বরিশালে এখনো নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে

বরিশাল জেলায় পানি কমতে শুরু করলেও এখনো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। অমাবশ্যার জোয়ারের পঞ্চম দিনেও কীর্তনখোলা নদীর জোয়ারের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নগরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। অনেক স্থানে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে আছে।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কীর্তনখোলার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নগরীর নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করেছে।
বরিশাল সদর উপজেলা ছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলার নিম্নাঞ্চলে দুই ফুটেরও বেশি পানি জমেছে। এসব এলাকার সড়ক, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জোয়ারের পানি ঢুকে পরায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালের জোয়ারে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখানের সুরমা-মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার, ভোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সর্বোশেষ হিসেব অনুযায়ী বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখানের সুরমা-মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার, ভোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
আর বৃহষ্পতিবার এ পানি আরো ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বৃহষ্পতিবার বিকেলের সর্বোশেষ হিসেব অনুাযায়ী বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার দিয়ে যখন প্রবাহিত হয়েছে, ভোলার দৌলতখানের সুরমা-মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার, ভোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জানিয়েছে, গত ২০ বছরের মধ্যে কীর্তনখোলা নদীর পানি গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ লেভেল অতিক্রম করে। ওইদিন কীর্তনখোলা নদীর পানির উচ্চতা বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত শুক্রবার কীর্তনখোলা নদীর পানি প্রবাহ কমতে থাকে, যা গতকাল ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীর জোয়ারের পানিতে বিস্তির্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফসলী জমি, পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে বহু ঘেরের মাছ। পানির কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তবে জোয়ারের পানিতে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এখন পর্যন্ত নিরুপন করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে পরিবেশ গবেষকরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলে নদ-নদীর পরিমান এতোটাই বেশি যে বিগত বছরগুলোতে কখনোই জোয়ারের পানি বেরিবাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা যায়নি। কিন্তু এবারে দক্ষিণাঞ্চলেরি নদ-নদীতে জোয়ারের পানি এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে অনেকস্থানে বেরিবাঁধের ওপর দিয়েও লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। বিগত সময়ে যেখানে বেরিবাধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতো। জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তারা।
অন্যদিকে বিভাগের বরিশালের বাকেরগঞ্জের বুড়িশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার, হিজলার ধর্মগঞ্জ নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার, আবুপুরের নয়াভাঙ্গনি নদীর পানি বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, মির্জাগঞ্জের বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার, আমতলীর বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠির বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার, বেতাগীর বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার, বামনার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার, বরগুনার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার এবং উমেদপুরের কঁচা নদীর পানি বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
গত বৃহষ্পতিবার বিকেলে বাকেরগঞ্জের বুড়িশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার, হিজলার ধর্মগঞ্জ নদীর পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, আবুপুরের নয়াভাঙ্গনি নদীর পানি বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার, মির্জাগঞ্জের বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার, আমতলীর বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠির বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার, বেতাগীর বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার, বামনার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার, বরগুনার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার এবং উমেদপুরের কঁচা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, গত কয়েকদিন ধরে বরিশালের বেশিরভাগ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পানি থাকার পর আবার ভাটায় পানি নামতে শুরু করলেও পুনরায় জোয়ার আসায় বিস্তির্ণ অঞ্চল ডুবে আছে। দুই এক দিনের মধ্যে জোয়ারের পানি কমে যাবে।