বরিশালে ঢিলেঢালা লকডাউন,স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ভ্রাম্যমান আদালত

বরিশালে করেনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের দ্বিতীয় দিনও ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। কেবল লঞ্চ-বাস ছাড়া অন্য সব যানবাহন ও দোকানপাট স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলেছে। তবে করোনার সংক্রমন রোধে, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বরিশালে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান শুরু করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাবেদ হোসেন ও মোঃ আলী সুজা।
পৃথক দুুটি ভ্রাম্যমান আদালত পর্যায়ক্রমে নগরীর ডিসি ঘাট, চাঁদমারি, মেডিকেল কলেজ, বান্দরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাবেদ হোসেন জানান, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এই অভিযান চালানো হয়। পাশাপাশি অভিযানে মাস্কও বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক পরতে বাধ্য করতে জরিমানাও করা হয়।
এদিকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে অনুমোদন ব্যতিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট বন্ধ থাকলেও পাড়া মহল্লায় চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন ধরণের দোকানপাট খোলা রাখা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্ধেক সাটার খুলে এসব দোকানের কার্যক্রম চলছে। এমনকি লকডাউনের প্রথম দিন সোমবার দিবাগত রাত ১১ টা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় চায়ের দোকানগুলো খোলা রাখতে দেখা গেছে।
এদিকে বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও নগরের বিভিন্ন স্থানে রিকসাসহ থ্রি-হুইলার যানবাহন চলতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে মহাসড়কেও থি-হুইলারের একক আধিপত্য দেখা গেছে। আবার গন্তেব্যে যেতে সেসব যানবাহনে যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে খোলা স্থানে বাজার পরিচালনা করার কথা থাকলেও সেটিও মানছে না কেউ। নগরর সব কটি বাজার আগে স্থানেই ভীড় করে চলেছে। নতুন বাজার, বাজার রোড, বাংলা বাজার , বটতলা বাজারসহ সব বাজারই আগে স্থানে পরিচালিত হেেয়ছে।
নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন অভিযোগ করেন, নগরজুড়ে প্রধান সড়কগুলোতে দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। তবে পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন ধরণের অপ্রয়োজনীয় দোকানপাট খোলা রয়েছে। কেউ কেউ সাটার অর্ধেক খুলে দোকান চালাচ্ছেন। তাছাড়া সকাল থেকে নগরে রিক্সা, অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন ধরণের থ্রি-হুইলার চলাচল করছে সেগুলো বন্ধ করতে কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত জিয়াউল হক অভিযাগ করেছে, লকডাউনে গত সোমবারের চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাস্তায় লোকজনের সংখ্যা বেশি ছিল। অনেক স্থানেই ভীড় দেখা গেছে। আবার স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হলেও মাস্ক ব্যবহারে অনীহা এখনো সাধারণ মানুষের মাঝে।
উল্লেখ্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গতকাল ১১৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত রয়েছেন ২২ জন।
গত ৫ এপ্রিল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৮ জনের রিপোর্টে করোনা পজেটিভ এসেছে। যা শতকরা হিসেবে ৩০ ভাগ। বরিশাল জেলায় একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮। এরমধ্যে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪১ জন। গত ১ বছরে গোটা বরিশাল বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৭৬৬ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক বছরে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৯৩ জন।
এছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলল কলেজ হাসপাতালে ১ বছরে করোনা ওয়ার্ডে করোনাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৫০২ জন।