বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ১০ মাসেও পুর্ণাঙ্গ হয়নি

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ১০ মাসেও পুর্ণাঙ্গ হয়নি

গত বছর ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গত ১০ মাসেও কমিটি পুর্ণাঙ্গ করতে পারেন। করোনার কারণে পুর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি দাবি করেছেন নেতারা। শিঘ্রই ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি পুর্নাঙ্গ করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল থেকে আসা কাউকে কমিটিতে স্থান দেবেন না বর্তমান নেতৃত্ব। আওয়ামী পরিবারের বাইরের কেউ মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সদস্যও হতে পারবেন না। ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মীদের দিয়ে কমিটি পুর্নাঙ্গ করার কথা বলা হলেও স্থান পাচ্ছেন বিতর্কিত ও মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্তরা।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে নগরীর বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে একতরফা ভোটাভুটিতে অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীরকে সভাপতি এবং সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। 
এরপর দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত হলেও কমিটি পুর্নাঙ্গ করতে পারেনি নতুন কমিটির নেতারা। এমনকি পুর্নাঙ্গ কমিটি প্রস্তুতও করতে পারেনি তারা। 

মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের অভিযোগ, টানা ১২ বছরের ক্ষমতামলে আওয়ামী লীগে সুবিধাভোগী এবং হাইব্রিড বেড়েছে। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল থেকে আসা অনেকেই পুর্নাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেতে মরিয়া। তাদের অনেকেই নতুন পুর্নাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেতে শীর্ষ নেতার (সিটি মেয়র) আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার দির্ঘদিন ধরে দলে কোনঠানা ত্যাগী নেতারাও নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া চেষ্টা করছেন। পিছিয়ে নেই বিতর্কিত ও মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্তরাও। 

মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, করোনার কারণে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন পিছিয়েছে। কমিটি পুর্নাঙ্গ করতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার একান্তে বৈঠক করেছেন। সেখানে পুর্নাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া করা হয়েছে। এই খসড়া বরিশাল আওয়ামী লীগের অভিভাবকখ্যাত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাতে দেওয়া হবে। সেখান থেকে বাদ বিচার করে কাউকে কর্তন কিংবা নতুন করে কাউকে অন্তর্ভুক্ত আবার কারোর পদপদবী সামঞ্জস্যপূর্ণ করবেন তিনি। অভিভাবকের সবুজ সংকেত পেলেই খসড়া চূড়ান্ত করে পুর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা জানিয়েছেন নেতারা। 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, খসড়া কমিটিতে দুটি মাদক মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাইদুল ইসলাম মনির মোল্লাসহ নানা কারণে বিতর্কিত অনেককে রাখা হয়েছে। ভুলত্রুটি থাকলেও আওয়ামী পরিবার বিবেচনায় তাদের আরেকবার সুযোগ দেয়ার পক্ষে নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে মধ্যম সারির নেতাদের ক্ষোভ-আপত্তি থাকলেও নীতিনির্ধারকদের উপর কথা বলার জো নেই তাদের। 
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জানিয়েছেন, করোনার কারণে পিছিয়েছে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। তবে সম্প্রতি তিনি আর সাধারন সম্পাদক বসে একটা খসড়া পুর্নাঙ্গ দাড় করিয়েছেন। অভিভাবক আবুল হাসান আবদুল্লাহ’র খসড়া দেখে সবুজ সংকত দিলেই অনুমোদনের জন্য পুর্নাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে পাঠানো হবে। নতুন পুর্নাঙ্গ কমিটিতে ‘ত্যাগী ও নিবেদিতরা’ চমক থাকবে।

অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, আগের কমিটির অনেকেই নতুন কমিটিতে রদবদল করা হচ্ছে। দলছুট কিংবা হাইব্রিডদের নতুন পুর্নাঙ্গ কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে না। এমনকি সদস্য পদেও নয়। আওয়ামী পরিবারের বাইরের কেউ এই কমিটিতে থাকতে পারবে না। বিতর্তিক অনেককে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী পরিবারের যারা প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম করেন, তাদের আরেকবার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এরপরও তারা সংশোধন না হলে সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনুমোদন হলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ৩ বছর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবেন নতুন কমিটির নেতারা।