তুমি শান্তিতে ঘুমাও
জনাব শওকত হোসেন হিরন তুমিহীন আজকের এই শহরের সকালটি কেমন? কি মনে হয়, ভালো, খুব ভালো, অতিরঞ্জিত, নাকি স্বাভাবিক? যারা হিরন্ময়তায় মুগ্ধ ছিলো এতোদিন, সেই সকল অতি পরিচিত চোঁখগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে সবাই আজ অপরিচিত। এরা আপনাকে দেখেনি পর্যন্ত কোনদিন। এটা স্বাভাবিক, খুব স্বাভাবিক। আমাদের চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কাজ আমরা কেমন করে করি! ভুলতে পারা তো অনেক গুণ। তা না হলে মানুষ এভাবে ভুলে যায় কি করে?
সকালে নাস্তা, দুপুরের ভাত, রাতে যাদের সঙ্গে খেতে বসতেন একসঙ্গে তারা এখন কেমন আছেন? খুব ভালো। তুলনা হয় না এমন ভালোর। এতটা ভালো যে তারা আছেন তার একটাই কারণ, এখন তারা আপনার নাম শুনলে অনায়াসে বলতে পারেন কোন হিরণ? এটাই স্বাভাবিক। এটা এতোটাই স্বাভাবিক যে, কাউকে এখন আর বলে বুঝানোর প্রয়োজন পরে না। আজ যে যাকে সবচেয়ে বেশি চিনছেন, কাল সে প্রয়োজনে নির্দিধায় ইউটার্ন। এটাই নিয়ম রাজনীতির, শক্তির, দম্ভের। মধু থাকে বলেই তো বাগানের ফুল মৌমাছির। না থাকলে সেটা কার? এ প্রশ্ন জানা সবার।
একদিন শুধুই হিরন্ময় ছিলো এই শহর। কত নেতা-কর্মীর নেতা ছিলেন তিনি। এই শহরে মেয়র শব্দের যথার্থ রূপ দিয়েছেন তিনি। আদি অকৃত্রিম স্থবির এই শহরটাকে রূপে, গুণে গুনান্বিত করেছিলেন হিরণ। শহর সৌন্দর্যের নুতন অর্থ নির্মাণ করেছিলেন নাগরিকদের চোখে। পরিচ্ছন্নতা, দুর্গন্ধমুক্তির এক উদাহরণ হিরণ। এই শহর রাজনীতির নতুন মেরুকরণ, সম্প্রসারণ এবং সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রক হিরণ। এ শহর আলোকসজ্জার উদাহরণ, মেয়র নাইটের প্রবর্তকও তিনি। আকাশে আতসবাজির নি:শব্দ রং ছড়িয়েছেন হিরণ। এরকম অনেক অজস্র অনেক কিছুর বিচ্ছুরণ ছড়িয়েছেন হিরণ এই নগরবাসির জন্য। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন তার কাজকে, তার নগরবাসিকে। কি ছিলো তার পরিনাম? করপোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়!
.ব্যাপক বিজয়ী হলো রাজনীতির গণিতজ্ঞরা। এই শহরের প্রতিটি মানুষ বুঝতে পেরেছিলো সেদিন। কিন্তু বলতে পারেনি কেউ। বলতে পারেনি হিরণ। শুধুই পরাজয়ের কৃতজ্ঞতায় বলেছিলো ‘আজ থেকে এই শহরে আমার কোন রাজনৈতিক অভিভাবক নেই’। সেই পরাজয়ের র্নিমমতায় এই শহর দেখেছিলো রাজনীতিবীদদের চেহারা। মুহূর্তে ভোল পাল্টে কত সহজে তারা হিরণ বিষদগার শুরু করলো। একদিন আগেও জ¦র-কাশি, মাগুর গজাল নামের যে নেতারা পরিচিত ছিলো এই শহরে। তারা সবাই নেতা পাল্টাতে হিরণ সম্বন্ধে যা খুশি তাই বলতে লাগলো। এবং সফল হলো এই আদোলে একই দলের দ্বিতীয় শিবিরে জায়গা করে নিতে।
বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকদের কলম লিখলো ‘ওরে পাল্টিরে’। মুহূর্তে দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠলো এই পাল্টি শব্দ। জনপ্রিয় হয়ে উঠতে লাগলো এই শব্দের প্রবর্তকরা। এভাবে দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে এও দেখলাম আমরা যারা এই শব্দকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলোম ব্যপক প্রচারে তারাও একদিন কি অসাধারণ রূপে সবাই মিলে পাল্টি খেলাম। কি বিচিত্র আমরা। কি বিচিত্র আমাদের রাজনীতি এবং রাজনীতির ভাবনা। তাই হয়তো কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ চরম পরিহাস করে লিখেছিলেন ‘বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে, রাজনীতিকের রক্তে, স্নায়ুতে সচেতন অপরাধ’।
আপনার অনুপস্থিতির এই দিনে কথাগুলো লিখতে চাইনি। অথচ এটাই পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা। তারপরেও বলি হিরণ ভাই আপনার বরিশাল ভালো আছে। উপায়হীন এই এখন সত্য। এই সত্যের পথ ধরে ধীরে ধীরে সময়ের সাথে বর্তমান মেয়র জনাব সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, শহরের জৌলুস বৃদ্ধিকল্পে নিরলস কাজ করে চলেছেন। সব ভালো হচ্ছে এমনটা বলবার যে নেই। তবে ব্যাতিক্রম কিছু আছে, যা আপনার কাজকেও অতিক্রম করেছে, সেটা আপনার জানা দরকার। শহরের প্রধান তিনটি রাস্তা অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করেছেন। যা নিশ্চয়ই আপনার এ জাতীয় কাজের মাপকাঠিকে অতিক্রম করেছে। দেখলে আপনার ভালো লাগবে। আপনি আনন্দিত হবেন। শহর অভ্যন্তরে রাস্তা নির্মাণের এই ধারা অতীতের সকল সঠিকতার মাপকাঠিকে অতিক্রম করেছে। শুধু মেডিকেলের সামনের রাস্তাটি হয়ে গেলে এই শহরের রাস্তা সংস্কারের ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। বর্তমান মেয়রের এ কাজ শহরে প্রসংশিত হয়েছে।
ট্যাক্স নিয়ে যে কথা উঠেছে তাও অতিক্রম করবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান মেয়র। তবে আপনার জানা আছে নিশ্চয়ই করপোরেশনের সরকারী ঝানু চেয়ারগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজ করা কত কষ্টের? মেয়রের কাজকে আইনের প্যাচে প্রশ্নবিদ্ধ করায় তাদের তুলনা মেলা ভার। তবে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এই শহর সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে দারুন আন্তরিক রয়েছেন। হিরন ভাই আজ পৃথিবী বড় খারাপ সময় অতিক্রম করছে। আতংক, হতাশা এবং কান্নায় একাকার হয়ে মূলতঃ সবাই থেমে আছি এখন। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভয়াল শব্দের নাম কোভিড-১৯। পৃথিবীর মানুষ এখন সবাই বিচ্ছিন্ন। একতাবদ্ধতার কোন অর্থ নেই। এখন শুধুই অপেক্ষা আগামী সুন্দরের। আপনি চির শান্তিতে ঘুমান, স্বর্গের শ্রেষ্ট স্থানে।