বরিশালে মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা
বরিশালে করোনা দুর্যোগে ঈদ বাজার না খুলতে আহ্বান জানিয়েছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। গত ৯ মে শনিবার রাত ১২টায় বরিশালের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঈদ বাজার না খুলতে আহ্বান জানান তিনি। ব্যবসায়ী নেতারা মেয়রের আহ্বানে ঈদ বাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। গতকাল অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরের ঈদ বাজারের মানুষের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। নগরের চকবাজার, কাটপট্টি রোড, হেমায়েত উদ্দিন সড়ক, বাজার রোডের অধিকাংশ দোকান খোলা ছিল।
তবে বরিশাল নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চকবাজারের বড় বড় এবং স্বনামখ্যাত দোকানগুলো বন্ধ থাকলেও অন্যান্য সব দোকানের এক শাটার খুলে আবার কখনও দুই শাটার ফেলে ভেতরে চলছে ঈদের বেচাকেনা। এদিকে নগরীর সদর রোড, গীর্জা মহল্লা, বটতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকান খোলা রাখা হলেও চকবাজার-লাইনরোড-কাঠপট্টি-পদ্মাবতি এলাকার দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ায় চাপে রয়েছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালেও বরিশাল নগরীর চকবাজার, গীর্জামহল্লা, বাজার রোড এবং কাঠপট্টি এলাকায় ঈদবাজার কেন্দ্রিক প্রচুর সংখ্যক মানুষ দেখা গেছে। এসব দোকানে শারীরিক দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।
সরকার গত ১০ তারিখ থেকে ঈদবাজার আংশিক খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ওই ঘোষণার পর গত ৯ মে গভীর রাতে বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর বাস ভবনে বরিশালের ব্যবসায়ী নেতাদের ডেকে বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা করোনার ঝুঁকির মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার পর একদিন দোকানপাট কিছুটা বন্ধ থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার অধিকাংশ দোকান খুলে বসেন ব্যবসায়ীরা। মানুষের ভীড় সামাল দিতে না পারলেও পুলিশ চক বাজারের দুই দিকে প্রতিবন্ধকতকতা সৃষ্টি করে কেবল রিকসা গাড়ি আটকে দেয়।
ব্যবসায়ী নেতা আবদুর রহিম বলেছিলেন, ১০ মে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও মেয়রের আহ্বানে ব্যবসায়ীরা ঈদ বাজারের সব দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যতোদিন করোনার প্রাদুর্ভাব থাকবে ততোদিন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখারও ঘোষাণা দেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, কোনভাবেই ঈদে মহানগরের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে না। যতোদিন পযৃন্ত করোনার প্রাদুর্ভাব না কমবে ততোদিন আমরা সহযোগী হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবো।
ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আগে মানুষ বাঁচতে হবে। তার পর ঈদ। এক বছর ঈদে নতুন পোশাক না পড়লে এমন কোন ক্ষতি হবে না। বরং এই মুহূর্তে অসহায় ও কর্মহীনদের পাশে নতুন পোশাক কেনার অর্থ বরাদ্দ করলে তারা উপকৃত হবেন। আমরা সবাই মিলে করোনার এই দুর্যোগ মোকাবেলা শেষে সুন্দর পরিবেশে আগামী ঈদ করতে চাই। এই জন্য এবছরের ঈদকে প্রধান্য না দেওয়ার আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে তিনি সকলকে বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, করোনা বর্তমানে একটি বৈশি^ক সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার। এবছর করোনা মহামারীর কথা চিন্তা করে ঈদ বাজার না খুলতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানানো হয়। ব্যবসায়ীরা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তার মধ্যেও কিছু কিছু দোকানপাট খুলেছে শুনেছি।
নগরীর চক বাজারের ব্যবসায়ী মো. মাছুম বলেন, ব্যবসায়ী সমিতির সিদ্ধান্তে চকবাজার-কাঠপট্টি-পদ্মাবতীর দোকান বন্ধ থাকলেও অন্যান্য এলাকার দোকান খোলা। পাশই গীর্জা মহল্লা এবং বটতলা এলাকায় শারীরিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে দেদারচে বেচাকেনা চলছে। শুধু চকবাজার বন্ধ রাখলে তো করোনা সংক্রমণ রোধ হবে না।