বরিশালে দুই সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার ‘অপমানের’ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল

বরিশালে দুই সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার ‘অপমানের’ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল

বরিশালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রধান কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাকে মঞ্চের মেঝে বসানো নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর এবং দুই বারের সাবেক সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসের মেঝেতে বসার ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা সিনিয়র নেতাদের ‘অপমানের’ ছবি ফেসবুকে আপলোড করে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃস্টি কামনা করেছেন।

দুই সিনিয়র নেতাকে দুটি চেয়ার না দেয়া ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভুল বলে মন্তব্য করেছেন নৌকা প্রার্থীর অন্যতম সমন্বয়কারী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন। 

গত শুক্রবার বাদ আছর নগরীর জিলা স্কুলের সামনে একটি একতলা মার্কেটের ছাদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন হয়। শুরুতে অনুষ্ঠান মঞ্চের মেঝেতে অতিথিদের বসানোর পরিকল্পনা ছিলো আয়োজকদের। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই নৌকার কর্মী সমর্থক ছাড়াও দুই বারের সাবেক সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এবং মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর সহ অন্যদের মঞ্চের মেঝেতে এবং কর্মীদের বসানো হয় সামনে। অনুষ্ঠান শুরুর কিছু আগে মঞ্চে আসেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর করিন নানক। তিনি মেঝেতে বসতে না পেরে মঞ্চের পেছনের দিকে চলে যান। কর্মীরা তার জন্য একটি চেয়ার এনে দিলে তিনি মঞ্চের সামনের দিকে চেয়ারে বসেন। তার পাশে আরও দুটো চেয়ার রাখা হয় আওয়ামী লীগের উপদেস্টা আমির হোসেন আমু এমপি এবং নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের জন্য। মঞ্চে চেয়ার রাখতে মহানগর সভাপতি ও জেলার সাধারন সম্পাদককে ধীরে ধীরে পাশে সরে যেতে হয়। পরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি মঞ্চে উঠলে তার জন্যও একটা চেয়ার এনে দেয়া হয়। তদুপরি দুই বারের সাবেক সাংসদ জেলা আওয়াম লীগ সাধারন সম্পাদক তালুকদার ইউনুস ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে মঞ্চে চেয়ার না দিয়ে মেঝতে বসিয়ে রাখা হয়। 

অনুষ্ঠান শেষে ওই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে নানা তীর্যক মন্তব্য ছুড়েছেন ছাত্রলীগের পদবীধারী নেতারা। ৪ জনের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করে দুই সিনিয়র নেতাকে মেঝেতে বসিয়ে অপমান করা হয়েছে বলে তারা ফেসবুকে মন্তব্য করছেন। 

জেলা ছাত্রলীগ সহসভঅপতি আতিকুল্লাহ মুনিম তার ফেসবুকে ওই ছবি পোস্ট করে লিখেছেন ‘হায়রে রাজনীতি, আগামীকে সংগঠনের কি হবে ? জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক আর মহাগরের সভাপতি নিচে বসে আছেন আর একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বসে আছেন চেয়ারে, তাও কেন্দ্রিয় নেতাদের সামনে’। 

একই ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে উন্মা প্রকাশ করেছেন জেলা ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। 

রাজিব খান নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী ওই ছবি পোস্ট করে ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা জনত্রেী শেখ হাসিনা দয়া করে দেখুন বরিশাল এসে কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ বরিশাল মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদককে কি পরিমান অপদস্থ করছে। এছাড়াও অনেকেই এই ছবি ফেসবুকে দিয়ে নানা মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন। 

এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেম জাহাঙ্গীর বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং দুই বারের সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদককে মেঝেতে বসতে দেখে কর্মীরা মনের কস্টে কিছু লিখতেই পারে। সাধারন জনগনের মধ্যেও এ নিয়ে সমালোচনা আছে। মঞ্চে জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ যারা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছে তাদের কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তিনি বলেন, প্রার্থীর সাথে যারা আছেন সেই চক্রটি চায় না নির্বাচনটি পরিকল্পিত হোক। যার কারনে আমাদের একটু দূরে রাখার চেস্টা করতেছে। তারা ডাকুক আর না ডাকুক নৌকার বিজয়ে কাজ করবো। 

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ফেসবুকে কে কি দিয়েছে আমি দেখিনি। এটা তাদের বিষয়। আমরা রাজনীতি করে, কে আমাদের চেয়ারে বসাইলো না বসাইলো ওটা নিয়ে চিন্তা করি না। আমাদের নৌকা বিজয়ী করতে হবে। 

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অন্যতম সমন্বয়কারী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, নতুন অফিস। অনেক সরঞ্জামাদীর অভাব আছে। অফিসে মাত্র ৪টি চেয়ার ছিলো। ৪টি চেয়ার মঞ্চে দেয়া হয়েছে। সংকট থাকায় তাদের চেয়ার দেয়া যায়নি। এটা ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভুল বলে দাবী খান মামুনের।