ্গত, বরিশালগামী এমভি সুরভী-৯ লঞ্চে ৮ জানুয়ারি রাতে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হওয়ায় সরকারি সহায়তা কেন্দ্র ৯৯৯ নম্বরে কল করায় ৯ মার্চ বরিশাল নদী বন্দরে যাত্রীদের মারধর করে লঞ্চের ম্যানেজার মিজানুর রহমান ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনা ভিডিও ধারণ করতে গেলে দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সনকে মারধর করে লঞ্চ স্টাফরা। এ ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজারকে সাময়িক বরখাস্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ওদিকে মারধরের ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন মিদুল ইসলাম মোহন বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার পরও কোতয়ালীর ওসি কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।