এক বছর ধরে বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের গুঞ্জন

এক বছর ধরে বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের গুঞ্জন

এক বছর ধরে গুঞ্জন মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি হবে। পাল্টানো হবে শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু কমিটি হচ্ছে না। আর এই সুযোগে গত এক যুগ ধরে দলে নিস্ক্রীয়, দুর্নীতি মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত এবং জনবিচ্ছিন্ন কিছু নেতা লন্ডনে লবিং তদবির করছেন মহানগর বিএনপির শীর্ষ দুই পদ পেতে। লন্ডনে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে তারা মহানগর বিএনপির পদ বাগানোর চেষ্টা করছেন। এদিকে দলে নিস্ক্রীয় ও দুর্নীতি মামলায় দন্ডিতদের মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব দেখতে চান না তৃনমূল নেতাকর্মীরা। তারা দলের জন্য ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ ও কর্মীবান্ধব নেতাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

২০১৩ ও ২০১৪ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ারের ভূমিকায় নখোশ লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তখন থেকেই মহানগর বিএনপি থেকে সরোয়ারকে মাইনাসের গুঞ্জন ছিলো। দলের অভ্যন্তরীণ নানামুখি সংকটের কারণে সেই উদ্যোগ থমকে যায়। সব শেষ গত বছরের শেষ দিকে মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখন সরোয়ারের বিকল্প হিসেবে গত এক যুগ বিএনপির আন্দোলনসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে নিস্প্রভ সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের নাম উচ্চারিত হয় জোড়ালোভাবে। এ অবস্থায় একটি দুর্নীতি মামলায় গত বছরের ৯ নভেম্বর কামালের ৭ বছর কারাদন্ড হলে আবারও থমকে যায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। প্রায় ১০ মাস পর গত ৬ সেপ্টেম্বর কামাল জামিনে মুক্তি পেলে আবার আলোচনায় আসে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। 

সরোয়ারকে সরিয়ে কামালকে মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদ দেয়ার গুঞ্জন আছে সর্বত্র। কিন্তু বয়স এবং নানা রোগে আক্রান্ত কামালকে অনেকে ‘প্রতিবন্ধী’ বলেও উপহাস করেন। শারীরিক অসুস্থ ও দলে নিস্ক্রীয় কামালকে মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদে দেখতে অনীহা মাঠের নেতাকর্মীরা। সে ক্ষেত্রে মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। মতের বিরোধীতা থাকলেও বরিশালে সরোয়ারের বিকল্প তৈরি হয়নি বলে অকপটে স্বীকার করেন অনেক নেতা। লন্ডনের বিবেচনায় ফের সরোয়ার কিংবা শিরিণ নেতৃত্ব না পেলে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুলও শীর্ষ পদের আলোচনায় আছেন। বর্তমান সহসভাপতি জাতীয় পার্টি থেকে আগত মনিরুজ্জামান ফারুকও শীর্ষ পদের প্রার্থী। 

এদিকে মহানগর বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আলোচনার শীর্ষে আছেন গত এক যুগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ৫২টি মামলার আসামী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া। তবে সরোয়ার অনুসারী হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অপছন্দে কপাল পুড়তে পারে জিয়ার। যদিও মহানগরে দলের সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে জিয়া অদ্বিতীয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আরও আলোচনায় আছেন বিগত আন্দোলন সংগ্রাম এবং দলের কর্মসূচি এড়িয়ে চলা মহানগর বিএনপির বর্তমান সহসভাপতি মহসিন মন্টু। যিনি আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচিত জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান অতিরিক্ত পিপি মজিবর রহমানের ভাই। এছাড়া মহানগর যুবদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান শামীমও আছেন দ্বিতীয় শীর্ষ পদের আলোচনায়। তবে ছাত্রদল নেতা কালু ও মিরাজ গুম হওয়ার পেছনে শামীমের হাত আছে বলে কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা। 

মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের বিষয়ে বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীদের পালর্স বুঝে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সম্ভাব্য নেতাদের একটি তালিকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা যখন উপযুক্ত মনে করবেন তখন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেবেন। মিন্টু আরও বলেন, কাউকে বাদ দেয়া বা কাউকে পদে বসানো নতুন কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে নয়। বিগত দিনে দলের প্রতি ত্যাগ, নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা ও নেতৃত্বগুণ এবং আগামী দিনে আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচনে যারা দলের হয়ে ভূমিকা রাখতে পারবেন তাদের হাতেই তুলে দেয়া হবে মহানগর বিএনপির দায়িত্ব। 

মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি এবং কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপির ৩ বছর মেয়াদী সব শেষ ১৭১ সদস্যের কমিটি অনুমোদন হয় ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর। ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর শাহিনের মৃত্যুর পর থেকে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।