বরিশাল মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা আছে, পরিচিতি নেই

বরিশাল মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা আছে, পরিচিতি নেই

বরিশাল মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বিনা খরচে অস্ত্রপচারসহ গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা রয়েছে। গর্ভবতী নারীদের জন্য সেবার সকল ব্যবস্থা থাকলেও পরিচিতি নেই এই কেন্দ্রের। কেন্দ্রটির পরিচিতি কেবল ইপিআই কেন্দ্র হিসেবে। শিশুর টিকিা দিতে এই কেন্দ্রে আসলেও গর্ভবতী মায়েরা তেমন একটা এই কেন্দ্রে আসেন না।

পরিচিতি না থাকায় বরিশাল নগর ও আশপাশের গর্ভবতী মায়েরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা বেসরকারি ক্লিনিকে সেবা নিতে যান। ফলে ২০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বেশিরভাগ বিছানা ফাঁকা পড়ে থাকে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি কারোনার শুরুতে রোগি সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে রোগি বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পাঁচটি বিছানায় রোগি আছে। তাদের মধ্যে দুইজন বরিশাল নগগেরর বাইরে থেকে এসেছেন। বাকি তিনজন কেন্দ্রের কাছাকাছি, বরিশাল মহানগরের বাসিন্দ। বিনা খরচে এই কেন্দ্রে সেবা পাওয়া যায়, এখানে সেবা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীরা আগে জানতেন না। লোকমুখে শুনে তারা এখানে এসেছেন।

বরিশাল মহানগরের নথুল্লাবাদ এলাকার জিয়া সড়কের বাসিন্দা শারমিন আক্তার জানান, গত শনিবার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার সন্তান হয়েছে। এখানে বেশিরভাগ ওষুধ কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে। সব মিলে তাদের ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখানে বাড়তি কোন খরচ হয়নি। 

বরিশাল সর উপজেলার কাউয়ার চর এলাকার বাসিন্দা মনিরা আক্তার গত শনিবার এই কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। গত শনিবার তার অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান হয়েছে। তবে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বিনা খরচে অপারেশন হয় এটা জানা ছিল না। এক পরিচিত তাকে বলার পর এখানে এসেছেন। অপারেশনের জন্য কোন অর্থ দিতে হয়নি। শুধু ঔষধ কিনতে হয়েছে।

বরিশাল জেলার উজিপুর উপজেলার ওটরা চকমান গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী মলি আক্তারের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান হয়েছে। আমার এক পরিচিতর মাধ্যমে এখানে এসেছি। এই কেন্দ্রে বিনা খরচে অস্ত্রোপচার হয় এটা জানা ছিল না। মেডিকেল কিংবা বাইরে অস্ত্রোপচার হলে অনেক টাকা খরচ হতো।

নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা পপি পোদ্দার জানান, আগে কয়েকবার ক্লিনিকে সেবা নিয়েছি। পরে এই কেন্দ্রে এসেছি। অর্থ খরচ করে ক্লিনিকে থেকেছি। তার চেয়ে এখানের ব্যবস্থা ও পরিবেশ ভাল।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী সুভাস চন্দ্র দে জানান, ২০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বর্তমানে ৩জন গাইনীর চিকিৎসক, একজন এনেস্থেশিয়ার চিকিৎসক, ৬জন এফডব্লিউভিসহ ৩২জন জনবল রয়েছে। তারা নিয়মিত কেন্দ্রের সেবায় নিয়োজিত আছেন। তবে এখানে সিনিয়র ষ্টাফ নার্স নেই। 

এফডব্লিউভি হাসনা হেনা বলেন, আগের চেয়ে রোগি বাড়ছে। প্রতি মাসে গড়ে ২০-২৫টা সির্জার হয়। এ ছাড়াও নরমাল ডেলিভারিও হয় ২০-২৫টা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে মেঝেতে রোগি বেশি থাকে। সেখানে চিকিৎসকরা সেবা দিতে গিয়ে হিমশীম খায়। অথচ বিনা খরচে সুন্দর পরিবেশ থাকার পরও মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ফাঁকা পড়ে থাকে। প্রচার না থাকার কারণেই এই অবস্থা বলে মনে করেন চিকিৎসক ও স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, এটাকে তো আমরা নাসিং সেন্টার হিসেবে জানি। এখানে ইপিআই টিকা কার্যক্রম চলে। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের জন্য অস্ত্রোপচার হওয়ার বিষয়টি জানা ছিলো না। এব্যাপারে কোন ধরণের প্রচারণাও নেই।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাপাতালের গাইনী বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোগির জন্য আমরা আমাদের কক্ষে পর্যন্ত ঢুকতে পারি না। সেখানে ২০ শয্যার হাসপাতালের বিছানা ফাঁকা পড়ে থাকে। প্রচারণা চালালে এবং পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করা গেলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগির চাপ কিছুটা কমত।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দের সেবিকা রীনা খাতুন বলেন, গতকাল সোমবার ৫জন রোগি ভর্তি আছে। প্রতিদিনই দুই একজন রোগির অস্ত্রোপচার হয়ে সন্তান প্রসব হয়।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক রুনা লায়লা বলেন, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সব ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। করোনার কারণে প্রথম দিকে রোগি কম থাকলেও বর্তমানে রোগি বেড়েছে। প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ জন গর্ভবতী মায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার বিহীন সেবা পাওয়া রোগীদের এখানে থাকতে হয় না।