বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের দুই ওয়ার্ডবয়কে ছাত্রাবাসে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের দুই ওয়ার্ডবয়কে ছাত্রাবাসে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দায়িত্বরত দুই ওয়ার্ডবয়কে জিম্মি করে ছাত্রাবাসে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা কাউকে জানালে গুমসহ হত্যার হুমকী দেয়া হয় তাদের। এঘটনায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে।

গত ২৯ জুন রাতে করোনা ওয়ার্ডে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন থাকা সহকর্মীর কক্ষের বদলে ভুলক্রমে পাশে ডাক্তারের কক্ষে ডাকাডাকি করার অপরাধে তাদের দুই জনকে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে চরম শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। এ ঘটনার দ্রুত বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছেন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীরা। কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

ওয়ার্ডবয় দিদারুল ইসলাম ও মো. নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ওয়ার্ডবয় মো. বাদশা করোনা উপসর্গ নিয়ে করোনা ওয়ার্ডের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন। গত ২৮ জুন রোববার রাতে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন সহকর্মী বাদশার ১৮ নম্বর কক্ষের বদলে ভুলক্রমে পাশে ডাক্তারের ১৫ নম্বর কক্ষে ডাকাডাকি করেন ওয়ার্ডবয় মো. দিদারুল ইসলাম ও মো. নুরুল ইসলাম। কক্ষ ভুল হওয়ায় দায়িত্বরত নারী শিক্ষানবীশ চিকিৎসকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে সহকর্মীর ১৮ নম্বর কক্ষে চলে যান তারা। পরদিন সোমবার ২৯ জুন রাতে দিদার ও নুরুল করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি করছিলো। ওইদিন রাত ৯টায় শিক্ষানবীশ চিকিৎসক মো. আরিফ ও মো. সজল তাদের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে করোনা ওয়ার্ডের নীচে ডেকে নেয়। এ সময় শিক্ষানবীশ চিকিৎসক আরিফ ও সজলের নেতৃত্বে ৩টি মোটর সাইকেলযোগে ৬/৭জন লোক দিদার ও নুরুলকে জিম্মি করে ২ নম্বর শিক্ষানবীশ হোস্টেলে নিয়ে যায়। নারী শিক্ষানবীশ চিকিৎসকের কক্ষে ডাকাডাকি করার অপরাধে সেখানে তাদের দুই জনকে চরম শারীরিক নির্যাতন করে তারা। এতে তাদের শরীরে ফুলা জখম এবং বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত আহত হয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা তাদের হত্যা করে লাশ গুম করার হুঁশিয়ারী দেয় বলে অভিযোগ করেন আহত ওয়ার্ডবয় দিদারুল ইসলাম ও মো. নুরুল ইসলাম।

এদিকে নারী শিক্ষানবীশ চিকিৎসকের কক্ষে ডাকাডাকি করার ঘটনায় করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসক হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে পরিচালক ওই দুই ওয়ার্ডবয়কে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়। দুই সহকর্মীকে শারীরিক নির্যাতন করার পরও উল্টো কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়ার খবর জানাজানি হলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। তারা পরিচালকের কক্ষ ঘেরাও করে এবং সহকর্মীদের নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আল্টিমেটাম দেয়। এ ঘটনার বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দেন হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. মোদাচ্ছের আলী কবির ও সাধারণ সম্পাদক মো. সাহেব আলী। 

এদিকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ওই দুই ওয়ার্ডবয়কে ছাত্রাবাসে ডেকে নিয়ে শুধুমাত্র ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করার হয়েছে বলে দাবি করেন অভিযুক্ত শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা। নারী শিক্ষানবীশ চিকিৎসককে উত্যক্ত করার ঘটনা ধামাপাচা দিতে চতুর্থ শ্রণির কর্মচারীরা উল্টো তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন বলে দাবি করেন ইন্টার্ন ডক্টরস্ হোস্টেল শাখার সভাপতি দাবিদার ইন্টার্ন চিকিৎসক মো. তরিকুল ইসলাম। 

অন্যদিকে করোনা ওয়ার্ড এবং ছাত্রবাসের ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন