বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটে ৪ হাজার শিক্ষার্থী

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ১৬টি বিভাগের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী সেশন জটে পড়েছে। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষা জীবন শেষ না হওয়ায় কর্মজীবনে যেতে পারছেন না তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষাবর্ষের মোট ২০ টি বিভাগের মধ্যে মাত্র ৪টি বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৪ বছরের কোর্স ৭ বছরেও সম্পন্ন না হওয়ায় কর্মজীবনেও পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। সন্তানদের এই দুশ্চিন্তা ভর করছে তাদের অভিভাবকদের উপর।
আমিনা রহমান (ছব্দ নাম) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হয়। তার অনার্স ২০২০ সালে শেষ হওয়া কথা থাকলেও ২০২২ সালে এসেও তা শেষ হয়নি। দরিদ্র পরিবারের আমিনা রহমানের পরিবারে উপার্জনকারী একমাত্র মা। তাই পরিবারের ভার বহন করতে হচ্ছে আমিনাকে। কিন্তু তার নির্ধারিত সময়ে শিক্ষা জীবন শেষ না হওয়ায় কোন চাকুরিতেও সুযোগ পাচ্ছে না। সব কিছু মিলিয়ে আর্থিক অনটনের কারণে ভেঙে পড়েছে আমিনাসহ এ পরিবারটি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ শিক্ষা বর্ষে ২০ টি বিভাগের মধ্যে স্নাতক সম্মান চূড়ান্ত বর্ষ পরীক্ষা শেষ হয়েছে দর্শন, মার্কেটিং, একাউন্টিং ও লোক প্রশাসন বিভাগের। ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ, ইংরেজী, সয়েল এন্ড ইনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, সমাজবিজ্ঞান, আইন, বাংলা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, রসায়ন, ইকোনমিক্স, কম্পিউটার এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স, জিওলজি এন্ড মাইনিং, পদার্থ বিজ্ঞান, কোস্টাল স্ট্যাডিজ এন্ড ডিজস্টার ম্যানেজমেন্ট, গণিত এবং পলিটিক্যাল সায়েন্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষ শিক্ষার্থী মো. আলামিন জানান, স্যারদের বারবার অনুরোধ করার পরও যথা সময়ে ক্লাশ এবং পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে পিছিয়ে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী।
ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রী সৌমেন বলেন, বিলম্বে সেই ডিগ্রী পেলে আত্মহত্যা ছাড়া পথ থাকবে না। সরকারী চাকুরীর বয়স শেষ হওয়ার পর এই ডিগ্রী নিয়ে কবরে যাওয়া ছাড়া আর তেমন কোন কাজে আসবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. মুসার মা বলেন, ‘অনেক কষ্টে বাপ মরা ছেলেটারে ভার্সিটিতে ভর্তি করাইছি। ভাবছিলাম পড়াশুনা শেষ কইরা পোলা সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু সেশনজটের কারণে ছেলেডা এখন টিউশন কইরা সংসার চালায়।’ এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কি হবে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, ৪ বছরের স্নাতক সম্মান কোর্স ৭ বছরেও শেষ হলো না। এখন মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা অবহেলিত। অনেকেই নম্বর কম পাওয়া এবং ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ে মুখ খোলেন না। এখন তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
শিক্ষার্থী মো, আরিফ বলেন, ‘৭ বছর পাড় করেও যখন ইউনিভার্সিটি লাইফের গন্ডি পেরোতে না পারি তখন আর অনুভূতি থাকে না। শুধু চোখে মুখে থাকে হতাশা আর বিষাদ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের পরিচালক ইয়াসিফ আহমেদ ফয়সাল বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় করোনা মহামারীর বিশাল একটি প্রভাব পরেছে, যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ ছিলো। এছাড়া বিভিন্ন আন্দোলনের কারণেও অনেক পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছিলো। সেই পরীক্ষা পুনরায় নিতে কিছু একাডেমিক কার্যক্রম গোছাতে সময় লেগেছে। যার কারণে একটু বিলম্ব হয়েছে। ১৬-১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে তৃতীয় বর্ষের কার্যক্রম শেষের পথে তারা চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম জানান, ‘রেজাল্ট দিতে কিছুটা দেরী হয়। সেই সময়টা পাড় করে আবার নতুন একটি সেমিস্টার শুরু করতেও বিলম্ব হয়। তারপরও সকল বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে সেশন জট যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করার আশ^াস দেন তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।