বরিশালে সেইন্ট বাংলাদেশ এর শিক্ষা সংলাপ

বরিশালে সেইন্ট বাংলাদেশ এর শিক্ষা সংলাপ

বরিশালে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সেইন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত শিক্ষা সংলাপে বক্তারা বলেছেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্র, পেশাজীবী, নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা নিয়ে বৈষম্য প্রকট। মানসম্মত শিক্ষার জন্য নিরাপদ একিভূত শিখন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষক নির্বাচন করতে হবে। এসব বৈষম্য দূর করতে কার্যকর উদ্যোগের সঙ্গে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে।

সেইন্ট বাংলাদেশ এর বাস্তবায়নে ও গণসাক্ষরতা অভিযানের আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায় সমন্বিত শিক্ষা পরিকল্পনার অধীন শিক্ষা সংলাপ (পর্ব-১০) অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নগরীর সি অ্যা- বি সড়কের সেইন্ট বাংলাদেশ-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-২ সম্মেলন কক্ষে ওই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সোহেল মারুফ। 

সংলাপে বক্তারা বলেন, আমাদের প্রথমিক শিক্ষায় ১১ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেকটা দায়ী। কিল্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিয়িাম, ভার্সনসহ নানা পদ্ধতি। অনেক প্রতিষ্ঠানেই মানসম্মত শিক্ষক নেই। সেজন্য আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার পূর্ব শর্ত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি। সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে অবশ্যই মানসম্মত শিক্ষক নির্বাচন করতে হবে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অনুপাত ঠিক করতে হবে। শিক্ষকরা যাতে নিবিড়ভাবে পাঠদান করাতে পারেন সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধায় সমন্বয় ঘটাতে হবে। যে শিশু পরিবারের জন্য শ্রম দেয় তাকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে না পারলে সাক্ষরতায় আনা সম্ভব হবে না। যতক্ষণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা না আসবে ততক্ষণ এর সমাধন আাসবে না। আমাদের মেয়েদের সবার আগে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে বাল্য বিবাহের রুট খুঁজে বের করতে হবে।

বক্তারা বলেন, আমাদের সবাইকে নিয়ে আমাদের সামনে যেতে হবে। সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। একমুখি বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। মানসম্মত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও কারিগরি, বৃত্তিমূলক  ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান, জেন্ডার বৈষম্য দূর করা, মানবাধিকার শিক্ষা, নিরাপদ ও একীভূত শিক্ষণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

সবার আগে শিশু এই নীতিকে সামনে রেখে নগর ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বিপর্য সৃষ্টি হয়েছে, সেই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। গত ১৭ মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া বিপুল সংখ্যক নারী শিশু বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে। তাদের জীবনমান নিশ্চিত করাও চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বাল্য বিবাহের এই প্রবণতা ঠেকাতে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা খুবই কঠিন হবে। এছাড়া অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর না দেলও সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হবে।

উন্নয়ন সংস্থা সেইন্ট বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদার।

শিক্ষা সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ইএসপি ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ন্যাশনাল টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সদস্য ড. জিয়া উজ্ সবুর। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আবদুর রউফ।

শিক্ষা সংলাপে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক (বীরপ্রতীক), সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা, ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক আল আমিন সারোয়ার, সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি ও দৈনিক ভোরের আলোর সম্পাদক সাইফুর রহমান মিরণ।
সেইন্ট বাংলাদেশ এর চীফ কো-অর্ডিনেটর আহসান মুরাদ চৌধুরী এর সঞ্চালনায় সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন, শিশু সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কহিনুর বেগম, শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি সফিকুল ইসলাম, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের কো অর্ডিনেটর নাসির উদ্দীনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহাকরী শিক্ষক, উন্নয়নকর্মীরা।