বরিশালে রোগী মৃত্যুঃ স্বজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা, ধর্মঘট

সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কলেজ ছাত্রর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে রোগীর স্বজন, বন্ধু ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার অভিযোগ উঠেছে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত অবস্থায় ওই কলেজ ছাত্রকে হাসপাতালে নেয়ার পরও যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়নি, আর চিকিৎসায় গাফিলতির কারনেই তার মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকেচিকিৎসকরা বলছেন,দুর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত যুবকের প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত লেগেছে আহত ব্যক্তির।হাসপাতালে ভর্তির সময়ই তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিলো, তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি আহত ব্যক্তিকে। বিষয়টি নিয়ে স্বজনদের সাথে তারাও যখন মর্মাহত তখন একদল দুর্বৃত্ত চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়।
আজ শনিবার (১১ জুন) বিকালে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চতুর্থ তলার সার্জারী ১ ইউনিটে এ ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে উক্ত ঘটনা কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসক দের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনিক ভাবে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাত ৯ টার দিকে মেডিকেলে জরুরি বিভাগের গেট আটকে ধর্মঘট শুরু করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে,সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ(১৮)বরিশাল ইসলামিয়া কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র ও ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়ার মহিষকান্দি এলাকার আনছার আলীর ছেলে।সে তার অপর দুই বন্ধু বরিশাল নগরের মহাবাজ এলাকার বাসিন্দা হৃদয় (১৭)ও সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর এলাকার বাসিন্দা ওসমান গনি (১৮) কে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ইসলামিয়া কলেজ থেকে তালতলীর দিকে যাচ্ছিলো।
পথিমধ্যে মহাবাজ এলাকায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুত্বর আহত তিন বন্ধুকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে। ভর্তির কিছুক্ষন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিয়াদের মৃত্যু হয়, আর বাকি দুজন এখনও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রিয়াদের স্বজন মাসুদ ও তনু বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা একজন একজন করে চিকিৎসা দিচ্ছিলো। আমরা বারবার বলছিলাম রিয়াদের অবস্থা বেশি খারাপ, কিন্তু তারা সেই কথা শোনেনি। যথাযথ সময়ে চিকিৎসা না দেওয়ায় রিয়াদ মারা যায়। রিয়াদের মৃত্যুর পর ওর সাথে আসা বন্ধুরা ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে এবং ওইসময় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়। এর কিছুক্ষণ পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসে কান্নারত রোগীর স্বজনদের উপর হামলা চালায় এবং মারধর করে।
তবে সার্জারি ইউনিটে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্নব খান বলেন, রোগির মৃত্যুর পর কলেজ ইউনিফর্ম পড়া এবং ব্যতিত কিছু যুবক হঠাৎ করেই চিকিৎসকদের ওপর হামলে পড়ে। এসময় তারা ডিউটি ডক্টরদের রুমে ভাংচুর চালায়। পাশাপাশি ওই কক্ষে থাকা দুই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং বাকী ডাক্তারদের মারধর করে।
তিনি বলেন, ওইসময় আমাদের মার খাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলো না,পাশাপাশি মারধর করে চলে যাওয়ার সময় ওই যুবকরা প্রকাশ্যে আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এতে আমরা পুরোপুরি আতঙ্কিত হয়ে পরি।
হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা: রাকিন বলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে ওই রোগীকে বাঁচানোর জন্য। তারপরও এসে মৃতের স্বজন ও বন্ধুরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। তারা হুমকি দিয়েছে আমাদের। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যাবো।
হাসপাতাল পরিচালক ডা: এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত তিনজন মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে যে মারা গেছে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিলো। তাকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়নি, কিন্তু সে আর নেই। এটা আমাদের কাছেও বেদনার। কিন্তু তাই বলে যারা তাদের চিকিৎসা দিয়েছে তাদের ওপর রোগীর স্বজনদের এমন আচরন কাম্য নয়।থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, কিশোরের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। হাসপাতাল কতৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনায় রিয়াদের সহপাঠি শাওন ও আনোয়ারকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। শাওন উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকার মো: কবিরের ছেলে এবং আনোয়ার নিউ ভাটিখানা এলাকার ইউনুস হাওলাদারের ছেলে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মেডিকেলে জরুরি বিভাগের গেট আটকে ধর্মঘট পালন করছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানায় যতক্ষণ অবদি হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে ততক্ষণে এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।