বরিশালে মসজিদগুলোতে করোনা সুরক্ষায় আলোচনা নেই, জুমার নামাজে বেশীর ভাগ মুসুল্লী মাস্কবিহীন

বরিশালে মসজিদগুলোতে করোনা সুরক্ষায় আলোচনা নেই, জুমার নামাজে বেশীর ভাগ মুসুল্লী মাস্কবিহীন

করোনা সংক্রামণের হার কমে যাওয়ায় সুরক্ষার কথা ভুলে গেছেন প্রায় সবাই। সব জায়গায় ঢিলেঢালা ভাব। মসজিদগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নেই বললেই চলে। এমনকি জুমার নামাজেও অর্ধেকের বেশী মুসুল্লী মাস্ক ব্যবহার করেন না। এ বিষয়ে নজরদারী নেই জেলা প্রশাসনের। ইমাম সমিতির নেতারা বলছেন, প্রত্যেক ইমামকে করোনা সুরক্ষায় নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু কিছু মুসুল্লী মাস্ক পড়তেই চায় না। মাস্ক না পড়ার খেসারত হিসেবে আগামী মার্চের পর করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় গত ৫ জুলাই সংক্রামণের হার ছিলো ৭৩ দশমিক ৯৪ ভাগ। গত শুক্রবার রাতে পিসিআর ল্যাবের সব শেষ রিপোর্টে নমুনা পরীক্ষায় সংক্রামনের হার ছিলো রেকর্ড সর্বনি¤œ ৩ দশমিক ৫৮ ভাগ। সংক্রামনের হার কমার সাথে সাথে করোনা সুরক্ষায় সব জয়গায় ঢিলেঢালা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। হাটবাজার, রাস্তাঘাট সর্বত্র মাস্ক বিহীন মানুষের ছড়াছড়ি। মসজিদগুলোতে করোনা সুরক্ষার কথা অনেকটাই ভুলে গেছেন মুসুল্লীরা। জুমার নামাজে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশী ভীড় হলেও কিছু মুসুল্লী ছাড়া মাস্ক পড়েন না অন্তত ৭০ ভাগ মুসুল্লী। জুমার নামাজের খোৎবায় করোনা সচেতনতায় বয়ান করার জন্য ইমাম-খতিবদের প্রতি সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তারা সেগুলো প্রতিপালন করেন না। প্রতি ওয়াক্তের এবং জুমার নামাজের আজানের আগে-পরেও মুসুল্লীদের মাস্ক নিয়ে মসজিদে আহ্বান করেন না মুয়াজ্জিনরা। জুমার নামাজের আগে বয়ানে নানা ইসলামিক আলোচনা হলেও করোনা সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনার ধারেকাছ দিয়েও যান না ইমাম-খতিবরা। মাস্ক বিহীন মসজিদে প্রবেশ না করার নির্দেশনাটিও মাইকে এক বারের জন্য প্রচার করেন না তারা। 

নগরীর অন্যতম ভিআইপি এলাকা হিসেবে পরিচিত পুলিশ লাইন রোডের এন. হোসেন কমপ্লেক্সের বাসিন্দা তৈয়বুর রহমান গতকাল জুমার নামাজ আদায় করেন সেখানকার আহ্লে হাদিস জামে মসজিদে। তৈয়বুর রহমান বলেন, জুমার আজানের পর থেকে নামাজ শুরুর আগ পর্যন্ত মসজিদের মাইকে মাস্ক পড়ে মুসুল্লীদের নামাজে অংশগ্রহণের কোন আহ্বান মসজিদ থেকে জানানো হয়নি। এমনকি খোৎবার আগের বয়ানেও করোনা সুরক্ষায় কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। মসজিদের মাইকে আজানের পর কয়েকবার মাস্ক নিয়ে জামাতে আসার আহ্বান জানানো হলে অনেক বেশী সংখ্যক মুসুল্লী মাস্ক পড়ে মসজিদে আসবেন বলে মনে করেন তিনি। 

নগরীর সদর রোডের আদালতপাড়া জামে মসজিদে গতকাল জুমার নামাজ আদায় করা শাহিন হাওলাদার বলেন, জুমার নামাজে অংশগ্রহণকারী অন্তত ৭০ ভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেননি। ইমাম-খতিবরাও মাস্ক ব্যবহারে মুসুল্লীদের উদ্বুদ্ধকরণের কোন বক্তব্য দেননি। 

নগরীর খান সড়ক জামে মসজিদে গতকাল জুমার নামাজ আদায় করা মুসুল্লী মো. খোকন বলেন, করোনার প্রকোপকালীন সময় থেকে অনেক মুসুল্লী মসজিদে শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নানা পরামর্শ দিয়েছেন। ইমাম-খতিবরা একবার দুইবার নামমাত্র করোনা সুরক্ষার কথা বলার পর আর সেগুলো মুখে উচ্চারণও করেন না। গতকাল জুমার নামাজের খোৎবার আগে করোনা সুরক্ষায় কোন সচেতনামূলক বয়ান দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
মহানগর ইমাম সমিতির উপদেষ্টা নগরীর চকবাজার জামে এবাদুল্লাহ মসজিদের খতিব মাওলানা নুরুর রহমান বেগ বলেন, করোনা সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ইমাম সমিতির সকল সদস্যকে বলা হয়েছে। তারা জুমা এবং অন্যান্য জামাতে সবাইকে মাস্ক পড়তে বলেন। কিন্তু কিছু মুসুল্লী তাদের কথা শুনতে চায় না। 
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুর রহমান খান বলেন, করোনার শুরু থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনদের প্রতি ওয়াক্তের নামাজে এবং বিশেষ করে জুমার নামাজের খোৎবার আগে করোনা সচেতনতায় বয়ান দেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে। সংক্রামণ কমে যাওয়ায় শুধু মসজিদে নয়, সর্বত্র একটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। করোনা সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান আরও বেগবান করবে বলে তিনি জানান। 
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. রেজোয়ানুল আলম রায়হান বলেন, আমেরিকায় করোনা তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ঢিলেঢালাভাবে চলাফেরার খেসারত শিঘ্রই বাংলাদেশের মানুষকে দিতে হবে। মাস্ক ব্যবহারে অনীহা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারনে করোনা সংক্রামন আবারও বেড়ে যাবে। এভাবে ঢিলেঢালভাব চলতে থাকলে আগামী মার্চের পর করোনার তৃতীয় ঢেউ সব আগের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশংকা করেন তিনি।