বরিশালে রঙিন সাজে সাতলার শাপলার বিল

বরিশালের সাতলার শাপলার বিলে অপরূপ সেজেছে প্রকৃতি। যতদূর চোখ যায়- রক্তিম হাতছানি। বিলের পানিতে মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে রঙিন শাপলা। মাঝে মাঝে দেখা যায় সাদা আর বেগুনী রংএর শাপলাও। বর্র্ষার এই সময়ে পর্যটকদের ভীড় হয় বিলে। শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকদের উপচেপরা ভীড় থাকে পুরো এলাকা জুড়ে। ভ্রমণ পিপাষুরা পরিবার-বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে বিলে নৌকায় বেড়িয়ে আনন্দ করেন। পর্যটকদের ভীড়ে শাপলার মৌসুমে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা হয়ে ওঠে।
বরিশাল বিভাগীয় সদর থেকে সড়ক পথে উজিরপুরের শাপলার বিলের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। কালভিলা, মুড়িবাড়ি, জনতা বাজার এবং পূর্ব সাতলার বিস্তীর্ণ ৪টি বিলে বর্ষার শুরুতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় অসংখ্য শাপলা। আগাছায়ও ভরে থাকে বিল। শ্রাবনের শেষের দিকে শাপলায় ফুল ফুটতে শুরু করে। শাপলা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ৩ মাস পর্যটকদের ঢল নামে বিলে। শাপলা সাধারণত ফোঁটে রাতের বেলা। সূর্য প্রখর হওয়ার পর আস্তে আস্তে ফুটন্ত শাপলারা নিস্তেজ হয়ে যায়। তাই ফুটন্ত শাপলা দেখার সাক্ষী হতে পর্যটকরাও রাতের আঁধার কাটার আগেই পৌঁছেন যান শাপলা বিলে। বিশেষ করে সরকারি বন্ধ কিংবা বিশেষ কোন উৎসবে ভীড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সৌন্দর্য পিপাসুরা শাপলার বিলকে দিয়েছেন সেরা পর্যটন কেন্দ্রের মর্যদা। নৌকায় বিলের পানিতে ভেসে শাপলা ফুলের সঙ্গে মিতালী করেন সবাই। মিলে মিশে যান প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য।
তবে কার্তিক মাসের শেষে দিকে বিলে পানি থাকতে থাকতেই শাপলাসহ যাবতীয় আগাছা পরিস্কার করেন স্থানীয় কৃষকরা। অগ্রাহায়ণে শুকিয়ে যায় পুরো বিল। আবার নতুন পানির অপেক্ষায় থাকে শাপলা বিল। নতুন পানি পেয়ে আবারো নতুন নতুন শাপলায় ভরে ওঠে বিল।
উজিরপুরের শাপলার বিলকে দক্ষিণাঞ্চলের সেরা রোমাঞ্চকর পর্যটন কেন্দ্র বলে দাবি তুলেছেন পর্যটকরা। সৌন্দর্যের লিলাভূমি এই সাতলার বিলের মত দক্ষিণাঞ্চলে ভ্রমণ করার মত এরকম স্থান নেই বলে মনে করেন কেউ কেউ। তবে এখানে আগত দর্শনার্থীদের অভিযোগ রয়েছে অনেক। বিলে বেড়াতে যাওয়া দর্শনাথীদের জন্য নেই কোন রেস্ট হাউজ কিংবা সৌচাগার। এতে বিপাকে পড়তে হয় পর্যটকদের। এখানকার নৌকা গুলোতে ভ্রমণে অর্থ আদায়ে নেই নির্দিষ্ট টাকার পরিমান। যার কাছ থেকে যেভাবে পারে অতিরিক্ত হারে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে শাপলা দেখতে আশা দর্শনার্থীরা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছে শাপলা বিলে যাবার পথের ভোগান্তির কথা। খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারণে শাপলার বিলে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় দর্শনার্থীদের। বরিশাল নগরী থেকে মহাসড়ক ধরে উজিরপুর সদর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার যাওয়ার পর বাকী প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কের বেশীরভাগই খানাখন্দে ভরা।
উজিরপুরের এই শাপলার বিলগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনায় বর্ষার ৩ মাস চাঙা থাকে স্থানীয় অর্থনীতি। এই সময়টাতে এখানকার মানুষদের তেমন কোন কাজ না থাকায় নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের ঘুড়িয়ে উপার্জন করে তাদের সংসার চলে।